সেতু হয়নি, প্রাপ্তি শুধু ভোগান্তি

বড়াইগ্রামের ভরতপুরে সেতুর নির্মাণকাজ চার বছরেও শেষ হয়নি। গত সোমবার।  প্রথম আলো
বড়াইগ্রামের ভরতপুরে সেতুর নির্মাণকাজ চার বছরেও শেষ হয়নি। গত সোমবার। প্রথম আলো

নাটোরের বড়াইগ্রাম পৌরসভার ভরতপুর এলাকায় বড়াল নদের ওপর ৫৮ লাখ টাকায় একটি সেতু নির্মাণের দরপত্র আহ্বান করা হয় ২০১৫ সালে। নানা ঠেলা–ধাক্কায় শেষ পর্যন্ত গত বছর ঠিকাদার নির্মাণকাজ শুরু করেন। ১২০ দিনের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা থাকলেও আজ পর্যন্ত সে কাজ অর্ধেকও হয়নি। এতে জনদুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। আসন্ন বর্ষায় দুর্ভোগ আরও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এতে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী দীর্ঘসূত্রতা ও অনিয়মের অভিযোগে সেতুর নির্মাণকাজ বন্ধ করে দেন।

সরেজমিন গত সোমবার ওই সেতু এলাকায় গেলে স্থানীয় লোকজন জানান, কার্যাদেশ অনুযায়ী সেতুর জন্য ৬০ ফুট গভীরে পাইলিং করার কথা ছিল। কিন্তু আসলে ৩৫ থেকে ৪০ ফুটের বেশি পাইলিং করা হয়নি। সেতুর দুই পাশে ৯টি করে পাইলিং করার কথা থাকলেও পূর্ব পাশে করা হয়েছে ৮টি। আর নির্মাণকাজে ২০ মিলিমিটার রডের পরিবর্তে ১৬ এবং ১৬ মিলি রডের জায়গায় ১২ মিলির রড ব্যবহার করা হচ্ছে। এ ছাড়া অত্যন্ত ধীরগতিতে কাজ চলায় এ বছরও সেতুটির নির্মাণকাজ শেষ না হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

বড়াইগ্রাম পৌরসভার প্রকৌশল বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ২০১৫ সালের জুন মাসে ভরতপুর-লক্ষ্মীকোল এলাকার বড়াল নদের ওপর ৫৮ লাখ ১৯ হাজার ৯৭২ টাকায় ১২ মিটার দীর্ঘ একটি সেতু নির্মাণের দরপত্র আহ্বান করা হয়। সেতুটির কাজ পান বনপাড়া বাজারের ঠিকাদার মিজানুর রহমান। তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোয়াজ্জেম হোসেনকে সঙ্গে নিয়ে কাজটি করার উদ্যোগ নেন। কিন্তু কার্যাদেশ দিতেই সময় চলে যায় দুই বছর। ২০১৭ সালের অক্টোবরে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। এ সময় কার্যাদেশ পাওয়া দুই ঠিকাদার ইউসুফ আলী নামের অপর এক ঠিকাদারকে কাজটি হস্তান্তর করেন। ইউসুফ আলী ২০১৮ সালের শেষের দিকে সেতুটির কাজ শুরু করেন। কিন্তু বর্ষার কারণে নির্ধারিত ১২০ দিনের মধ্যে তিনি কাজ শেষ করতে পারেননি। সেতু নির্মাণের কাজটি চতুর্থ বছরে গড়ায়। এদিকে কাজ শেষ না হওয়ায় এলাকাবাসীকে বর্ষায় বাঁশের সেতু দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করতে হয়। এদিকে কাজের মান নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। অবশেষে ৬ এপ্রিল সকালে ক্ষুব্ধ স্থানীয় লোকজন লাঠিসোঁটা নিয়ে গিয়ে সেতুটির নির্মাণকাজ বন্ধ করে দেন। গত সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত এ কাজ বন্ধ ছিল।

সেতুর নির্মাণকাজের অনিয়ম তুলে ধরে পৌর ছাত্রলীগের সভাপতি মেহেদী হাসান বলেন, সেতুটি নির্মাণে সীমাহীন অনিয়ম-দুর্নীতি হচ্ছে। তাই মানসম্মত কাজের দাবিতে এলাকাবাসী কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন।

দায়িত্বরত ঠিকাদার ইউসুফ আলী জানান, বারবার ঠিকাদার বদল হয়ে সর্বশেষ তাঁকে কাজের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তবে কাগজে–কলমে কাজটি ঠিকাদার মিজানুর রহমানের নামেই আছে। এত দেরি হওয়ার কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, নির্মাণাধীন সেতুর জায়গায় আগে একটা ভাঙা সেতু ছিল। সেটি সরিয়ে নতুন সেতুটি করতে হচ্ছে। তাই কাজ শুরু করতে দেরি হয়েছে। এ ছাড়া বর্ষার কারণেও কাজ এগোয়নি। তিনি জনদুর্ভোগের কথা স্বীকার করে বলেন, ‘স্থানীয় লোকজনের কষ্টের জন্য আমার খারাপ লাগছে। কিন্তু পানির মধ্যে তো তাড়াহুড়ো করে কাজ করা সম্ভব না।’ অনিয়ম দুর্নীতি প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমি কার্যাদেশ মোতাবেক কাজ করছি। অনিয়ম হলে দায়িত্বরত প্রকৌশলী আমাকে ধরবেন। স্থানীয় লোকজন প্রকৌশলীর কাছে কাজ বুঝে না নিয়ে আমার ওপর চড়াও হয়েছেন।’

দায়িত্বরত উপসহকারী প্রকৌশলী ফিরোজ হোসেন বলেন, ‘দীর্ঘ বিলম্বের কারণে স্থানীয় লোকজন ক্ষুব্ধ। আমরা এখন চেষ্টা করছি কাজটি দ্রুত শেষ করার। স্থানীয় লোকজনের যেসব অভিযোগ আছে, আমরা তা আনুষ্ঠানিকভাবে শুনব। এ পর্যন্ত সেতুর অর্ধেকের কিছু কম কাজ হয়েছে।’ নির্মাণকাজে কোনো অনিয়ম হয়নি বলে তিনি দাবি করেন।