পুরোনো সমস্যার আবর্তে

ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের নবগঠিত বিভিন্ন ওয়ার্ডের সড়কগুলো কর্দমাক্ত হয়ে আছে। সম্প্রতি ময়মনসিংহের শম্ভুগঞ্জ মেছুয়া বাজারে।  ছবি: প্রথম আলো
ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের নবগঠিত বিভিন্ন ওয়ার্ডের সড়কগুলো কর্দমাক্ত হয়ে আছে। সম্প্রতি ময়মনসিংহের শম্ভুগঞ্জ মেছুয়া বাজারে। ছবি: প্রথম আলো

অপ্রশস্ত সড়কে যানজট, নগরের বিভিন্ন জায়গায় ময়লার স্তূপ, মাদক—এগুলো ময়মনসিংহ শহরের মূল সমস্যা। অন্যদিকে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে সদ্য সিটি করপোরেশনের অংশ হওয়া ওয়ার্ডগুলোর বেশির ভাগ জায়গায় এখনো নাগরিক সুবিধা নেই। তবে সাধারণ মানুষের আশা, ভোটের পর তাঁদের এলাকার উন্নয়ন হবে।

নগরের বিভিন্ন জায়গা ঘুরে এবং বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে এই চিত্র পাওয়া গেছে। এলাকার মানুষ বলছেন, ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন নতুন হলেও এসব সমস্যার কোনোটিই নতুন নয়। বহু পুরোনো এসব সমস্যার আবর্তে ঘুরপাক খাচ্ছে ময়মনসিংহ শহর।

নগরের বিভিন্ন সড়কে জমে থাকা আবর্জনা নিয়মিত অপসারণ করা হয় না। সড়কের পাশে ও ডাস্টবিনে দিনের বেলায়ও গৃহস্থালির আবর্জনার স্তূপ পড়ে থাকে। ছড়ায় দুর্গন্ধ। বিশেষ করে নগরের পুরাতন ফুলবাড়িয়া বাসস্ট্যান্ড ও পুরোহিতপাড়ায় এই প্রবণতা বেশি।

এ ছাড়া শহরতলির চরকালিবাড়ি এলাকায় ময়মনসিংহ-শম্ভুগঞ্জ মহাসড়কের পাশে ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের ভাগাড়টি নিয়ে মানুষকে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। ওই ভাগাড়ের আবর্জনা মহাসড়কে ছড়িয়ে থাকে।

নগরের নতুন বাজার, গাঙ্গিনারপার, চরপাড়াসহ গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোতে নিত্যদিনের সঙ্গী যানজট। অপ্রশস্ত রাস্তা, সড়কের ফুটপাত দখল হয়ে যাওয়া, অনিয়ন্ত্রিত ইজিবাইক (ব্যাটারিচালিত রিকশা) ও বিভিন্ন রাস্তায় নির্মাণসামগ্রী ফেলে রাখা যানজটের মূল কারণ। এই ইজিবাইক ও রিকশা শহরের মূল বাহন। শহরের ভেতর বাসের মতো কোনো গণপরিবহন নেই। নগরের ব্যস্ততম এলাকা গাঙ্গিনারপার, নতুন বাজার ও চরপাড়া এলাকায় গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোর ফুটপাত সারা বছর হকারদের দখলে থাকে। সিটি করপোরেশন মাঝেমধ্যে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ফুটপাত দখলমুক্ত করলেও কিছুদিনের মধ্যে আবার তা দখল হয়ে যায়।

ব্রহ্মপুত্র নদের তীর ঘেঁষে ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন। তবু বৃষ্টি হলে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। জলজট যানজটকে আরও তীব্র করে। এতে ভোগান্তি বাড়ে সাধারণ মানুষের। নগরের কয়েকটি খাল ভরাট হয়ে যাওয়ায় এ সমস্যার সৃষ্টি হয় বলে সিটি করপোরেশনের দাবি। সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে একটি প্রকল্পের মাধ্যমে খালগুলো খনন করার কাজ চলছে।

স্থানীয়রা বলছেন, ময়মনসিংহের আরেক সমস্যার নাম মাদক। সাম্প্রতিক সময়ে পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ ময়মনসিংহের কয়েকজন চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী নিহত হলেও মাদক ব্যবসা থেমে নেই। নগরের বিভিন্ন এলাকা, বিশেষত শহরতলিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে মাদকের ব্যবসা চলে।

শহরে এখন নতুন নতুন বহুতল ভবন উঠছে। স্থানীয় অনেকের আশঙ্কা, নিয়ম মেনে বহুতল ভবন করা না হলে নতুন সমস্যা হয়ে দাঁড়াবে এসব বহুতল ভবন। ফায়ার সার্ভিস সূত্র জানায়, এসব ভবনের অনেকগুলো নিয়ম মেনে করা হয়নি। অগ্নিনির্বাপণব্যবস্থাও যথাযথভাবে রাখা হয়নি। ফায়ার সার্ভিস বহুতল ভবনগুলোর অগ্নিনির্বাপণব্যবস্থা ও ঝুঁকি নিয়ে জরিপ শুরু করেছে। এখনো কাজ শেষ হয়নি। তবে অনেকগুলো ভবনকেই তারা ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে।

ময়মনসিংহ নাগরিক আন্দোলনের সভাপতি আনিসুর রহমান খান প্রথম আলোকে বলেন, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বিল্ডিং কোড মেনে ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে না। তাঁরা চান নতুন যিনিই মেয়র হবেন, শক্ত হাতে যেন বিল্ডিং কোড কার্যকর করার উদ্যোগ নেন। এ ছাড়া অবৈধ দখল, মাদক, বর্ষায় জলাবদ্ধতা—এসব নানা সমস্যা রয়েছে নগরে। তাঁরা চান নতুন সিটি করপোরেশনের রাস্তাগুলো মানসম্মত হবে, মাদকমুক্ত ও দুর্নীতিমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠিত হবে।

সিটি করপোরেশন গঠিত হওয়ার আগে ২১টি ওয়ার্ড নিয়ে ছিল ময়মনসিংহ পৌরসভা। আরও ১২টি ওয়ার্ড গঠন করে মোট ৩৩টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত হয়েছে ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন। গত ২৮ জানুয়ারি ৩৩টি সাধারণ ওয়ার্ড ও ১১টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডের সীমানা নির্ধারণ করে গেজেট প্রকাশ করা হয়। নতুন ওয়ার্ডগুলোর বেশির ভাগ জায়গায় এখনো নগরের ছোঁয়া লাগেনি।

বিনা ভোটে ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের প্রথম মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী ইকরামুল হক। এর আগে তিনি ময়মনসিংহ পৌরসভার মেয়র ও সিটি করপোরেশনের প্রশাসকের দায়িত্বে ছিলেন। নগরের এসব সমস্যার কথা ইকরামুল হক নিজেও স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, রাত্রিকালীন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা আরও উন্নত করা হচ্ছে। বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যে একটি সমঝোতা স্মারক হয়েছে। যানজট নিরসনে অনেকগুলো রাস্তা প্রশস্ত করা হয়েছে। জলজট নিরসনে ড্রেনেজব্যবস্থা উন্নত করা হয়েছে। মাদক নির্মূল করার জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কাজ করছে। তিনি মেয়র নির্বাচিত হলে এই উদ্যোগগুলো আরও এগিয়ে নেবেন।