জানা গেল সেই হাসির কারণ 'সাংবাদিকদের উসকানি'

শাজাহান খান। ফাইল ছবি
শাজাহান খান। ফাইল ছবি

বিমানবন্দর সড়কের কুর্মিটোলায় গত বছরের ২৯ জুলাই বাসচাপায় দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর পর স্বাভাবিক কারণেই ক্ষুব্ধ ও শোকাহত ছিল সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এ নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় তখন হেসেছিলেন সাবেক নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান। তাঁর সেই হাসির জন্য সমস্যা তৈরি হয়েছিল বলে ঘটনার সাড়ে আট মাস পর রাজধানীতে অনুষ্ঠিত এক গোলটেবিল বৈঠকে মন্তব্য করলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিম।

গতকাল সোমবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ১৪ দল আয়োজিত এই বৈঠকে শাজাহান খানও উপস্থিত ছিলেন। তাঁকে বক্তব্য দিতে আহ্বান জানানোর সময় ১৪ দলের মুখপাত্র মোহাম্মদ নাসিম বলেন, ‘তিনি সব সময়ই হাসেন। এই হাসির জন্যই সমস্যাটা হয়েছিল।’ যদিও শাজাহান খান তাঁর সেই হাসির জন্য দোষ চাপিয়েছেন সাংবাদিকদের ওপর।

হাসির ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, ‘৬৮ বছর পর মোংলা বন্দরে আমরা ক্রেন কিনেছিলাম। সেই চুক্তির বৈঠকে সাংবাদিকেরা দুজন ছাত্র মারা যাওয়া নিয়ে প্রশ্ন করেন। তখন আমি বলেছি, এর জন্য কোনো চালক যদি দায়ী প্রমাণিত হয়, তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব। তখন সাংবাদিকদের একজন বলে ওঠেন, আপনার আশকারাতেই চালকেরা এমন হয়েছে। ওই কথা শুনে স্বাভাবিকভাবেই আমি হেসে উঠি। আমি এমনিতেও একটু বেশি হাসি। তবে ওই দিনের হাসির জন্য সাংবাদিকেরাই উসকানি দিয়েছিলেন।’

নিরাপদ সড়কের আন্দোলনের সময় শাজাহান খানের পদত্যাগের দাবি তুলেছিল শিক্ষার্থীরা। তবে শেষ পর্যন্ত পদত্যাগ করতে হয়নি তাঁকে। এই সরকারে মন্ত্রিত্ব না পেলেও সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে জাতীয় সড়ক নিরাপত্তা কাউন্সিল সম্প্রতি যে ১৫ সদস্যের কমিটি করেছে, তার প্রধান করা হয়েছে সাংসদ শাজাহান খানকে। তিনি এক যুগের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের কার্যকরী সভাপতি।

‘নিরাপদ সড়ক ও মাদকমুক্ত সমাজ গঠন’ শীর্ষক ওই গোলটেবিলে নাসিম বলেন, জঙ্গি দমন, স্বাস্থ্য, শিক্ষাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে এখনো উন্নতি করা যায়নি। তার একটি হলো সড়ক পরিবহন খাত। এটি নিয়ে অনেক আলোচনা ও বৈঠক হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীও নির্দেশনা দিয়েছেন। তারপরও সেগুলোর বাস্তবায়ন হয়নি।

‘নিরাপদ সড়ক ও মাদকমুক্ত সমাজ গঠন’ শীর্ষক ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন ও জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু। আরও উপস্থিত ছিলেন জাতীয় পার্টির (জেপি) মহাসচিব শেখ শহীদুল ইসলাম, সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী নাজমুল হুদা, জাতীয় পার্টির মহাসচিব মশিউর রহমান, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশনের (বিআরটিসি) চেয়ারম্যান ফরিদ আহমদ ভূইয়া, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) চেয়ারম্যান মশিয়ার রহমান, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহ, প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক আবদুল কাইয়ুম, জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি সাইফুল আলম, সাংবাদিক মনজুরুল আহসান বুলবুল প্রমুখ।

বৈঠকে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বিআরটিসি ও বিআরটিএ সম্পর্কে মানুষের নেতিবাচক ধারণা আছে। এখানে পজিটিভ (ইতিবাচক) কিছু করা হয়নি। বিএনপি আমল থেকে ওই দুটি সংস্থাকে ধীরে ধীরে দুর্নীতিবাজ প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে।

বৈঠকে লেখক–গবেষক সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, দুর্ঘটনার পর সড়কের নিরাপত্তা নিয়ে আন্দোলন বা কথা বললেই সরকার, মালিক-শ্রমিকেরা মনে করে তাদের বিরোধিতা করা হচ্ছে। অথচ নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করার দায়িত্ব সরকারের বা পরিবহন–সংশ্লিষ্টদেরই বেশি।