'খুন' হওয়া জুলেখা জীবিত উদ্ধার

নিজের মেয়েকে আত্মগোপনে রেখে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন বাবা। মামলায় অভিযোগ করা হয়, মেয়েকে অপহরণ করে খুন করা হয়েছে। আর ‘খুন’ হওয়া সেই মেয়ে অবশেষে উদ্ধার হলো জীবিত। পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) তদন্তে বেরিয়ে এসেছে এই তথ্য। ঘটনাটি কক্সবাজারের কুতুবদিয়া উপজেলার আলী আকবর ডেইল এলাকার।

১১ এপ্রিল চট্টগ্রামের কাপ্তাই রাস্তার মাথায় মোহরা এলাকার একটি গার্মেন্টস থেকে কথিত খুনের শিকার জুলেখা বেগমকে (১৯) উদ্ধার করে পিবিআই।

গতকাল সোমবার বেলা ১১টায় কক্সবাজার শহরের বাহারছড়াস্থ পিবিআই কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান পরিদর্শক (প্রশাসন) মেজবাহ উদ্দিন। এ সময় তদন্তকারী কর্মকর্তা পরিদর্শক মো. মনির হোসেনও উপস্থিত ছিলেন।

পিবিআই সূত্র জানায়, ২০১৮ সালের ১১ অক্টোবর কুতুবদিয়া আলী আকবর ডেইল এলাকার নুর মোহাম্মদ বাবুল নামে এক ব্যক্তি তাঁর মেয়ে জুলেখা বেগমকে (১৯) অপহরণ করে হত্যা করা হয়েছে উল্লেখ করে কক্সবাজার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়ের করেন। ওই মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, ২০১৮ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর তাঁর মেয়ে ও তৎকালীন কুতুবদিয়া মহিলা কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী জুলেখা বেগম কলেজ শেষে বাড়ি ফেরার পথে স্থানীয় আলাউদ্দিনসহ চারজন ব্যক্তি তাঁকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। পরে তাঁকে হত্যা করা হয়।

আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে পিবিআইকে দ্রুত তদন্তের নির্দেশ দেন। পিবিআইয়ের পরিদর্শক মো. মনির হোসেন মামলা তদন্ত করতে গিয়ে বেশ কিছু রহস্যের মুখোমুখি হন।

মনির হোসেন বলেন, বাদী ঘটনাস্থল পরিদর্শন ছাড়া আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে নানাভাবে চাপ সৃষ্টির চেষ্টা করতে থাকেন। বাদীর এমন আচরণে সন্দেহ সৃষ্টি হয়। পরে বাদী বা বিবাদী পক্ষের কাউকে না জানিয়ে তিনি কুতুবদিয়ায় ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। সেখানে গিয়ে তিনি বাদী এবং বিবাদীর মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসার তথ্য পান।

মনির হোসেন আরও বলেন, বাদী নুর মোহাম্মদ ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের মুঠোফোন নম্বর এবং ভোটার আইডি কার্ডের মাধ্যমে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় জুলেখার সঙ্গে তাঁর বাবার মুঠোফোনে যোগাযোগের তথ্য পাওয়া যায়। পরে দীর্ঘ তদন্ত শেষে ১১ এপ্রিল চট্টগ্রামের একটি গার্মেন্টস থেকে জুলেখা বেগমকে উদ্ধার করা হয়। গতকাল জুলেখাকে কক্সবাজার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল আদালত-২ এ নেওয়া হলে বিচারক তাঁকে নিজ জিন্মায় জামিন দেন।

পিবিআইয়ের পরিদর্শক (প্রশাসন) মেজবাহ উদ্দিন বলেন, প্রতিপক্ষের সঙ্গে বাদী নুর মোহাম্মদের দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছে। প্রতিপক্ষকে ফাঁসানোর জন্য শেষ পর্যন্ত নিজের মেয়েকে ব্যবহার করে অপহরণের নাটক সাজিয়েছিলেন তিনি। বাদীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আদালতে আবেদন করবে পিবিআই।

এ প্রসঙ্গে নুর মোহাম্মদ বলেন, তিনি সাজানো মামলা করেননি। মেয়ের সঙ্গে এত দিন তাঁর যোগাযোগ ছিল না।