এক গাভি দিয়ে শুরু, এখন ১১টি গরু নিয়ে খামার

নিজ খামারে গরু থেকে দুধ সংগ্রহ করছেন খামারি মোহাম্মদ আলী (৫৪)। সম্প্রতি দীঘিনালার পাবলাখালীর মিলনপুর গ্রামে।  প্রথম আলো
নিজ খামারে গরু থেকে দুধ সংগ্রহ করছেন খামারি মোহাম্মদ আলী (৫৪)। সম্প্রতি দীঘিনালার পাবলাখালীর মিলনপুর গ্রামে। প্রথম আলো

চার বছর আগে মাত্র ৬৪ হাজার টাকা দিয়ে শুরু। কিনেছিলেন একটি বিদেশি গাভি। শুরু হয় দুধ বিক্রি। সঙ্গে গাভির প্রজনন। কঠোর পরিশ্রমে এখন গড়ে তুলেছেন গরুর খামার।

এই সাফল্য খাগড়াছড়ির দীঘিনালার পাবলাখালী মিলনপুর গ্রামের মোহাম্মদ আলী (৫৪) ও তাঁর স্ত্রী অজুফা বিবির (৪৫)। খামারে এখন আছে ১১টি গরু। এর আগে পাঁচটি গরু বিক্রিও করেছেন। খামারে থাকা গরুর মধ্যে তিনটি দুধ দেয় প্রতিদিন ২৭ কেজি। প্রতিদিন দুধ বিক্রি করেন ১ হাজার ৪৮৫ টাকা।

উপজেলা সদর থেকে দুই কিলোমিটার দূরে পাবলাখালী মিলনপুর গ্রাম। এই গ্রামেই স্বামী-স্ত্রীর এই খামার। ৫ এপ্রিল খামারে গিয়ে দেখা যায়, গরুর জন্য খড় নিয়ে খামারে ঢুকছেন স্বামী-স্ত্রী দুজনে। পরম মমতায় গরুকে খড় খাওয়াচ্ছেন।

এ সময় কথা হয় মোহাম্মদ আলীর সঙ্গে। তিনি বলেন, ২৫ বছর ধরে বিভিন্ন দোকান ঘুরে ঘুরে কমিশনে বেকারির পণ্য বিক্রি করেছেন, যা আয় হতো তা দিয়ে কোনো রকমে সংসার চলত। এরপরও কিছু টাকা সঞ্চয়ের চেষ্টার করতেন। এভাবে সঞ্চয়ের ৬৪ হাজার টাকা দিয়ে চার বছর আগে একটি বিদেশি গাভি কেনেন।

মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘আমার মূল পুঁজি ছিল ৬৪ হাজার টাকার গাভিটি। সেই একটি গরু থেকে প্রথমে প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের মাধ্যমে প্রজনন করেছি। পরবর্তী সময়ে জন্ম নেওয়া গরু থেকে প্রজনন করে এ খামার গড়ে তুলেছি। এর মধ্য থেকে ৫টি গরু বিক্রি করেছি ৩ লাখ ৫৬ হাজার টাকায়। খামার গড়ে তোলার পেছনে বেশি অবদান আমার স্ত্রীর। আমি সকালে বের হই রাতে ফিরি। খামারের সব দেখাশোনা আমার স্ত্রীই করে।’

অজুফা বিবি বলেন, ‘আমার চার মেয়ে এক ছেলে। তিন মেয়েকে বিয়ে দিয়েছি। ছোট দুই ছেলেমেয়ে পড়াশোনা করে। গরুগুলোকে আমার নিজ সন্তানের মতোই লালনপালন করি। প্রতিদিন তিনবার খামার পরিষ্কার করি। সংসার সুখ ও স্বাবলম্বী হতে হলে স্বামী–স্ত্রী দুজনকেই পরিশ্রম করতে হবে। নিজের খামার, নিজে কাজ করি কোনো লজ্জা নেই।’

মোহাম্মদ আলী আক্ষেপ করে বলেন, ‘খামারের জন্য আর্থিক জোগান দিতে না পেরে ব্যাংকসহ বিভিন্ন সংস্থায় ঋণের জন্য তদবির করেছি। কিন্তু ঋণ পাইনি। কোনো সংস্থা থেকে ঋণ পেলে খামারটি আরও বড় করতে পারতাম। খামারে জন্ম নেওয়া চারটি বাছুরের মধ্যে দুটি বড় হয়ে গেছে। দুইটি গাভি প্রজননের অপেক্ষায়। গরুগুলো বাচ্চা দিলে খামারে গরুর সংখ্যা আরও বাড়বে। এ ছাড়াও আরও গরু কেনার ইচ্ছা রয়েছে।’

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা জওহর লাল চাকমা বলেন, মোহাম্মদ আলী ও তাঁর স্ত্রী খুবই পরিশ্রমী। তাঁদের খামার দেখে তিনি মুগ্ধ। তিনি নিজেও মোহাম্মদ আলীকে ঋণ সুবিধা নিয়ে দেওয়ার জন্য ব্যাংকসহ কয়েকটি সংস্থায় যোগাযোগ করেছেন। তাঁকে কিভাবে ঋণ সুবিধা দেয়া যায় তা ইউএনও সঙ্গে পরামর্শ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে জানান।