শ্রমিক-সংকট এড়াতে বালু, পাথরমহাল বন্ধ

সুনামগঞ্জের হাওরে বোরো ধান পেকে গেছে। কিন্তু ধান কাটার শ্রমিকের বড়ই সংকট। শ্রমিকের অভাবে ফসল গোলায় তুলতে সমস্যায় পড়ছেন কৃষকেরা। এই সমস্যা এড়াতে আগামী ৫ মে পর্যন্ত জেলার সব বালু ও পাথরমহাল বন্ধ থাকবে। এসব শ্রমিক যুক্ত হবেন হাওরের ধান কাটার কাজে।

গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক বিশেষ সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সুনামগঞ্জে হাওরের বোরো ধান কাটা, ধানের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতকরণ ও কৃষি উৎপাদনে ছোট ছোট খাল খননের লক্ষ্যে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবদুল আহাদ। সভায় জেলা প্রশাসন, কৃষি বিভাগ, খাদ্য বিভাগ, পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার লোকজন উপস্থিত ছিলেন।

সভায় জানানো হয়, এবার হাওরের ধান কাটার শুরুর পর থেকেই কৃষকেরা ধান কাটার শ্রমিকের সংকটে পড়েছেন। হাওরে ২৫ শতাংশ খেতের ধান এখন পেকে গেছে। কিন্তু শ্রমিকের অভাবে সব স্থানে ধান কাটা সম্ভব হচ্ছে না। আগে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ধান কাটার মৌসুমে শ্রমিকেরা আসতেন সুনামগঞ্জে। কিন্তু ১০ থেকে ১২ বছর ধরে জেলার বাইরে থেকে ধান কাটা শ্রমিক আসা কমে গেছে। তাই ধান কাটার মৌসুম এলেই সমস্যায় পড়তে হয়ে কৃষকদের। স্থানীয় শ্রমিকদের বেশি লাভ দিয়ে ধান কাটাতে হয়। আবার টাকা দিয়েও অনেক সময় শ্রমিক পাওয়া যায় না। তাই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

সভায় আরও জানানো হয়, সুনামগঞ্জে তিনটি বৃহৎ বালু ও পাথরমহালে ২০ থেকে ১৫ হাজার শ্রমিক কাজ করেন। এসব মহাল বন্ধ থাকলে তাঁরা ধান কাটায় যুক্ত হতে পারবেন। তাঁদের ধান কাটায় যুক্ত হতে উৎসাহিত করা হবে। এই নির্দেশনা বাস্তবায়নে পুলিশ প্রশাসন, বিজিবি, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের অনুরোধ জানানো হয়।

সভায় জেলা প্রশাসক আবদুল আহাদ বলেন, ‘হাওরের ফসল রক্ষায় সঠিকভাবে বাঁধ নির্মাণের কাজে দুই মাস আমরা মাঠে ছিলাম। এখনো মাঠে আছি। কৃষকেরা যদি ধান গোলায় না তুলতে পারেন, তাহলে আমাদের সব চেষ্টা ব্যর্থ হয়ে যাবে। এ জন্য সবাইকে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিতে হবে। হাওরে পাকা ধান রাখা যাবে না। আমরা কৃষকের কষ্টে ফলানো ধান অকালবন্যা কিংবা পাহাড়ি ঢলে নষ্ট হতে দেব না।’

২৩ এপ্রিল ধান কাটা উৎসব
সভায় ২৩ এপ্রিল সুনামগঞ্জ জেলাজুড়ে ধান কাটা উৎসব পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। জেলা খাদ্য ও কৃষি বিভাগের সহযোগিতায় জেলা পর্যায়ে ধান কাটার উৎসবের উদ্বোধন হবে বিশ্বম্ভরপুর উপজেলায়। একই দিনে জেলার প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে স্থানীয়ভাবেও ধান কাটার উৎসব করা হবে। এতে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মকর্তা-কর্মচারী, জনপ্রতিনিধি, শিক্ষক, শিক্ষার্থীসহ সব শ্রেণি–পেশার লোকজনের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হবে।