জলকেলিতে সিক্ত রাখাইন তরুণ-তরুণীরা

কক্সবাজারের রাখাইনপল্লিতে আজ থেকে শুরু হয়েছে ‘জলকেলি’ কিংবা ‘পানিখেলা’। ছবি: প্রথম আলো
কক্সবাজারের রাখাইনপল্লিতে আজ থেকে শুরু হয়েছে ‘জলকেলি’ কিংবা ‘পানিখেলা’। ছবি: প্রথম আলো

বেলা আড়াইটা। কক্সবাজার শহরের বৌদ্ধমন্দির সড়কের একটি মণ্ডপে শত শত তরুণ-তরুণীর সমাবেশ। ঠাঠা রোদ্দুর পুড়িয়ে দিচ্ছে গা। এ সময় গায়ে শীতল জলের স্পর্শ নিঃসন্দেহে শ্রান্তিদায়ক। এসব তরুণ-তরুণীও বসে নেই। পরস্পরের দিকে ছুড়ে দিচ্ছেন জল। গরম থেকে বাঁচা কিন্তু তাঁদের একমাত্র উদ্দেশ্য না। তাঁরা মেতেছেন উৎসবে। রাখাইন তরুণ-তরুণীদের আনন্দফুর্তির উৎসব ‘সাংগ্রাংপোয়ে’। 

সাংগ্রাং রাখাইন সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় সামাজিক উৎসব। প্রতিবছর বাংলা নববর্ষের তিন দিন পর অর্থাৎ ১৭ এপ্রিল থেকে শুরু হয় রাখাইন অব্দের নতুন বছর। নতুন বছরকে বরণ এবং পুরোনো বছরকে বিদায় জানাতে এ সম্প্রদায়ের মানুষ জলকেলি উৎসবে মেতে ওঠেন। কক্সবাজারের রাখাইনপল্লিতে আজ বুধবার শুরু হয়েছে ‘জলকেলি’ কিংবা ‘পানিখেলা’।
রাখাইন সম্প্রদায়ের নেতা ও কক্সবাজার সিটি কলেজের অধ্যক্ষ ক্যাথিং অং প্রথম আলোকে বলেন, ১৬ এপ্রিল রাত ১২টায় রাখাইন অব্দ ১৩৮০ বিদায় হয়েছে। নতুন অব্দ ১৩৮১-কে সানন্দে বরণ করতেই জলকেলি উৎসবের আয়োজন। এবারও জেলার বিভিন্ন স্থানে অন্তত ৪০টি মণ্ডপে জলকেলি উৎসব চলছে।

রাখাইন তরুণ-তরুণী জ জ, মং মউ, ওয়াশে, ওয়ান ওয়ান, মং মং জলখেলায় ব্যস্ত। এর মধ্যেই তাঁরা যা বললেন তার সারকথা হলো, জলকেলির জন্য তাঁরা সারা বছর ধরে অপেক্ষায় থাকেন। পবিত্র জল ছুড়ে শরীর ভিজিয়ে দেওয়াতে আনন্দ বেশি। এ উদ্দেশ্যে অতীতের সব ব্যথা-বেদনা, গ্লানি ভুলে গিয়ে ভ্রাতৃত্ববোধের মাধ্যমে ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাওয়া।

‘সাংগ্রাংপোয়ে’ উপলক্ষে রাখাইন তরুণীদের শোভাযাত্রা। ছবি: প্রথম আলো
‘সাংগ্রাংপোয়ে’ উপলক্ষে রাখাইন তরুণীদের শোভাযাত্রা। ছবি: প্রথম আলো

আজ শহরের টেকপাড়া, বৌদ্ধমন্দির সড়ক, ক্যাংপাড়া, বৈদ্যঘোনা, বড়বাজার, চাউলবাজার, হাঙরপাড়া ছাড়াও মহেশখালী, টেকনাফ, চৌফলদণ্ডি, খুরুশকুল, হ্নীলা, চৌধুরীপাড়া, রামু, পানিরছড়া, চকরিয়ার হারবাং, মানিকপুরসহ রাখাইন-অধ্যুষিত বিভিন্ন পল্লিতে জলকেলি উৎসবে মেতেছেন তরুণ-তরুণীরা। রঙিন ফুল আর নানা কারুকার্যে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে মণ্ডপের চারপাশ। প্রতিটি বাড়ি সাজানো হয় নতুন সাজে। উৎসব উপলক্ষে রাখাইন সম্প্রদায়ের লোকজন নতুন পোশাকে সজ্জিত থাকেন।
রাখাইন শিক্ষার্থী মায়েনু রাখাইন বলছিলেন, ‘আদিকাল থেকে সামাজিকভাবে সাংগ্রাং পোয়ে উৎসব পালন হয়ে আসছে। এবারও ব্যতিক্রম ঘটবে না। আনন্দ-উল্লাসে নতুন বছরকে বরণ করে নেব আমরা।’
রাখাইন বুড্ডিস্ট ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মং চেন হ্লা বলেন, ‘সাংগ্রাং উৎসব রাখাইন সম্প্রদায়ের বড় সামাজিক উৎসব। জেলার বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা অন্তত ৫০ হাজার রাখাইন এই উৎসবে যোগ দিয়েছে। আগামী শুক্রবার সন্ধ্যায় জলকেলি শেষ হবে।’
১৩ এপ্রিল বুদ্ধ স্নানের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে উৎসবের আনুষ্ঠানিকতা। ওই দিন সকাল ৯টায় শহরের বার্মিজ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ থেকে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করে রাখাইন শিক্ষার্থীরা। এরপর কেন্দ্রীয় অগ্গমেধাস্থ মাহাসিংদোগ্রী মন্দিরে গিয়ে শিক্ষার্থীরা বৌদ্ধ ভিক্ষুদের দান করেন নগদ টাকা, চাল, চিনি, দুধ, কলা, নারকেল, মোমবাতি, সাবান, দেশলাইসহ নানা পণ্য। এর পরের কয়েক দিন চলে বৌদ্ধস্নান, পঞ্চশীল ও অষ্টশীল গ্রহণ।