তিস্তা চুক্তিটি অমীমাংসিতই রয়ে গেল

রংপুরের কাউনিয়ার তিস্তা নদীর সড়ক সেতুর পূর্ব প্রান্তে।  ফাইল ছবি
রংপুরের কাউনিয়ার তিস্তা নদীর সড়ক সেতুর পূর্ব প্রান্তে। ফাইল ছবি
>
  • হাসিনা-মোদি বৈঠকের দুই বছর
  • তিস্তা নিয়ে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন মোদি
  • মোদি তাঁর প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেননি
  • খুব শিগগির চুক্তিটি হচ্ছে না

অতীতের যেকোনো মাত্রাকে ছাড়িয়ে প্রতিরক্ষা, মহাকাশসহ নানা ক্ষেত্রে বিস্তৃত হয়েছে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সহযোগিতা। দুই কাছের প্রতিবেশীর সহযোগিতা গভীরতর হওয়ার এই সময়কালে তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তিটি অমীমাংসিতই রয়ে গেল।

দুই বছর আগে দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পাশে রেখেই ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দুই সরকারের মেয়াদকালে তিস্তা চুক্তি স্বাক্ষরের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। নিজের মেয়াদকালে সে প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে পারলেন না তিনি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা গত মাসের শেষ সপ্তাহে প্রথম আলোকে বলেন, ২০১৭ সালের এপ্রিলে দিল্লি শীর্ষ বৈঠকে তিস্তা সই না হওয়াটা তাঁদের হতাশ করেছে। বিশেষ করে ওই সময় ভারত তিস্তা সইয়ের জন্য কোনো সময়সীমা না দেওয়ায় এটা নিশ্চিত হয়ে যায়, খুব শিগগির চুক্তিটি হচ্ছে না।

বাংলাদেশ বিষয়টি আলোচনায় তুলেছে কি না জানতে চাইলে ঢাকা ও দিল্লিতে কর্মরত বাংলাদেশের কূটনীতিকেরা এই প্রতিবেদককে বলেন, গত দুই বছরে যখনই সুযোগ হয়েছে, তখনই তা আলোচনায় তুলেছে বাংলাদেশ। কিন্তু অভ্যন্তরীণ প্রক্রিয়া শেষ করে সব পক্ষকে নিয়েই চুক্তি সইয়ের নীতি অনুসরণের কথা বলেছে ভারত।

হাসিনা-মোদি শীর্ষ বৈঠকের সিদ্ধান্তের বাস্তবায়ন বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্রসচিব মো. শহীদুল হক গত শুক্রবার প্রথম আলোকে জানান, দুই প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকের সিদ্ধান্তের কোথায় কী পরিস্থিতি তা নিয়ে ১৬ এপ্রিল দিল্লিতে ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিজয় গোখেলের সঙ্গে আলোচনার কথা রয়েছে।

তিস্তা চুক্তি নিয়ে অগ্রগতি না হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে শহীদুল হক বলেন, ভারতের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে, নিজেদের অভ্যন্তরীণ প্রক্রিয়া শেষ করে চুক্তিটি সই হবে। এ বিষয়ে ভারতের প্রতিশ্রুতিতে ভরসা রাখতে চায় বাংলাদেশ।

পানিসম্পদ
২০১৫ সালের জুনে নরেন্দ্র মোদি ঢাকায় এসে তিস্তা চুক্তি সইয়ের জন্য সময় চেয়েছিলেন। প্রায় দুই বছর পর ২০১৭ সালের এপ্রিলে দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকের পর নরেন্দ্র মোদি এই মেয়াদকালেই চুক্তি সইয়ের প্রতিশ্রুতি দেন। তবে গত দুই বছরে এ নিয়ে আলোচনায় কোনো অগ্রগতি নেই। ২০১৭ সালের এপ্রিলে দিল্লি শীর্ষ বৈঠকের পর তাঁরা ২০১৮ সালের মে মাসে কলকাতায় শান্তিনিকেতনে বৈঠক করেছিলেন। সেখানে তিস্তা নিয়ে কার্যকর আলোচনা হয়নি। দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা এ সময়কালে অন্তত দুবার ঢাকা ও দিল্লিতে বৈঠক করলেও আশার বাণী শোনাতে পারেননি। তাই তিস্তা নিয়ে অগ্রগতি না থাকায় অভিন্ন অন্য নদী নিয়েও তেমন আলোচনা নেই।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশের কূটনীতিকেরা বলছেন, ভারত সব সময় তাদের কেন্দ্রীয় সরকার পরিচালনা প্রক্রিয়ায় রাজ্য সরকারকে সঙ্গে নিয়ে সিদ্ধান্তের বিষয়টিই বলে আসছে। এর সঙ্গে যে অভ্যন্তরীণ রাজনীতি যুক্ত, সেটা বলাই বাহুল্য। এরপর দেশটি এখন হয়ে গেছে নির্বাচনমুখী। এ অবস্থায় খুব শিগগির যে তিস্তা নিয়ে কোনো সুখবর পাওয়া যাবে না, তা মোটামুটি নিশ্চিত।

বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের মূল্যায়ন করতে গিয়ে সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুয়ামূন কবীর গত সোমবার প্রথম আলোকে বলেন, দুই নিকট-প্রতিবেশীর সম্পর্কে বেশ কয়েক বছর ধরে বিস্তৃতি ও গভীরতা দুটাই ঘটেছে। বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য ভিসা সহজ হওয়ায় লোকজনের যাতায়াত বেড়েছে। ভিসা সহজীকরণের বিষয়টি দৃশ্যমান হওয়ায় সম্পর্কের মাত্রা ধরাটা মানুষের জন্য সহজ হয়েছে। তেমনি অন্য বিষয়গুলোতে সাবলীলতা এলে সম্পর্ক টেকসই করার কাজটা আরও গভীর হতে পারত।

এম হুয়ামূন কবীরের মতে, দুই দেশের জন্য অভিন্ন নদীর পানি গুরুত্বপূর্ণ। তা ছাড়া এ বিষয়ে বাংলাদেশ মনোযোগ দিতে পারেনি। হুমায়ূন কবীর বলেন, পানির ব্যাপারে এখন থেকেই উদ্যোগ না নিলে ভবিষ্যতে চাপ বাড়বে। সম্পর্ক নিবিড় হওয়ার পরও বাংলাদেশের গুরুত্বের বিষয়টি সুরাহা না হলে লোকজনের মধ্যে প্রশ্ন দেখা দেবে। সম্পর্কের ভবিষ্যৎমুখীনতার কথা বিবেচনায় নিয়েই এ বিষয়ে মনোযোগী হওয়া দরকার।