'ইস্পাতের কান্না'র দুই নারী সাদা কাপড়ে মোড়া

ধানমন্ডি ২৭ নম্বর মোড়ে শিল্পী মৃণাল হকের তৈরি ভাস্কর্য ‘ইস্পাতের কান্না’। এর দুই নারী আরোহীকে দুর্বৃত্তরা কাপড় দিয়ে ঢেকে দিয়েছে এবং পুরুষ রিকশাচালকের রিকশায় গেঁথে দিয়েছে বাঁশের বর্শা। গতকাল বিকেলে।  ছবি: সাবরিনা ইয়াসমীন
ধানমন্ডি ২৭ নম্বর মোড়ে শিল্পী মৃণাল হকের তৈরি ভাস্কর্য ‘ইস্পাতের কান্না’। এর দুই নারী আরোহীকে দুর্বৃত্তরা কাপড় দিয়ে ঢেকে দিয়েছে এবং পুরুষ রিকশাচালকের রিকশায় গেঁথে দিয়েছে বাঁশের বর্শা। গতকাল বিকেলে। ছবি: সাবরিনা ইয়াসমীন

রিকশার চেইন দিয়ে বানানো রিকশার ভাস্কর্যে চুল খোলা দুই নারী যাত্রী স্বচ্ছন্দেই বসে ছিল। কিন্তু গতকাল মঙ্গলবার থেকে দুই নারীর মাথা থেকে শরীরের ওপরের অংশ সাদা কাপড়ে ঢেকে দিয়েছে কেউ। রিকশাচালকের হাতের সামনে বাঁশ এমনভাবে কেটে বসিয়ে দেওয়া হয়েছে যে সেটি রূপ পেয়েছে বর্শার। নিত্যদিনের ভাস্কর্যটি হয়ে উঠেছে এক নতুন স্থাপনাশিল্প। তবে কে বা কারা তা করেছে, তার হদিস পাওয়া যায়নি। বিভিন্ন দেশে প্রতিবাদী শিল্পের ভাষা হিসেবে গণপরিসরে স্থাপিত ভাস্কর্য নিয়ে এ ধরনের স্থাপনাশিল্প রচনার প্রচলন আছে।

রাজধানীর ধানমন্ডি ২৭ নম্বর সড়কের শুরুতেই রাপা প্লাজার কাছে এ ভাস্কর্য। এর নির্মাতা মৃণাল হক। নাম ‘ইস্পাতের কান্না’।

ভাস্কর্যটির আশপাশের চা বিক্রেতা, নিরাপত্তাকর্মী, পথচারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সাদা কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখার বিষয়টি গতকালই তাঁদেরও চোখে পড়ে। সংস্কারকাজের জন্য কোনো সাইনবোর্ড না থাকায় সবার মধ্যেই একধরনের প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।

অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলার বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগে মামলা করেও বাঁচতে পারেননি ফেনীর সোনাগাজীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি। তাঁর শরীরে আগুন লাগিয়ে দিয়ে হত্যা করার ঘটনা সারা দেশে আলোড়ন তুলেছে। ধর্ষণ আর পথঘাটে, কর্মক্ষেত্রে নারী নিপীড়নের ঘটনা ঘটেই চলেছে। উগ্র ধর্মীয় মৌলবাদী গোষ্ঠী নারীদের এগিয়ে যাওয়ার পথে বিভিন্নভাবে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে। ঠিক এ ধরনের একটি পরিস্থিতিতে এই ভাস্কর্যের এমন রূপান্তর ঘটানো হলো। সাম্প্রতিক সময়ে সুবোধ নামে কল্পিত চরিত্রকে ঘিরে রাজনৈতিক বক্তব্যধর্মী কিছু গ্রাফিতি বা দেয়ালচিত্র দেশে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

ভাস্কর্যটির পুরোনো ছবি।  সংগৃহীত
ভাস্কর্যটির পুরোনো ছবি। সংগৃহীত

এ বিষয়ে শিল্পী ওয়াকিলুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ভাস্কর্যের এই রূপান্তর যারা করেছে, তারা তা সচেতনভাবেই করেছে বলে মনে হচ্ছে। বর্তমান সময়ে নারী নিপীড়নের যেসব ঘটনা ঘটছে, তারই প্রতিক্রিয়ায় এটি করা হয়ে থাকতে পারে। চলমান ঘটনাধারার প্রেক্ষাপটে সবাই যার যার মতো করে এর অর্থ খুঁজে নিতে পারে। গণপরিসরে স্থাপিত ভাস্কর্য নিয়ে এ রকম হয়ে থাকে। নারী অবয়ব ঢেকে দেওয়ার বিষয়টির পেছনে অন্য কোনো ঘটনার ইঙ্গিত আছে কি না, তা–ও খতিয়ে দেখা যেতে পারে বলে জানিয়েছেন শিল্পী ওয়াকিলুর রহমান।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান টেলিফোনে প্রথম আলোকে বলেন,‘ ভাস্কর্যটি সাদা কাপড়ে ঢেকে দেওয়ার কথা মাত্রই শুনেছি। আমি এটুকু বলতে পারি, কোনো সংস্কার বা অন্য কোনো কারণে আমরা ভাস্কর্যটি ঢেকে দিইনি। আমি আমার সংশ্লিষ্ট বিভাগের মাধ্যমে খবর নেওয়ার চেষ্টা করছি।’