শিক্ষক রাজনীতির সমালোচনায় তোফায়েল আহমেদ

তোফায়েল আহমেদ । ফাইল ছবি
তোফায়েল আহমেদ । ফাইল ছবি

শিক্ষক রাজনীতির সমালোচনা করে ডাকসুর সাবেক ভিপি ও সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, ‘আমি দ্বিধাহীন চিত্তে বলব, আমাদের সময়ে শিক্ষকেরা রাজনীতি করতেন না৷ এ কারণে প্রতিটি ছাত্র তাঁদের শ্রদ্ধা করত। কিন্তু এখন শিক্ষকদের কেউ করেন বঙ্গবন্ধু পরিষদ, কেউ করেন জিয়া পরিষদ।’

দীর্ঘ ২৮ বছর পর অনুষ্ঠিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী প্রার্থীদের সঙ্গে অভিজ্ঞতা বিনিময় করতে গিয়ে আজ সোমবার বিকেলে তোফায়েল আহমেদ এসব কথা বলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনে ‘অভিজ্ঞতা শুনি সমৃদ্ধ হই’ শীর্ষক এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়৷

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘শিক্ষকদের সঙ্গে ছাত্রদের ভালোবাসা ও শ্রদ্ধার সম্পর্ক থাকলে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ-পরিস্থিতিও ভালো হয়। ডাকসুর আন্দোলনের সময় আমি মানুষের কাছ থেকে যে দুই-তিন হাজার টাকা সহযোগিতা পেয়েছিলাম, তা আমি আমার শিক্ষকদের কাছে রাখতাম। আমাদের সময়, শিক্ষক-ছাত্র সম্পর্ক ছিল বাপ আর পুত্রের মতো।’ অনুষ্ঠানে থাকা শিক্ষকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘এই অনুষ্ঠানে যেসব শিক্ষক রয়েছেন, তাঁরা সবাই একটি ভাবাপন্ন শিক্ষক, অন্য ভাবাপন্ন কেউ কিন্তু এখানে নাই।’

অছাত্ররা যাতে হলে অবস্থান করতে না পারেন, সেই বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান তোফায়েল আহমেদ। ডাকসু ও হল সংসদে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের সব ছাত্রসংগঠনের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখার আহ্বান জানান তিনি। ‘ত্রুটি-বিচ্যুতি হলেও’ দীর্ঘ ২৮ বছর পর ডাকসু নির্বাচন করতে পারায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানান তোফায়েল। এ ছাড়া ফেনীর সোনাগাজীতে মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে ডাকসুর পক্ষ থেকে কোনো প্রতিবাদ কর্মসূচি না দেখায় দুঃখ প্রকাশ করেন তিনি।

নিজের ছাত্রজীবনের স্মৃতিচারণা করে তোফায়েল আহমেদ অনুষ্ঠানে থাকা শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, ‘আমাদের সময় বিভাগের সবচেয়ে জ্যেষ্ঠ শিক্ষকই চেয়ারম্যান হতেন। আমি যখন ইকবাল হলের (বর্তমান জহুরুল হক হল) ভিপি, আমাদের হাউস টিউটর ছিলেন ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ (পরবর্তী সময়ে রাষ্ট্রপতি) ও রসায়নের শিক্ষক ড. মহব্বত আলী। সত্তরের আগে আমরা যখন ভিপি-জিএস ছিলাম, তখন আমারা পাকিস্তানের শোষণ-নির্যাতনের বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর কণ্ঠনিঃসৃত বক্তব্যকে অনুসরণ করতাম। এখন কিন্তু স্বাধীন বাংলাদেশ, সেই অবস্থা নাই। আমার একটাই অনুরোধ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশটা যেন ভালো থাকে।’

ডাকসু ও হল সংসদের প্রতিনিধিদের উদ্দেশে ডাকসুর সাবেক জিএস মুশতাক হোসেন বলেন, ‘এবারের ডাকসুতে মিশ্র প্যানেল, ছাত্রলীগ ও স্বতন্ত্র থেকে নির্বাচিত প্রতিনিধি রয়েছেন। কিছু রীতিনীতি অনুসরণ করলে এই ডাকসু একটি উদাহরণ হয়ে থাকবে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এবং ছাত্র সংসদের মধ্যে দাবিদাওয়া নিয়ে অবশ্যই দর–কষাকষি হবে, ঝগড়াঝাঁটিও হবে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আর সরকার এক জিনিস নয়। সরকারের চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অনেক আপন। কর্তৃপক্ষ সরকারের সঙ্গে ছাত্রদের লিয়াজোঁ হিসেবে ভূমিকা পালন করে। বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয় গড়তে সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।’

ডাকসুর জিএস হিসেবে দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতা বিনিময় করতে গিয়ে মুশতাক হোসেন বলেন, ‘ডাকসুতে নির্বাচিত হয়েই আমাদের প্রথম স্লোগান ছিল, সন্ত্রাসমুক্ত নিরাপদ ক্যাম্পাস চাই। কারণ তখন গোলাগুলি হতো। এ ছাড়া আমাদের আগে দীর্ঘ ৮-৯ বছর ডাকসু নির্বাচন না থাকায় যেসব সমস্যা তৈরি হয়েছিল, সেগুলো চিহ্নিত করতে আমরা হল সংসদ, বিভাগ, বিভিন্ন ছাত্রসংগঠন ও পরিবহন রুটের সঙ্গে বসে আলোচনা করে ১২ দফা একটি দাবিনামা তৈরি করেছিলাম। এরপর উপাচার্যের সভাপতিত্বে আমরা পুরো ডাকসু সভা করে সেটি তাঁর কাছে দিই। স্যার তখন ঠিক করে দেন, কোন সমস্যা কে সমাধান করবে। আমরা সময় বেঁধে দিয়ে বলি, এই সমস্যাগুলো আমরা আমাদের মেয়াদের প্রথমার্ধ্বেই সমাধান করতে চাই।’

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক ব্যবসা বিভাগের অধ্যাপক খন্দকার বজলুল হক। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও ডাকসুর সভাপতি অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান। সঞ্চালনা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার মো. এনামউজ্জামান।

অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে ডাকসু নির্বাচনের প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা অধ্যাপক এস এম মাহফুজুর রহমান, প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম গোলাম রাব্বানী, বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. কামাল উদ্দীন, সহ–উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মুহাম্মদ সামাদ, ডাকসুর কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াতুল ইসলামসহ ১৮টি হলের প্রাধ্যক্ষ (হল সংসদের সভাপতি) ও কয়েকজন সিন্ডিকেট সদস্য উপস্থিত ছিলেন। মূল অনুষ্ঠান শেষে বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে ডাকসু প্রকাশিত বিশেষ পত্রিকার মোড়ক উন্মোচন করা হয়।