সেতু তৈরিতে দীর্ঘসূত্রতা মেনে নিতে পারল না এলাকাবাসী

সেতুটি তৈরির জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয় চার বছর আগে। চার বছর পর চলতি মাসে কাজ শুরু হয়। ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী এ দীর্ঘসূত্রতা মেনে নেয়নি। তারা কাজ বন্ধ করে দিয়েছে। কার্যাদেশ না মেনেই কাজ করার অভিযোগও করেছে তারা। এ ঘটনা নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার ভরতপুরে। প্রশাসন এখন এলাকাবাসীর ক্ষোভ প্রশমনের চেষ্টা করছে।

বড়াইগ্রাম পৌরসভার প্রকৌশল বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ২০১৫ সালের জুনে ভরতপুর-লক্ষ্মীকোল এলাকায় বড়াল নদের ওপর ৫৮ লাখ ১৯ হাজার ৯৭২ টাকায় ১২ মিটার দীর্ঘ একটি সেতু নির্মাণের দরপত্র আহ্বান করা হয়। দরপত্রের প্রক্রিয়া শেষ করে বনপাড়া বাজারের মিজানুর রহমানকে ঠিকাদার নিয়োগ দেওয়া হয়। তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোয়াজ্জেম হোসেনকে সঙ্গে নিয়ে কাজটি করার উদ্যোগ নেন। কিন্তু কার্যাদেশ দিতেই সময় চলে যায় দুই বছর। ২০১৭ সালের অক্টোবর মাসে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। নির্ধারিত সময়ে তাঁরা কাজ শুরু করতে না পারায় জনৈক ইউসুফ আলী নামের অপর এক ঠিকাদারকে কাজটি হস্তান্তর করেন। ২০১৮ সালের শেষের দিকে তিনি সেতুটির নির্মাণকাজ শুরু করেন। কিন্তু বর্ষার কারণে নির্ধারিত ১২০ দিনের মধ্যে তিনি কাজ শেষ করতে পারেননি। সেতু নির্মাণের কাজটি চতুর্থ বছরে গড়ায়। এতে স্থানীয় লোকজনের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছায়। এলাকাবাসীকে বর্ষায় বাঁশের সেতু দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করতে হয় । এদিকে কাজের মান নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ, কার্যাদেশ মেনে কাজ করছেন না ঠিকাদার। অবশেষে ৬ এপ্রিল সকালে ক্ষুব্ধ স্থানীয় লোকজন লাঠিসোঁটা নিয়ে ব্রিজ নির্মাণস্থলে গিয়ে কাজ বন্ধ করে দেয়। গতকাল সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত নির্মাণকাজ বন্ধ ছিল। এদিকে বর্ষা এগিয়ে আসায় নতুন করে দুর্ভোগের আশঙ্কা করছে স্থানীয় লোকজন।

গতকাল সরেজমিনে সেতু নির্মাণের স্থানে গেলে স্থানীয় লোকজন জানান, কার্যাদেশ অনুযায়ী সেতুর ৬০ ফুট গভীরে পাইলিং করার কথা থাকলেও ৩৫ থেকে ৪০ ফুটের বেশি পাইলিং করা হয়নি। সেতুর দুই প্রান্তে নয়টি করে পাইলিং করার কথা থাকলেও পূর্ব পাশে আটটি পাইলিং করা হয়েছে। পাইলিং ও খাঁচা নির্মাণে ২০ মিলিমিটার রডের পরিবর্তে ১৬ মিলি এবং ১৬ মিলি রডের জায়গায় ১২ মিলি রড ব্যবহার করা হচ্ছে।

সেতুর কাছে ছিলেন এখনকার ঠিকাদার ইউসুফ আলী। তাঁর কাছে সেতু নির্মাণের কার্যাদেশ দেখতে চাইলে তিনি তা দেখাতে পারেননি।

অত্যন্ত ধীরগতিতে কাজ করায় এ বছরও সেতু নির্মাণ সম্পন্ন না হওয়ার আশঙ্কা করছেন নিয়োজিত প্রকৌশলী ও স্থানীয় লোকজন।

সেতু নির্মাণকাজের অনিয়ম তুলে ধরে বড়াইগ্রাম পৌর ছাত্রলীগ সভাপতি মেহেদী হাসান তুহিন বলেন, সেতু নির্মাণে সীমাহীন অনিয়ম-দুর্নীতি হচ্ছে। তাই মানসম্মত কাজের দাবিতে তাঁরা সেতুর নির্মাণকাজ বন্ধ করে দিয়েছেন।

দায়িত্বরত ঠিকাদার ইউসুফ আলী বলেন, বারবার ঠিকাদার বদল হয়ে সর্বশেষ তাঁকে কাজ করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তবে কাগজে–কলমে কাজটি ঠিকাদার মিজানুর রহমানের নামেই আছে। দীর্ঘ বিলম্বের কারণ সম্পর্কে ইউসুফ আলী বলেন, নির্মাণাধীন সেতুর স্থানে আগে থেকে একটা ভাঙা সেতু ছিল। ওই সেতু সরিয়ে নতুন সেতু করতে হচ্ছে। তাই কাজ শুরু করতেই বিলম্ব হয়েছে। এ ছাড়া বর্ষার কারণেও কাজ এগোতে পারেনি।

ইউসুফ আলী বলেন, ‘স্থানীয় লোকজনের কষ্টের জন্য আমার খারাপ লাগছে। কিন্তু পানির মধ্যে কাজ তো তাড়াহুড়ো করে করা সম্ভব হচ্ছে না।’

কাজের অনিয়ম–দুর্নীতি প্রসঙ্গে ইউসুফ আলীর বক্তব্য, ‘আমি কার্যাদেশমোতাবেক কাজ করছি। অনিয়ম হলে দায়িত্বরত প্রকৌশলী আমাকে ধরবেন। স্থানীয় লোকজন প্রকৌশলীর কাছে কাজ বুঝে না নিয়ে আমার ওপর চড়াও হয়েছে। আমি আপাতত কাজ বন্ধ রেখেছি।’

দায়িত্বরত উপসহকারী প্রকৌশলী ফিরোজ হোসেন বলেন, ‘দীর্ঘ বিলম্বের কারণে স্থানীয় লোকজন ক্ষুব্ধ। আমরা এখন চেষ্টা করছি কাজটি দ্রুত শেষ করার।’

ফিরোজ হাসান বলেন, ‘স্থানীয় লোকজনের যেসব অভিযোগ আছে, আমরা তা আনুষ্ঠানিকভাবে শুনব। এ পর্যন্ত সেতুর অর্ধেকের কিছু কম কাজ শেষ হয়েছে।’ নির্মাণকাজে কোনো অনিয়ম হয়নি বলে তিনি দাবি করেন।