হালদায় ফের ডলফিনের মৃত্যু

যান্ত্রিক নৌযানের পাখার আঘাতে মরে ভেসে উঠা ডলফিন। গতকাল বিকেলে চট্টগ্রামের রাউজান মদুনাঘাট এলকায়।  প্রথম আলো
যান্ত্রিক নৌযানের পাখার আঘাতে মরে ভেসে উঠা ডলফিন। গতকাল বিকেলে চট্টগ্রামের রাউজান মদুনাঘাট এলকায়। প্রথম আলো

হালদা নদীতে আবার মরে ভেসে উঠছে অতি বিপন্ন ডলফিন। গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে পাঁচটার দিকে নদীর রাউজানের মদুনাঘাট এলাকা থেকে ডলফিনটি উদ্ধার করা হয়। মাঝারি আকারের এই ডলফিনটির পিঠে আঘাতের চিহ্ন আছে। যান্ত্রিক নৌযানের পাখার আঘাতেই এটির মৃত্যু হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন হালদা গবেষকেরা।

প্রাণীটি ভেসে ওঠার খবর শুনে হালদা রক্ষা কমিটির সভাপতি ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মঞ্জুরুল কিবরিয়া এটি উদ্ধার করেন। নৌযানের পাখার আঘাতে ডলফিনের মৃত্যু হয়েছে বলে তিনি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেন।

অধ্যাপক মঞ্জুরুল কিবরিয়া বলেন, এর আগে ১০ এপ্রিল নদীর খলিফাঘোনা এলাকা থেকে ৮ কেজি ওজনের একটি মা মৃগেল মাছ ভেসে উঠে। গত মার্চ মাসের ৪ তারিখ হাটহাজারীর গরদোয়ারা আমতুয়া এলাকায় মরে ভেসে উঠে ১২ কেজি ওজনের কাতলা ও ৩ কেজি ওজনের মা আইর মাছ। সব কটি মা মাছ ও ডলফিন মারা যায় নৌযান ও ড্রেজারের পাখার আঘাতে।

মঞ্জুরুল কিবরিয়া আরও বলেন, পৃথিবীর সব নদীতে মোট ১১ শ ডলফিন বর্তমানে বেঁচে আছে। তার মধ্যে শুধু হালদাতেই ডলফিনের সংখ্যা ২০০। বিশ্বের অতি বিপন্ন লাল তালিকাভুক্ত ১১টি প্রাণীর মধ্যে ডলফিন অন্যতম।

অথচ গত দুই বছরে বালুবাহী ড্রেজারের আঘাতে ২০টি ডলফিন মারা গেছে।

সম্প্রতি চট্টগ্রামের রাউজানের কচুখাইন এলাকা থেকে গহিরা ইউনিয়নের হালদা সেতু পর্যন্ত ঘুরে হালদা নদীতে যান্ত্রিক নৌযান চলাচল করতে দেখা গেছে। একই সঙ্গে চলছে ঘেরজাল ও বড়শি দিয়ে মাছ শিকার। দেখা গেছে ড্রেজার দিয়ে বালু তুলতে।

রাউজান উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা শিমুল বড়ুয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘নদীর জীববৈচিত্র্য রক্ষায় মৎস্য অধিদপ্তর নানা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। আমরাও নিয়মিত নদীতে অভিযান চালিয়ে অবৈধ কার্যক্রম বন্ধের চেষ্টা করছি। তবে কিছু অসাধু ব্যক্তি নিজের স্বার্থে এ নদীকে শেষ করে দিচ্ছে।’

রাউজান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শামীম হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, হালদা নদীর দুই পাড়ে গত এক বছর থেকে তীর রক্ষা বাঁধের কাজ চলছে। এ কারণে প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে কিছু জাহাজ নদীতে ঢুকছে। এই সুযোগে স্থানীয় বালু ব্যবসায়ীদের ড্রেজার ও জাহাজ নদীতে ঢুকে পড়ছে। যার ফলে কোনটি প্রকল্পের জাহাজ আর কোনটি বালু ব্যবসায়ীর তা শনাক্তে সমস্যা তৈরি হয়। এরপরও অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে তিনি জানান।