উপাচার্যের ১৫ দিনের ছুটি মঞ্জুর, আন্দোলন থামেনি

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (ভিসি) এস এম ইমামুল হকের ১৫ দিনের ছুটির আবেদনটি মঞ্জুর করেছেন রাষ্ট্রপতি। আজ বুধবার আবেদনটি মঞ্জুর হয় বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন। উপাচার্য এস এম ইমামুল হকের ওই পদে পাঁচ বছরের মেয়াদ পূর্ণ হবে আগামী ২৭ মে।

তবে শিক্ষার্থীরা বলেছেন, এই ছুটি তাঁরা কিছুতেই মানবেন না। তাঁকে পূর্ণমেয়াদে ছুটিতে পাঠাতে হবে, অন্যথায় তাঁকে পদত্যাগ করতে হবে। শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘উপাচার্যের পদত্যাগ অথবা পূর্ণমেয়াদে ছুটিতে যাওয়ার বিষয়ে লিখিত সিদ্ধান্ত হাতে না পাওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। প্রয়োজনে আন্দোলন আরও কঠোর হবে। কিন্তু দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা ক্লাসে ফিরবেন না।’

শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘উপাচার্য শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ১৫ দিনের ছুটির আবেদন করেছিলেন। কিন্তু আমরা তাঁর এই আবেদন প্রত্যাখ্যান করেছি আগেই। এখন ১৫ দিনের ছুটি মঞ্জুর হলেও তা আমরা প্রত্যাখ্যান করছি। আমাদের আন্দোলন চলবে।’

এদিকে উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে শিক্ষার্থীরা এবং ৮ দফা দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির একাংশ আজ পৃথক অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে। এ নিয়ে শিক্ষার্থীরা ২৪ দিন এবং শিক্ষকেরা চতুর্থ দিনের মতো অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন। এতে ২৪ দিন ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম এমনকি পরীক্ষা বন্ধ থাকায় সাধারণ শিক্ষার্থীরা উদ্বেগের মধ্যে রয়েছেন।
শিক্ষক সমিতির আন্দোলনরত নেতারা অবস্থান কর্মসূচি থেকে তাঁদের দাবি পূরণে আজ রাত ১১টা পর্যন্ত সময়সীমা বেঁধে দিয়েছেন। এই সময়ের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাঁদের দাবি না মানলে বৃহস্পতিবার কঠোর আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন তাঁরা।
সাধারণ শিক্ষার্থীরা বলছেন, ২৪ দিন ধরে তাঁদের ক্লাস চলছে না। এমনকি নির্ধারিত পরীক্ষাগুলোও হয়নি। ফলে তাঁরা দীর্ঘ মেয়াদে সেশনজটের কবলে পড়বেন। এতে পাঠে অনাগ্রহ এবং হতাশার সৃষ্টি হচ্ছে, যার নেতিবাচক প্রভাব পড়বে পরীক্ষার ফলাফলে।

আজ দুপুরে খবর বের হয়, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এস এম ইমামুল হককে ছুটিতে পাঠানো হয়েছে।
বিকেলে পৌনে চারটায় এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে উপাচার্য এস এম ইমামুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি ব্যক্তিগত কারণে ১৫ দিনের ছুটি চেয়ে আবেদন করেছিলাম। সেটা মন্ত্রণালয়, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এবং মহামান্য রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ে অনুমোদনের প্রক্রিয়া চলছে। এর বাইরে আমার কাছে কোনো তথ্য নেই। হয়তো সেই ছুটি অনুমোদন হয়েছে।’

এ বিষয়ে জানার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (বিশ্ববিদ্যালয়) মো. আবদুল্লাহ আল হাসানের সঙ্গে মুঠোফোনে বেশ কয়েকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। পরে তাঁকে খুদে বার্তা পাঠানো হলেও তিনি সাড়া দেননি। তবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা পরে প্রথম আলোকে বলেছেন, উপাচার্যের করা ১৫ দিন ছুটির আবেদনটি মঞ্জুর করা হয়েছে।
প্রশাসন সূত্র জানায়, ১০ এপ্রিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে ব্যক্তিগত কারণে ১৫ দিনের ছুটি চেয়ে আবেদন করেন উপাচার্য এস এম ইমামুল হক। উপাচার্যের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার হাসিনুর রহমান এই ছুটির আবেদন করেন।
আজ বুধবার সকালে ১০টায় প্রশাসনিক ভবনের নিচতলায় শিক্ষার্থীরা জড়ো হয়ে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন। এ সময় শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। বেলা ২টা পর্যন্ত তাঁরা এই কর্মসূচি পালন করেন। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের কারণে এ নিয়ে আজ বুধবার পর্যন্ত বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রমে ২৪ দিন ধরে অচলাবস্থা বিরাজ করছে। ক্লাস, পরীক্ষা ও প্রশাসনিক কার্যক্রম সবকিছু বন্ধ রয়েছে।
অপর দিকে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির একাংশের নেতারাও চতুর্থ দিনের মতো বেলা ১১টা থেকে ১টা পর্যন্ত দুই ঘণ্টা অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন। তাঁরা শিক্ষার্থীদের দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়ে এবং ৮ দফা দাবি পূরণের লক্ষ্যে এই কর্মসূচি পালন করছেন সমিতির একাংশের নেতারা। সমিতি সাধারণ সম্পাদক আবু জাফর মিয়া বলেন, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের পদোন্নতির ক্ষেত্রে তিন বছরের নিয়ম সিন্ডিকেটে রহিত করা, জ্যেষ্ঠতার ক্ষেত্রে অস্পষ্টতা, চিকিৎসা-শিক্ষা ছুটিতে অনিয়ম, বিভাগীয় চেয়ারম্যান পদে উপাচার্যের পছন্দের লোকদের নিয়োগসহ নানা অনিয়ম বন্ধের দাবিতে তাঁরা এই আন্দোলন করছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা ৮ দফার যৌক্তিক দাবি আদায়ে দুই ঘণ্টা করে অবস্থান ধর্মঘট পালন করছি। দাবি না মানা হলে আরও কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে।’
এদিকে শিক্ষার্থী এবং পরবর্তী সময়ে শিক্ষকদের একাংশের আন্দোলনের ফলে ২৪ দিন ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস, পরীক্ষা এবং প্রশাসনিক সব কর্মকাণ্ড স্থবির হয়ে পড়েছে।

গত ২৬ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে উপাচার্য আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ‘রাজাকারের বাচ্চা’ বলে মন্তব্য করলে ২৭ মার্চ থেকে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করেন শিক্ষার্থীরা। ২৮ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ও শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের নির্দেশ দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ২৯ মার্চ উপাচার্য তাঁর মন্তব্যের জন্য দুঃখ প্রকাশ করে বিজ্ঞপ্তি দেন। তবে তা প্রত্যাখ্যান করে তাঁর পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত রাখেন শিক্ষার্থীরা। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ৬ এপ্রিল রাজনৈতিক নেতা, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি সমঝোতা বৈঠক হলেও তা সফল হয়নি।