প্রাগে নতুনের পদধ্বনি

চেক রিপাবলিকের রাজধানী প্রাগ। প্রাগের জোফিন প্রাসাদে ঝলমল করে উঠল আলো, বাজনা উঠল বেজে, শুরু হয়ে গেল বাটা ফ্যাশন উইকেন্ড ২০১৯। সমবেত নৃত্যে যেন লেওনার্দো দা ভিঞ্চির ভিটরুভিয়ান মানুষের বিস্তার ফুটে উঠল। তারপর ক্যাটওয়াকে মোহময়তার ঝলকানি। বাটার নানা ধরনের নানা রকমের জুতো পরে হাঁটলেন বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন বয়সের বিভিন্ন সংস্কৃতির মডেলরা। ছিলেন বয়োবৃদ্ধা, ছিলেন তরতাজা যুবক, হালফ্যাশনের তরুণী আর কিশোর-কিশোরীরা। সংগীত আর কোরিওগ্রাফিতে আবারও ফুটিয়ে তোলা হলো মিকেলাঞ্জলোর সেই মানব-মানবীর পরস্পরের আঙুল ধরার আকুলতা।

কিন্তু ইলিশের কথাও এল ফ্যাশন শোর আঙিনায়। কথা হচ্ছিল বাটার দক্ষিণ এশিয়ার প্রেসিডেন্ট রাজীব গোপালকৃষ্ণানের সঙ্গে। তিনি ২০১০ সালে বাংলাদেশ বাটার এমডি ছিলেন বছরখানেক। বাংলাদেশের কথা মনে পড়ে? বললেন, ‘আহা! ইলিশ মাছ।’ রাজীব খুবই গৌরবান্বিত, বললেন, ‌এশিয়ার সর্ববৃহৎ বাটা স্টোর কিন্তু বাংলাদেশে, বসুন্ধরা মলে। এটা পৃথিবীর মধ্যে দ্বিতীয় বৃহত্তম।

বাটার ফ্যাশন উইকেন্ডের এটা তৃতীয় আসর। প্রথমবার হয়েছে প্রাগে, গত বছর মিলানে, এবার আবার প্রাগে। এ বছর বাটার ১২৫ বছরপূর্তিও হচ্ছে। সে জন্যই বাটার জন্মভূমিতে ফিরে এসেছে এই আসর। ১৮৯৪ সালে টমাস বাটা জুতা বানানো শুরু করেন টি অ্যান্ড এ বাটা শু কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করে। ভারতীয় উপমহাদেশে বাটা যাত্রা শুরু করে ১৯৩১ সালে। বাংলাদেশে বাটার পথচলা ১৯৬২ থেকে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে বাটার নাম জড়িয়ে আছে গৌরবের সঙ্গে। বাটার তখনকার নির্বাহী পরিচালক এ এস উডারল্যান্ড একমাত্র বিদেশি, যিনি পেয়েছেন বীর প্রতীক খেতাব। তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্য করতেন, সাবেক সৈনিক হিসেবে তাঁদের প্রশিক্ষণ দিতেন।

রাজীব গোপালকৃষ্ণানকে জিজ্ঞেস করি, কেন এই ফ্যাশনের আসর বসছে? যেখানে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সাংবাদিক, তারকা, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের লেখকদের মিলনমেলা বসছে?

রাজীব বললেন, বাটা এখন জোর দিচ্ছে স্টাইল, আরাম আর নবসৃজনের দিকে। বাটাকে যেন লোকে শুধু ঐতিহ্যের ব্র্যান্ড হিসেবে না দেখে, দেখে ভবিষ্যতের ব্র্যান্ড হিসেবে।

১২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে চেক রিপাবলিকের রাজধানী প্রাগের জোফিন প্রাসাদে গতকাল শুরু হয়েছে বাটা ফ্যাশন উইকেন্ড ২০১৯।  ছবি: প্রথম আলো
১২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে চেক রিপাবলিকের রাজধানী প্রাগের জোফিন প্রাসাদে গতকাল শুরু হয়েছে বাটা ফ্যাশন উইকেন্ড ২০১৯। ছবি: প্রথম আলো

বাটার ১২৫ বছরের যাত্রার প্রদর্শনী দেখতে দেখতে ভাবছি, তাই তো, আমাদের ছোটবেলার ব্র্যান্ডটার সঙ্গে তো এখনো আমরা আছি, সে তো তারা নিজেদের বদলাতে পেরেছে বলেই। ইতালির সাংবাদিক গাব্রিয়েলা লোম্বার্ডো, মালয়েশিয়ার তারকা আমিরা রোসলি কিংবা মুম্বাইয়ের ট্র্যাভেল ব্লগার মেঘনা কাউর—সবাই বলছেন নিজ নিজ দেশে বাটার বিপুল বিক্রমের কথা। বাটা একসময় স্লোগান নিয়েছিল, শু দ্য ওয়ার্ল্ড। আসলেই তো, ১২৫ বছর ধরে বাটা সারা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে কত কোটি মানুষের পায়ে পায়ে এগিয়ে চলেছে এক নম্বর জুতার ব্র্যান্ড হিসেবে, সেকি চাট্টিখানি কথা!