যথাযথ ভূমিকা নিচ্ছে না পুলিশ: সুলতানা কামাল

সুলতানা কামাল
সুলতানা কামাল

বাংলাদেশের পুলিশ কোনো ঔপনিবেশিক বাহিনী নয়। বাইরের কোনো শাসকের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্য নিয়োজিত বাহিনীও নয়। স্বাধীন বাংলাদেশের সরকার নিয়োজিত এই পুলিশ বাহিনী। ১৯৭১ সালে প্রথম প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল এই পুলিশ বাহিনী। যাদের রয়েছে গৌরবময় ইতিহাস। বলা হয়, পুলিশ জনগণের বন্ধু। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব পুলিশের।

কিন্তু আমরা বারবার দেখতে পাই, তৃণমূলে ঘটা অপরাধের ঘটনায় পুলিশ যথাযথ ভূমিকা নিচ্ছে না। অতীতের অভিজ্ঞতায় দেখেছি, পুলিশ নির্যাতনকারীদের পক্ষ নিয়ে নির্যাতিতের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। নির্যাতিতের মামলা নিতে চায় না, মামলা নিলেও তদন্ত করে না, কোনো ক্ষেত্রে ভুল তদন্ত করে, না হলে চার্জশিট থেকে মূল আসামিকে বাদ দেওয়া হয়। সর্বশেষ নুসরাতের ক্ষেত্রে এটি দেখলাম।

পুলিশ কোনো স্বার্থের কারণে চোখ বন্ধ করে থাকে। ফেনীর সোনাগাজী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাও অভিযুক্ত মাদ্রাসার অধ্যক্ষের মাধ্যমে কোনো না কোনোভাবে স্বার্থ উদ্ধারে জড়িত ছিলেন। পুলিশ সদস্যরা সচরাচর বলে থাকেন, ওপরের মহলের নির্দেশে তাঁদের চলতে হয়। চাকরিবিধি অনুযায়ী, স্বাধীনভাবে পুলিশ সদস্যরা কাজ করতে পারেন না। নিচের মহল ওপরের দিকে তাকিয়ে থাকার সংস্কৃতি তৈরি হতে দেখছি। আবার ওপরের নির্দেশ নিচের মহল মানে না, এটাও দেখছি। অর্থাৎ, চেইন অব কমান্ড মানতে দেখি না।

পুলিশে যোগদানের ক্ষেত্রে আদর্শের কোনো বিষয় কি থাকে? নিয়োগের ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক লেনদেন, রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়েও নিয়োগ হয়। পুলিশ সদস্যদের কার্যকলাপ নজরদারির কি ব্যবস্থা আছে? নব্বইয়ের দশকে গ্রামে ফতোয়ার ঘটনায় দেখা যেত, পুরো গ্রামবাসী ফতোয়ার ঘটনা জানে, কিন্তু পাশের থানার পুলিশ বলত, তারা জানত না।

ভুক্তভোগীর মামলা না নিয়ে, তদন্তের নামে দীর্ঘসূত্রতা করে বিচারকে নস্যাৎ করার চেষ্টা দেখতে পাই। তনু, মিতু, সাগর-রুনি, ত্বকী হত্যাকাণ্ডের ক্ষেত্রে আমরা এটাই দেখতে পাই। বিচার নিশ্চিত করার দায়িত্বে থাকা প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের নিজ নিজ কাজ করতে চায় না। তারা তাকিয়ে থাকে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার দিকে।

আদালত বলেছেন, নুসরাতের মামলাটি যেন সাগর-রুনির মামলার মতো হারিয়ে না যায়। জনগণের শেষ রক্ষাকবচ আদালত। সেই আদালত যখন মামলা হারিয়ে না যাওয়ার কথা বলেন, তখন কোথায় যাবে? নারী নির্যাতনের মামলার ক্ষেত্রে এই হারিয়ে যাওয়ার সংস্কৃতি বেশি দেখতে পাই।

নারী নির্যাতনের মামলায় সাজার হার মাত্র ৩ শতাংশ। এ অবস্থার উত্তরণ ঘটাতে হবে। দায়িত্বে থাকা প্রতিষ্ঠানগুলোকে সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে অর্পিত দায়িত্ব পালন করতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর প্রতি অনুরোধ, তিনি যেন প্রত্যেক ব্যক্তিকে নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করতে নির্দেশ দেন।