বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে অচলাবস্থা, সেশন জটের আশঙ্কা

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এস এম ইমামুল হকের পদত্যাগের দাবিতে শিক্ষার্থীরা অবস্থান কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছেন। আট দফা দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির একাংশ গতকাল মঙ্গলবার দ্বিতীয় দিনের মতো পৃথক অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে।

গতকাল সকাল ১০টায় প্রশাসনিক ভবনের নিচতলায় শিক্ষার্থীরা জড়ো হয়ে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন। এ সময় শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। বেলা একটা পর্যন্ত তাঁরা এই কর্মসূচি পালন করেন। আন্দোলনের কারণে গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রমে ২৩ দিন ধরে অচলাবস্থা বিরাজ করছে।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি লোকমান হোসেন বলেন, ‘উপাচার্যের পদত্যাগ অথবা পূর্ণ মেয়াদে ছুটিতে যাওয়ার বিষয়ে লিখিত সিদ্ধান্ত হাতে না পাওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। প্রয়োজনে আন্দোলন আরও কঠোর হবে। কিন্তু দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা ক্লাসে ফিরবেন না।

অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির একাংশের নেতারাও গতকাল তৃতীয় দিনের মতো বেলা ১১টা থেকে ১টা পর্যন্ত দুই ঘণ্টা অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন। তাঁরা শিক্ষার্থীদের দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়ে এবং তাঁদের ৮ দফা দাবি পূরণের লক্ষ্যে এই কর্মসূচি পালন করছেন। সমিতি সাধারণ সম্পাদক আবু জাফর মিয়া গতকাল বলেন, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের পদোন্নতির ক্ষেত্রে তিন বছরের নিয়ম সিন্ডিকেটে রহিত করা, জ্যেষ্ঠতার ক্ষেত্রে অস্পষ্টতা, চিকিৎসা-শিক্ষা ছুটিতে অনিয়ম, বিভাগীয় চেয়ারম্যান পদে উপাচার্যের পছন্দের লোকদের নিয়োগসহ নানা অনিয়ম বন্ধের দাবিতে তাঁরা এই আন্দোলন করছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা ৮ দফার যৌক্তিক দাবি আদায়ে দুই ঘণ্টা করে অবস্থান ধর্মঘট পালন করছি। দাবি না মানা হলে আরও কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে।’

শিক্ষার্থী এবং পরবর্তীকালে শিক্ষকদের একাংশের আন্দোলনের ফলে ২৩ দিন ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস, পরীক্ষা এবং প্রশাসনিক কর্মকাণ্ড স্থবির হয়ে পড়ায় সাধারণ শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন চরম ক্ষতির মুখে পড়েছে। বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ২৩ দিন ধরে আন্দোলন চলায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রমে অচলাবস্থা চলছে। এতে সাধারণ শিক্ষার্থী বিশেষ করে দরিদ্র, মধ্যবিত্ত পরিবারের শিক্ষার্থীদের বড় ধরনের ক্ষতির মুখোমুখি হতে হবে। এসব নিয়ে তাঁরা উদ্বেগও প্রকাশ করেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অন্তত চারজন শিক্ষার্থী বলেন, উপাচার্যের পদত্যাগের দাবির বিষয়টি নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে মতামত রয়েছে। উপাচার্য শিক্ষার্থীদের নিয়ে যে মন্তব্য করেছেন, সেটা অভিভাবকসুলভ নয়। আবার এ জন্য তিনি ক্ষমাও চেয়েছেন। তা ছাড়া উপাচার্যের মেয়াদ রয়েছে আগামী ২৭ মে পর্যন্ত। এরপরে তিনি আর ওই পদে নিয়ম অনুযায়ী থাকতে পারবেন না। কিন্তু এই অল্পদিনের জন্য গত ২৩ দিন এবং সামনে আরও দেড় মাস যদি এভাবে পাঠদান ও ক্লাস বন্ধ থাকে, তাহলে হাজার হাজার সাধারণ শিক্ষার্থীকে বিরাট ক্ষতির মুখে পড়তে হবে। আন্দোলনের কারণে প্রধান সমস্যা হবে সেশনজট। এই আন্দোলনের কারণে রুটিন অনুযায়ী যে পরীক্ষাগুলো হওয়ার কথা ছিল, সেগুলো নেওয়া সম্ভব হয়নি। আন্দোলন শেষ হলে নতুন করে আবার রুটিন তৈরি করবে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অফিস, তাতে অনেক সময় চলে যাবে। আবার উপাচার্য না থাকলে কোনো ব্যাচের পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা সম্ভব নয়। যে জন্য সাধারণ ছাত্রদের অনেক সমস্যায় পড়তে হয়েছে। পরীক্ষা অথবা ফলাফল প্রকাশে দেরি হলে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় অনীহা দেখা দেবে। এতে ফলাফলে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।

সাধারণ শিক্ষার্থীরা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং আন্দোলনরত শিক্ষার্থী উভয় পক্ষকেই বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নেওয়া প্রয়োজন। সাধারণ শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন এতটা অনিশ্চয়তার মধ্যে ফেলে দেওয়ার কোনো যুক্তি নেই।

গত ২৬ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে উপাচার্য শিক্ষার্থীদের ‘রাজাকারের বাচ্চা’ বলে মন্তব্য করলে ২৭ মার্চ থেকে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করেন শিক্ষার্থীরা। ২৮ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ এবং শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের নির্দেশ দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ২৯ মার্চ উপাচার্য তাঁর মন্তব্যের জন্য দুঃখ প্রকাশ করে বিজ্ঞপ্তি দেন। তবে তা প্রত্যাখ্যান করে তাঁর পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত রাখেন শিক্ষার্থীরা।