'দুইটা টাকা দেন, ক্লাসরুম কিনব'

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান অনুষদের চারতলা। করিডরে ২০ থেকে ২৫ জন শিক্ষার্থী দাঁড়িয়ে আছেন। ভবনে ওঠার সিঁড়ির মুখে তিনজন ছাত্রী বসা। তাঁদের সামনে করিডরের মেঝেতে বিছানো একটা ছোট প্ল্যাকার্ড। হাতে লেখা প্লাকার্ডটিতে বলা আছে, ‘দুইটা টাকা দেন, ক্লাসরুম কিনব’। প্ল্যাকার্ডের ওপর এক ও দুই টাকার কয়েকটা কয়েন ও নোট ছড়ানো।

বুধবার দুপুরে শ্রেণিকক্ষ সংকটের কারণে ক্লাস করতে না পেরে অভিনব এ প্রতিবাদ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের তৃতীয় বর্ষের (৪৬তম ব্যাচ) শিক্ষার্থীরা। নির্ধারিত শ্রেণিকক্ষে একই বিভাগের স্নাতকোত্তর (৪৩তম ব্যাচ) শ্রেণির শিক্ষার্থীরা ক্লাস করায় নির্ধারিত সময়ে ক্লাস করতে না পেরে তাঁরা এ প্রতিবাদ করেন।

শিক্ষার্থীরা বলছেন, প্রতিষ্ঠার আট বছর পেরিয়ে গেলেও আইন ও বিচার বিভাগ নিজস্ব শ্রেণিকক্ষ পায়নি। কোনো ধরনের অবকাঠামোগত সুবিধাও নেই। প্রতিষ্ঠার পর থেকে সমাজবিজ্ঞান অনুষদের অর্থনীতি বিভাগের একটি এবং ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের একটি শ্রেণিকক্ষে পাঠদান কার্যক্রম পরিচালনা করা হতো। পরে জহির রায়হান মিলনায়তনের দোতলায় ‍দুইটি শ্রেণিকক্ষ পান তাঁরা। গত বছরের ১০ জুলাই ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগ নিজেদের শ্রেণিকক্ষ নিয়ে নিয়েছে। এতে ভোগান্তি বেড়েছে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের।

রেজিস্ট্রার কার্যালয় সূত্র জানায়, ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষে তৎকালীন উপাচার্য শরীফ এনামুল কবিরের সময় বিশ্ববিদ্যালয়ে ছয়টি বিভাগ চালু হয়। এর মধ্যে আইন ও বিচার বিভাগ ছাড়া বাকি পাঁচটি বিভাগ নিজস্ব শ্রেণিকক্ষ পেয়েছে। কিন্তু, আইন ও বিচার বিভাগের চার শতাধিক শিক্ষার্থী ধার করা শ্রেণিকক্ষে ক্লাস করেন। বিভাগের আটজন শিক্ষক সমাজবিজ্ঞান অনুষদের চতুর্থ তলায় দুইটি কক্ষে ভাগাভাগি করে দাপ্তরিক কার্যক্রম চালান।
বিভাগের ৪৩তম ব্যাচের শিক্ষার্থী খান মুনতাসির আরমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘শ্রেণিকক্ষ না থাকায় শিক্ষার্থীরা ক্লাস করতে হয়রানির শিকার হচ্ছেন। নিয়মিত ক্লাস হয় না। ফলে বিভাগের শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। এতে সেশনজটে পড়ছি আমরা।’
আইন ও বিচার বিভাগের সভাপতি কে এম সাজ্জাদ মহাসীন বলেন, ‘আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে বারবার বলেছি, এমনকি যখনই যেখানে বলার সুযোগ পেয়েছি প্রশাসনের কাছে আমাদের সমস্যা তুলে ধরেছি। গত আট বছরে গণমাধ্যমে বহু লেখালেখি হয়েছে। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। প্রায়ই ভোগান্তিতে পড়তে হয়। নিজস্ব শ্রেণিকক্ষ থাকলে আমরা হয়তো আরও ভালো করতে পারতাম।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক আমির হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকতর উন্নয়নের জন্য ১ হাজার ৪৪৫ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে সরকার। সেই প্রকল্পে আইন বিভাগের জন্যও বরাদ্দ আছে। প্রকল্পের কাজ শুরু হলে তাঁদের সংকট সমাধান হবে।’