পুরস্কারঘোষিত আটজনকে খুঁজেই পায়নি পুলিশ

ভিডিও ফুটেজ দেখে এ আটজনকে বর্ষবরণে নারী লাঞ্ছনাকারী হিসেবে শনাক্ত করে পুলিশ। ছবিটি পুলিশের পক্ষ থেকে সরবরাহ করা।
ভিডিও ফুটেজ দেখে এ আটজনকে বর্ষবরণে নারী লাঞ্ছনাকারী হিসেবে শনাক্ত করে পুলিশ। ছবিটি পুলিশের পক্ষ থেকে সরবরাহ করা।
>

• ১৪ এপ্রিল নারী লাঞ্ছনার ঘটনার চার বছর
• ডিবি প্রথমে মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়
• পরে পিবিআই একজনকে অভিযুক্ত করে
• একজনের বিরুদ্ধে বিচার শুরু হয়েছে

পয়লা বৈশাখে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির কাছে নারী লাঞ্ছনায় জড়িতদের পুলিশ চার বছরেও খুঁজে পায়নি। ২০১৫ সালের মে মাসে ক্লোজড সার্কিট টিভি ক্যামেরা (সিসি ক্যামেরা) দেখে নারী লাঞ্ছনার ঘটনায় জড়িত আটজনকে চিহ্নিত করে তাদের ধরিয়ে দিতে লাখ টাকা করে পুরস্কার ঘোষণা করেছিল পুলিশ। আজ ১৪ এপ্রিল এ ঘটনার চার বছর পূর্ণ হচ্ছে।

তবে পুলিশ জানিয়েছে, এই আটজনকে না পেলেও ভিডিও ফুটেজ দেখে নারী লাঞ্ছনায় জড়িত মো. কামালকে (৩৫) গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁর বিরুদ্ধে বিচার শুরু হয়েছে। তিনি জামিনে আছেন।

কামালের পরিবার দাবি করেছে, পুলিশের ভিডিও ফুটেজে কামালকে ঘোরাঘুরি করতে দেখা গেলেও তিনি নারী লাঞ্ছনা করেছেন, এমন প্রমাণ নেই।

মামলার তদন্তসংশ্লিষ্ট পিবিআই (পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন) সূত্র বলেছে, ২০১৫ সালের পয়লা বৈশাখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি-সংলগ্ন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ফটকে নারী লাঞ্ছনার ঘটনা গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। বিষয়টি সিসিটিভি ক্যামেরায় ধরা পড়ে। এরপর পুলিশের পক্ষ থেকে শাহবাগ থানায় মামলা করা হয়। পুলিশের পক্ষ থেকে এ ঘটনায় জড়িত আটজনের ছবি প্রকাশ করে তাদের ধরিয়ে দিতে এক লাখ টাকা করে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়।

প্রথমে এই মামলা তদন্তের দায়িত্ব পায় ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)। কিন্তু পুলিশ কাউকে অভিযুক্ত না করে ২০১৫ সালের ২২ ডিসেম্বর আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করে। তখন অভিযোগ ওঠে, ডিবি আন্তরিকভাবে তদন্ত না করে মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়েছে।

এর এক মাস পর ডিবি ২০১৬ সালের ২৭ জানুয়ারি পুরান ঢাকার খাঁজে দেওয়ান লেনের নিজ বাসার সামনে থেকে সন্দেহভাজন হিসেবে মো. কামালকে গ্রেপ্তার করে। কামালকে গ্রেপ্তারের পর মামলাটি পুনরুজ্জীবিত হয়। ২০১৬ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি আদালত মামলাটি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দেন।

পিবিআইয়ে কর্মরত উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মো. মাইনুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, তদন্ত শেষে পিবিআই কামালের বিরুদ্ধে নারী লাঞ্ছনায় জড়িত থাকার সম্পৃক্ততা পায়। তবে সিসিটিভি ফুটেজে নারী লাঞ্ছনায় চিহ্নিত অন্যদের খুঁজে পাওয়া যায়নি।

পিবিআইয়ের একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে নারী লাঞ্ছনায় জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেন কামাল।

পুলিশের ভিডিও ফুটেজে ২০১৫ সালের পয়লা বৈশাখের দিন সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা থেকে সাতটা সাত মিনিট পর্যন্ত সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ফটকের সামনে ধাক্কাধাক্কি, হাতাহাতি ও নারী লাঞ্ছনার ছবি দেখা গেলেও কামালকে দেখা যায়নি। তবে ধাক্কাধাক্কির আগে ও পরে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ফটকের সামনে তাঁকে ঘোরাঘুরি করতে দেখা গেছে।

কামালের বড় ভাই মো. বাদল প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রথম দিন থেকে আমরা বলে আসছি, কামাল নারী লাঞ্ছনায় জড়িত নয়। তাকে দিয়ে নারী লাঞ্ছিত হয়েছে, এমন কোনো ছবি পুলিশের কাছেও নেই।’

মামলার আগের তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবির পরিদর্শক দীপক কুমার দাস প্রথম আলোকে বলেন, কামাল এ নিয়ে আদালতে কোনো জবানবন্দি দেননি। আবার পুলিশের কাছে তিনি ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকারও করেননি।

কামালের স্ত্রী সাহিদা বেগম দাবি করেন, কামাল তাঁকে ও তাঁর দুই শিশুসন্তানকে নিয়ে প্রতিবছরের মতো ওই দিন বর্ষবরণ উৎসবে গিয়েছিলেন। কামালের কোলে তাঁদের এক বছর বয়সী সন্তান ছিল। হঠাৎ প্রচণ্ড ভিড়ে ধাক্কাধাক্কি হলে কামালের কোল থেকে সন্তানকে তিনি (তাঁর স্ত্রী) কোলে নেন। আরেক সন্তানের হাত ধরে তিনি (কামালের স্ত্রী) ভিড় থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করেন। এ সময় কামাল তাঁদের কাছ থেকে হারিয়ে যান। কিছুক্ষণ পর ভিড়ের মধ্যে কামালকে খুঁজে পান। তিনি বলেন, এ সময় কামাল একা ছিলেন। হয়তো এই সময়ের ছবি সিসিটিভি ক্যামেরায় ধরা পড়েছে। এই সময় তিনি কোনো নারীকে লাঞ্ছনা করতে পারেন না বলে তিনি দাবি করেন।