বিচারকেরাও বিচারব্যবস্থার ওপর আস্থা রাখতে পারছেন না: সুলতানা কামাল

নুসরাত হত্যার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে কয়েকটি সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠন যৌথভাবে একটি প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করে। সমাবেশে বক্তব্য দেন মানবাধিকারকর্মী ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা সুলতানা কামাল। বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের সামনে, ঢাকা, ১৬ এপ্রিল। ছবি: সাইফুল ইসলাম
নুসরাত হত্যার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে কয়েকটি সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠন যৌথভাবে একটি প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করে। সমাবেশে বক্তব্য দেন মানবাধিকারকর্মী ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা সুলতানা কামাল। বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের সামনে, ঢাকা, ১৬ এপ্রিল। ছবি: সাইফুল ইসলাম

বাংলাদেশের বিচারকেরাও বিচারব্যবস্থার ওপর আস্থা রাখতে পারছেন না বলে মন্তব্য করেছেন মানবাধিকারকর্মী ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা সুলতানা কামাল। ফেনীর সোনাগাজী উপজেলায় নুসরাত হত্যাকাণ্ডের বিচার প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা আদালতের দুজন বিজ্ঞ বিচারকের কথা শুনেছি৷ বিচারকের মুখ থেকেও এই ভাষা বেরিয়ে আসে যে “সাগর-রুনি এবং তনু হত্যার মতো যেন এই বিচারের কাজ হারিয়ে না যায়।” তার মানে উচ্চ আদালতে বিচার দেওয়ার জায়গায় যাঁরা বসে আছেন, তাঁরাও বিচারব্যবস্থার ওপর আস্থা রাখতে পারছেন না।’

নুসরাত হত্যার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে আজ মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে আয়োজিত প্রতিবাদ সমাবেশে সুলতানা কামাল এসব কথা বলেন। কয়েকটি সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠন যৌথভাবে এই সমাবেশের আয়োজন করে৷

দেশে বিচারহীনতার সংস্কৃতি চলছে, উল্লেখ করে সুলতানা কামাল বলেন, ‘যথাযথ শ্রদ্ধা রেখেই বলছি, আমাদের দেশের প্রধান নির্বাহী চাইলে বিচার হবে, তিনি না চাইলে বিচার হবে না—এমন একটি সংস্কৃতিতে আমরা চলে গেছি। নুসরাত ছাড়া অন্য যাদের ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে, তাদের স্বজনেরা কি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তাঁর কাছে বিচারের আরজি পেশ করে বলতে পারবেন? এসব হত্যাকাণ্ডের বিচার কি আমরা আশা করতে পারি? পারি না, কারণ আমরা বিচারহীনতার সংস্কৃতির মধ্যে বাস করছি৷’

নুসরাত হত্যাকাণ্ডসহ দেশের সব নারী নির্যাতনের ঘটনার বিচার দাবি করে সুলতানা কামাল বলেন, ‘নুসরাতের ওপর যারা কেরোসিন ঢেলে আগুন লাগিয়েছে, সেখানে হুকুমের আসামি, সহযোগী, উসকানিদাতা আছে। নুসরাতের ওপর নির্যাতনের যখন প্রতিবাদ হচ্ছিল, সেটি বন্ধ করার উদ্যোগও নেওয়া হয়েছিল। আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জামায়াত ও সামাজিকভাবে ক্ষমতাশালী নির্বিশেষে একটা নেক্সাস সেখানে তৈরি হয়েছিল, যারা নুসরাত হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ী। আশা করব, এরা সবাই হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ী চিহ্নিত হবে এবং বিচারের আওতায় আসবে।’

২০১৮ সালে দেশে নারী নিপীড়নের ঘটনার একটি পরিসংখ্যান তুলে ধরে সুলতানা কামাল বলেন, ‘কোনো সমাজই অপরাধমুক্ত নয়, কোনো সমাজই এমন হবে না যেখানে যৌন নির্যাতন হবে না। কিন্তু যৌন নির্যাতন কমিয়ে আনা যায়, এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলে প্রতিকার পাওয়া যায়, যদি নির্যাতিতরা মুখ খুলতে পারেন। যদি পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র তাঁদের পাশে দাঁড়ায়। বাংলাদেশে এ ধরনের ঘটনায় কখনো পরিবার, কখনো সমাজ পাশে দাঁড়াচ্ছে, কিন্তু রাষ্ট্র পাশে দাঁড়াচ্ছে না। রাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গ ও বাহিনী এত অনাচারে লিপ্ত আছে, এ ধরনের ঘটনার বিচার সহজে পাওয়া যায় না।’

শ্রমিকনেতা আবুল হোসেনের সঞ্চালনায় এই প্রতিবাদ কর্মসূচিতে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সাবেক উপাচার্য সুশান্ত কুমার দাস। কর্মসূচির আয়োজক সংগঠনগুলো হলো বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতি, যৌন নির্যাতন ও নারী নিপীড়ন প্রতিরোধ আন্দোলন, বাংলাদেশ নারী মুক্তি সংঘ, বাংলাদেশ যুব মৈত্রী, জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন, জাতীয় হকার্স ফেডারেশন, জাতীয় গার্হস্থ্য নারী শ্রমিক ইউনিয়ন ও বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ ৭১ সোসাইটি৷