বিজিএমইএ ভবন ভাঙার ঠিকাদার ২৫ এপ্রিলে: গণপূর্তমন্ত্রী

গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম
গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম

বিজিএমইএ ভবন ভেঙে ফেলার কার্যাদেশ ২৫ এপ্রিলের পর এক সপ্তাহের ভেতর দেওয়া সম্ভব হবে। হাতিরঝিলে অবস্থিত ১৬ তলা ভবনটি ভাঙতে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে।

আজ বুধবার সচিবালয়ে দপ্তর কক্ষে বিজিএমইএ ভবন ভাঙার সর্বশেষ অবস্থা বিষয়ে এক সংবাদ বিফ্রিংয়ে এসব কথা বলেন গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে মন্ত্রী বলেন, ২৫ এপ্রিলের পর এক সপ্তাহের ভেতরে বিজিএমইএ ভবন ভেঙে ফেলার কার্যাদেশ দেওয়া সম্ভব হবে।

বিজিএমইএ ভবন ভেঙে ফেলার পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে গণপূর্তমন্ত্রী বলেন, ‘ডিনামাইটের আকারে ভবন ভেঙে ফেলার একটি আধুনিক পদ্ধতি আছে, যা কোনোভাবেই ডিনামাইট বোমা মেরে ভবন ভেঙে ফেলার পদ্ধতি নয়। এটা একটা নির্মাণ প্রযুক্তি এবং ভেঙে ফেলার একটা কৌশল।’

গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম বলেন, ‘জাতীয় দৈনিকে বিজ্ঞাপন দিয়ে এ–জাতীয় ইমারত ভাঙায় যারা অভিজ্ঞ তাদের ২৪ এপ্রিলের মধ্যে কোটেশন দাখিল করতে অনুরোধ করা হয়েছে। আমরা আইনগত পদ্ধতি অনুসরণের স্বার্থে বিভিন্ন আগ্রহী প্রতিষ্ঠানের কাছে টেন্ডার আহ্বান করেছি। ২৪ এপ্রিলের মধ্যে টেন্ডার পেয়ে ২৫ এপ্রিলের মধ্যে আমরা সিদ্ধান্ত নেব কোন সংস্থা উপযুক্ত, যাকে দিয়ে ভবন ভাঙা সম্ভব হবে। উপযুক্ত সংস্থা না পাওয়া গেলে আধুনিক নির্মাণ প্রযুক্তির ব্যবহার করে রাজউকের পক্ষ থেকে ভবনটি উচ্ছেদের জন্য যে প্রক্রিয়া দরকার সে প্রক্রিয়ায় আমরা যাব।’

ঝুঁকিপূর্ণ পদ্ধতিতে ভবনটি ভাঙা হবে না মন্তব্য করে গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী বলেন, ‘কোনোভাবেই ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে নয়, আধুনিক নির্মাণ প্রযুক্তির ব্যবহার করেই বিজিএমইএ ভবনটিকে ভেঙে ফেলা হবে। টেন্ডারে অংশগ্রহণকারীরা আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারে উপযুক্ত কি না, সেটা খতিয়ে দেখা হবে। আমরা প্রথমে দেশীয় প্রতিষ্ঠানকে অগ্রাধিকার দিতে চাই। যদি না থাকে, তাহলে আমরা বাইরের প্রযুক্তিসমৃদ্ধ প্রতিষ্ঠান নিয়ে আসব। যারা বাইরে এ–জাতীয় নির্মাণ প্রযুক্তিতে দক্ষ তাদের সঙ্গে কথা হয়েছে। কোনোভাবেই মানুষের জীবন ও মালের ঝুঁকিপূর্ণ পদ্ধতিতে এই ভবন ভাঙা হবে না।’

অতীতে র‌্যাংগস প্লাজা ভাঙতে গিয়ে প্রাণহানি হয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘এবার আমাদের প্রস্তুতি বিজ্ঞানসম্মত, প্রযুক্তিসম্মত। যাতে ভবন ভাঙতে গিয়ে কোনোভাবে প্রাণহানি অথবা কোনো রকম অনাকাঙ্ক্ষিত ক্ষতির মুখোমুখি যেন আমরা না হই, সে প্রস্তুতি নিয়ে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি।’ তিনি বলেন, ‘এই ভবনটি ভাঙার জন্য একটি পরিবেশ তৈরি করা প্রয়োজন। ভবনটি গুঁড়িয়ে দেওয়ার পর আশপাশে যেন কোনো দুর্ঘটনা না হয়, সে জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি অর্থাৎ বিদ্যুতের লাইন অনেক দূর থেকে সরিয়ে দেওয়া, পানি ও গ্যাসের লাইন দূর থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেওয়ার একটা প্রস্তুতির প্রয়োজন আছে।’

মন্ত্রী বলেন, ‘সর্বোচ্চ আদালতের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী অবৈধভাবে নির্মিত বিজিএমইএ ভবন ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের রায়ের আলোকে আমরা সেটাকে ভেঙে ফেলার কার্যক্রম গ্রহণ করেছি। গতকাল (১৬ এপ্রিল) বিজিএমইএ ভবন ভেঙে ফেলার আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম আমরা শুরু করেছি। ইতিমধ্যে ভবনটি আমাদের দখলে নিয়েছি। ভবনে অন্য কারও প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ভবনের সেবামূলক সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে।’

রাজধানীর হাতিরঝিলে বিজিএমইএ ভবন ভাঙতে প্রাথমিক কার্যক্রম শুরু করেছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। তবে পুরো ভবনটি কখন, কীভাবে ভাঙা হবে, এ ব্যাপারে এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। গতকাল মঙ্গলবার সকালে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে বিজিএমইএ ভবনে যান রাজউকের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা।

রাজউকের পরিচালক (প্রশাসন) খন্দকার অলিউর রহমান জানান, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের নিয়ে বিজিএমইএ ভবনে এসেছেন তাঁরা। ভবনটিতে এখনো দু-একটি অফিস রয়েছে। তাদের মালামাল দ্রুত সরিয়ে নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। এরপর বিদ্যুৎ ও গ্যাস-সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার জন্য লোক ডাকা হয়েছে।

এর আগে রাজউক চেয়ারম্যান আবদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, প্রযুক্তির মাধ্যমে পুরো ভবন ভেঙে ফেলা হবে। তবে কবে, কখন এই ভবন ভেঙে ফেলা হবে, সে বিষয়ে রাজউক চেয়ারম্যানও নিশ্চিত করেননি।

২০১১ সালের ৩ এপ্রিল হাইকোর্ট এক রায়ে বিজিএমইএর বর্তমান ভবনটিকে ‘হাতিরঝিল প্রকল্পে একটি ক্যানসারের মতো’ উল্লেখ করে রায় প্রকাশের ৯০ দিনের মধ্যে ভেঙে ফেলতে নির্দেশ দেন। এর বিরুদ্ধে বিজিএমইএ লিভ টু আপিল করে, যা ২০১৬ সালের ২ জুন আপিল বিভাগে খারিজ হয়। রায়ে বলা হয়, ভবনটি নিজ খরচে অবিলম্বে ভাঙতে আবেদনকারীকে (বিজিএমইএ) নির্দেশ দেওয়া যাচ্ছে। এতে ব্যর্থ হলে রায়ের কপি হাতে পাওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে রাজউককে ভবনটি ভেঙে ফেলতে নির্দেশ দেওয়া হলো। পরে ভবন ছাড়তে উচ্চ আদালতের কাছে সময় চায় বিজিএমইএ। প্রথমে ছয় মাস এবং পরে সাত মাস সময়ও পায় তারা। সর্বশেষ গত বছর নতুন করে এক বছর সময় পায় সংগঠনটি। সে সময় তারা মুচলেকা দেয়, ভবিষ্যতে আর সময় চাওয়া হবে না।

কারওয়ান বাজারে বিজিএমইএর বর্তমান ভবনটি দুটি বেসমেন্টসহ ১৬ তলা। বিজিএমইএ ব্যবহার করে চারটি তলা। বাকি জায়গা দুটি ব্যাংকসহ বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করা হয়েছে। তবে আইনি জটিলতার কারণে তাদের মালিকানা বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি। ভবনের ওপরের দুটি তলা নিয়ে বিলাসবহুল ‘অ্যাপারেল ক্লাব’ করা হয়েছে। সেখানে সংগঠনের সদস্যদের জন্য সুইমিং পুল, ব্যায়ামাগার, রেস্তোরাঁ ও সভাকক্ষ রয়েছে। বড় আকারের একটি মিলনায়তনও আছে।