নিজেই রোগে জর্জরিত ফুলগাজী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স

টেকনিশিয়ানের অভাবে অচল পড়ে আছে এক্স-রে যন্ত্র। নেই ডেন্টাল ও ল্যাব টেকনিশিয়ান। যাত্রা শুরুর পর গত ১৭ বছরে হয়নি জটিল অস্ত্রোপচার ও প্রসূতিদের সিজারিয়ান অপারেশন। নয়টি চিকিৎসকের পদ থাকলেও কাগজে-কলমে পাঁচজন কর্মরত আছেন। এর মধ্যে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ থাকায় চারজন চিকিৎসক দিয়েই চলছে চিকিৎসাসেবা। এমন বেহাল দশা ফেনীর ফুলগাজী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের। ৩১ শয্যার হাসপাতালে প্রতিদিন ২০০ রোগী চিকিৎসার জন্য আসে। চিকিৎসা পেতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয় তাদের।

জানা গেছে, ২০০২ সালে ফুলগাজী উপজেলার পুরোনো মুন্সিরহাট বাজারে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি চালু হয়। হাসপাতালের এক্স-রে টেকনিশিয়ান দীর্ঘ ছয় বছর ধরে ঢাকায় একটি হাসপাতালে প্রেষণে কর্মরত। ফলে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সচল এক্স-রে যন্ত্র দুটি বর্তমানে অচল হয়ে পড়ে রয়েছে। দন্ত বিভাগের টেকনিশিয়ানও গত ১২ বছর প্রেষণে ঢাকায় কর্মরত। প্যাথলজি ল্যাব টেকনিশিয়ান পদটি দীর্ঘদিন ধরে শূন্য। এতে রোগীদের অতি প্রয়োজনীয় এক্স-রে ও সাধারণ পরীক্ষাগুলো বাইরে থেকেই অধিক মূল্যে করতে হচ্ছে। এ ছাড়া গত ১৭ বছরেও হাসপাতালে অবেদনবিদ (অ্যানেসথেসিয়া বিশেষজ্ঞ) এবং জরুরি চিকিৎসা কর্মকর্তার (ইএমও) পদ সৃষ্টি করা হয়নি।

 উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ফুলগাজী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নয়জন চিকিৎসকের পদ থাকলেও কাগজে–কলমে পাঁচজন চিকিৎসক রয়েছেন। তবে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা দীর্ঘদিন থেকে অসুস্থ থাকায় হাসপাতালে আসছেন না তিনি। অন্য চারজনের মধ্যে একজন ডেন্টাল সার্জন। তিনি শুধু দাঁতের রোগী দেখে ব্যবস্থাপত্র দেন। একজন গাইনিবিষয়ক জুনিয়র কনসালট্যান্ট ও দুজন চিকিৎসা কর্মকর্তা (এমও) অন্তর্বিভাগ ও বহির্বিভাগের রোগী দেখেন। গাইনি চিকিৎসককে আবার হাসপাতালের প্রশাসনিক কাজকর্মও দেখাশোনা করতে হয়।

হাসপাতালের চিকিৎসকেরা জানান, দীর্ঘদিন থেকে একজন আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও), একজন জুনিয়র কনসালট্যান্ট (মেডিসিন), একজন জুনিয়র কনসালট্যান্ট (সার্জারি) ও একজন চিকিৎসা কর্মকর্তার পদসহ চারটি শূন্য পদ রয়েছে।

অন্যদিকে উপজেলায় তিনটি উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং তিনটি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের (এফডব্লিউসি) প্রতিটিতে একজন করে ছয়জন চিকিৎসা কর্মকর্তার (এমও) পদ থাকলেও বর্তমানে সবগুলো পদই শূন্য রয়েছে। বিভিন্ন ইউনিয়ন পর্যায়ের স্বাস্থ্য–উপকেন্দ্র ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে এমবিবিএস পাস চিকিৎসা কর্মকর্তা (এমও) না থাকায় কমিউনিটি মেডিকেল অফিসাররাই সাধারণ মানুষের চিকিৎসার জন্য ভরসা হয়ে উঠেছেন।

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্র আরও জানায়, অবেদনবিদ ও জরুরি চিকিৎসা কর্মকর্তা না থাকায় অপারেশন থিয়েটার (ওটি) থাকলেও তা অযত্নে পড়ে রয়েছে। সেটা জরুরি প্রসূতি রোগীদের কোনো কাজে আসছে না।

স্থানীয় বাসিন্দা মোরশেদুল হক অভিযোগ করে বলেন, হাসপাতালে রোগীদের এক্স-রে করাতে হয় বাইরে থেকে। দুর্ঘটনায় আহত রোগীদেরও বাইরে নিয়ে যেতে হয় এক্স-রে সুবিধা নেই বলে। এ ছাড়া প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক না থাকায় রোগীদের দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে চিকিৎসা নিতে হয়। অনেক সময় উপসহকারী চিকিৎসা কর্মকর্তার ওপর নির্ভর করতে হয় রোগীদের।

হাসপাতালের গাইনিবিষয়ক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক কামরুন নাহার বলেন, তিনি সাধারণ রোগী দেখার পাশাপাশি হাসপাতালের দাপ্তরিক কাজও করেন। তবে গাইনি বিশেষজ্ঞ হলেও অবেদনবিদ না থাকায় প্রসূতিদের সিজারিয়ান অপারেশনসহ জরুরি চিকিৎসাসেবা দেওয়া যাচ্ছে না।

তিনি জানান, হাসপাতালের বহির্বিভাগে প্রতিদিন গড়ে ২০০ রোগী চিকিৎসা নিতে আসে।

৩১ শয্যার হাসপাতালে গড়ে প্রতিদিন ২৫ জন রোগী ভর্তি থাকে। চিকিৎসক কর্মচারী স্বল্পতার বিষয়টি জেলা সিভিল সার্জনসহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে একাধিকবার লিখিতভাবে অবহিত করা হয়েছে। কিন্তু কোনো সমাধান মেলেনি।

ফেনীর সিভিল সার্জন হাসান শাহরিয়ার কবীর বলেন, ফুলগাজী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক ও কর্মচারী সংকটের বিষয়টি তিনি নিজেও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে লিখিতভাবে জানিয়েছেন।