নকশাবহির্ভূতভাবে নির্মিত ভবনে লাল ব্যানার

অনুমোদিত নকশাবহির্ভূতভাবে নির্মিত ভবনের গায়ে সতর্কতা–সংবলিত লাল পোস্টার টানিয়ে দিয়েছে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন। গত মঙ্গলবার নগরের বাগিচাগাঁও ফায়ার সার্ভিস সড়কে।  ছবি: প্রথম আলো
অনুমোদিত নকশাবহির্ভূতভাবে নির্মিত ভবনের গায়ে সতর্কতা–সংবলিত লাল পোস্টার টানিয়ে দিয়েছে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন। গত মঙ্গলবার নগরের বাগিচাগাঁও ফায়ার সার্ভিস সড়কে। ছবি: প্রথম আলো

এই ভবন অনুমোদিত নকশাবহির্ভূতভাবে নির্মিত। জনসাধারণকে সতর্ক থাকার জন্য অনুরোধ করা হলো। অনুরোধক্রমে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন।
সাদা অক্ষরে লেখা লাল রঙের এমন ব্যানার ঝুলছে কুমিল্লা নগরের ৯টি ভবনে। সিটি করপোরেশন জানিয়েছে, এ রকম সতর্কতা–সংবলিত ১০০টি ব্যানার তৈরি করেছে করপোরেশন। আরও অন্তত ২১টি ভবনে শিগগিরই এ ব্যানার লাগানো হবে। একই সঙ্গে ঝুঁকিপূর্ণ এই ৩৭টি ভবনের মালিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেও করপোরেশন।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) ও সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) জেলা শাখা সিটি করপোরেশনের এমন সিদ্ধান্তের পুরোপুরি বাস্তবায়ন দেখতে চায়।
জানতে চাইলে সুজনের জেলা সাধারণ সম্পাদক আলী আকবর বলেন, ‘মেয়রের ঘোষণার পুরোপুরি বাস্তবায়ন দেখতে চাই। কুমিল্লা শহরকে বাসযোগ্য করতে হলে নকশা অনুযায়ী ভবন করতে হবে। যাঁরা শর্ত ভঙ্গ করে ভবন করেছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে। ব্যানার টানিয়ে দায়িত্ব শেষ করা যাবে না।’

নগর ভবন সূত্রে জানা গেছে, কুমিল্লা সিটি করপোরেশন এলাকায় অনুমোদনবিহীন ও নকশাবহির্ভূত ভবনের বিরুদ্ধে অভিযানে নেমেছেন মেয়র মো. মনিরুল হক। তিনি ৪ এপ্রিল সকাল ১০টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত নগরের কান্দিরপাড়, নজরুল অ্যাভিনিউ, দমকল পুকুরপাড় ও ঠাকুরপাড়া মদিনা মসজিদ এলাকায় অভিযান চালান। এ সময় ওই ৯টি ভবন নকশাবহির্ভূত বলে শনাক্ত করা হয়। এরপর ভবনগুলোয় সতর্কতামূলক ব্যানার টানানো হলো। একই সঙ্গে নির্মাণাধীন কয়েকটি ভবনের কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়। এসব ভবনের মালিকদের আগামী রোববারের মধ্যে সিটি করপোরেশনে কাগজপত্র নিয়ে যেতে বলা হয়েছে। এখন থেকে সপ্তাহে এক দিন করে এ ধরনের অভিযান চলবে।
তবে সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা অনুপম বড়ুয়া বলেন, ‘৪ এপ্রিল ঘোষণা দেওয়া হয়, সপ্তাহে অন্তত এক দিন নকশাবহির্ভূত ও ঝুঁকিপূর্ণ ভবন শনাক্ত করে অভিযান চালানো হবে। নানা কারণে সেটি করা হয়নি। মেয়র মহোদয় সময় দিলে সেটি করা হবে। আমরা মেয়রের নেতৃত্বে এ অভিযান করে থাকি।’

গত মঙ্গলবার সকালে নগরের পশ্চিম বাগিচাগাঁও দমকল পুকুরপাড় এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সড়কের লাগোয়া একটি ভবনের নির্মাণকাজ চলছে। ইতিমধ্যে ভবনটির ছয়তলা পর্যন্ত উঠেছে। নকশাবহির্ভূত হওয়ার কারণে এ ভবনের কাজ বন্ধ করে দিয়ে ব্যানার টানানো হয়েছে। কান্দিরপাড় মৃণালিনী দত্ত ছাত্রীনিবাসের বিপরীত পাশে নির্মিত একটি ভবনেও এ ব্যানার টানানো দেখা যায়।

জানতে চাইলে কয়েকটি ভবনের মালিক বলেন, ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে সিটি করপোরেশন ভবনের নকশার অনুমোদন দেওয়া বন্ধ করেছে। এ কারণে তাঁরা নিজেদের মতো কাজ করেছেন।
নগর ভবনের প্রকৌশলী, জরিপকারী, কানুনগো ও পরিকল্পনাবিদদের কয়েকজন জানান, কুমিল্লা সিটি করপোরেশনে গত ১০ বছরে চার শ থেকে সাড়ে চার শ বহুতল ভবন হয়েছে। এগুলোর বেশির ভাগই নকশাবহির্ভূত। এসব ভবনের মালিকেরা কেউ ৬ তলার অনুমোদন নিয়ে ৯ তলা পর্যন্ত করেছেন। কেউ সড়কের দিকে চাপিয়ে ভবন করেছেন। নগর ভবনে জমা দেওয়া নকশার সঙ্গে নির্মাণাধীন ভবনের নকশার মিল নেই।

এসব বিষয়ে বাপার জেলা সভাপতি মোসলেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, কুমিল্লা আবাসিক নগর। এখানে স্বল্প পরিসরের জায়গায় উঁচু ভবন নির্মাণ করা হয়েছে ও হচ্ছে। একটি ভবনে ঘিঞ্জিভাবে এত মানুষ বসবাস করতে পারে না। কোনো নিয়ম না মেনে এখানে ভবন হচ্ছে। এটা ঠেকাতে হবে। ছাড় দেওয়া ঠিক হবে না। পরিবেশ ও মানব বিপর্যয় ঠেকাতে কর্তৃপক্ষকে আরও কঠোর হতে হবে।
জানতে চাইলে মেয়র মো. মনিরুল হক বলেন, ‘অন্যান্য কাজের চাপের কারণে নিয়মিত অভিযান চালানো হয়নি। তবে শিগগিরই অভিযান হবে। আমরা কাউকে ছাড় দেব না।’