ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সংস্কৃতির বিকাশে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি দরকার

বাংলাদেশের বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর বৈচিত্র্যপূর্ণ সংস্কৃতি এ দেশের অমূল্য সম্পদ। সাংস্কৃতিক নানা উপাদান এসব জাতিগোষ্ঠীর সক্ষমতার বহিঃপ্রকাশ। জাতীয় উন্নয়নের জন্যই ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সংস্কৃতির বিকাশে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি দরকার। দেশের সংখ্যাগুরু বা কেন্দ্রের মানুষের উচিত প্রান্তের বা সংখ্যায় কম মানুষের সংস্কৃতির বিকাশে এগিয়ে আসা। 

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের (বিআইআইএসএস) আয়োজনে এক সেমিনারে এসব কথা বলেন আলোচকেরা। রাজধানীর ইস্কাটনে বিআইআইএসএস অডিটোরিয়ামে আজ বৃহস্পতিবার সেমিনারটি অনুষ্ঠিত হয়।

‘জাতীয় সংস্কৃতি বিকাশে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সম্প্রদায়ের ঐতিহ্য সংরক্ষণের গুরুত্ব ও প্রতিবন্ধকতা’ শীর্ষক সেমিনারে মূল প্রবন্ধ পড়েন বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের বঙ্গবন্ধু চেয়ার অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, কেন্দ্র ও প্রান্তের মধ্যে বিভাজন থাকাটা কাম্য নয়। এ সম্পর্ক ভারসাম্যপূর্ণ না হলে রাষ্ট্রগঠনের প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয়। এ ক্ষেত্রে প্রান্তের চেয়ে কেন্দ্রের দায়িত্ব বেশি।

অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বলেন, প্রান্তের মানুষের পরিস্থিতি ও পরিবেশ বৈরী হলে সংস্কৃতি বিপন্ন হতে পারে। গরিষ্ঠের গণতন্ত্র হলে হবে না, বহুজনের গণতন্ত্র হতে হবে। এখানে বহুজনের গণতন্ত্র হচ্ছে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন থাকতে পারে।

সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বলেন, ভাষা যদি না থাকে, তবে সংস্কৃতি বিলুপ্ত হবে। বাংলাদেশের অনেক ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ভাষা হারিয়ে গেছে। লুপ্ত এসব ভাষা সংরক্ষণে চেষ্টা যেমন দরকার, তেমনি দরকার এখন যেসব ভাষা আছে, সেগুলোর সঠিক লালন।

অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বলেন, বাংলাদেশে কোনো ভাষানীতি নেই। এটি অত্যন্ত দুঃখজনক। ভাষার উন্নয়ন ও বিকাশে একটি ভাষানীতি অপরিহার্য।

ক্ষুদ্র সংস্কৃতির বিকাশে সাম্প্রদায়িকতা ও ধর্মান্ধতাকে বড় অন্তরায় বলেন মনে করেন অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, সাম্প্রদায়িকতা ও ধর্মান্ধতা মানবিক সংস্কৃতি বিকাশের অন্তরায়। বাংলাদেশে এসব গোষ্ঠী তৎপর। পয়লা বৈশাখের মঙ্গল শোভাযাত্রা এসব গোষ্ঠীর ফতোয়াবাজির শিকার হয়েছে।

সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। তিনি বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক উন্নয়নে সরকারের নেওয়া নানা কর্মসূচি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, দেশে স্বীকৃত ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সংখ্যা ৫০টি। সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান আইন সংশোধন করে ২৭ থেকে ৫০টি গোষ্ঠীকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে।

ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সংস্কৃতি বিকাশে বিদেশে পাঠানো সাংস্কৃতিক দলে এসব জাতিগোষ্ঠীর আরও বেশি প্রতিনিধি নেওয়া হবে বলে প্রতিশ্রুতি দেন প্রতিমন্ত্রী।

সেমিনারের সভাপতিত্ব করেন বিআইআইএসএসের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল এ কে এম আবদুর রহমান। তিনি বলেন, অসাম্প্রদায়িক সংস্কৃতির উপাদান মানুষে মানুষে বিভাজন রুখতে পারে। তাই এর সম্প্রসারণ দরকার।

বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মানুষ সম্পর্কে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ভ্রান্ত ধারণা আছে বলে মনে করেন রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রদানেন্দু বিকাশ চাকমা। তিনি বলেন, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সংস্কৃতি ভুলভাবে উপস্থাপিত হয়। অনেক সময় তাদের খাদ্যাভ্যাস, পোশাক-আশাক নিয়ে নেতিবাচক চিত্র তুলে ধরার প্রবণতা লক্ষ করা যায়। তিনি বলেন, পাহাড়ের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি প্রত্যাশিত না।

সেনাবাহিনীর বান্দরবানের রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল খন্দকার মো. শাহিদুল এমরান বলেন, প্রযুক্তির অপব্যবহার, পাহাড়ি আঞ্চলিক দলগুলোর অপতৎপরতা ও সংঘাত ইত্যাদি পাহাড়ের বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর সংস্কৃতি বিকাশে বিঘ্ন সৃষ্টি করছে।

সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান নব বিক্রম কিশোর ত্রিপুরা, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব মো. মেসবাহুল ইসলাম।