বিরাট রাজার প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন হারিয়ে যাচ্ছে

রক্ষণাবেক্ষণ না করায় গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার রাজাহার ইউনিয়নে বিরাট রাজার প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে।  ছবি: প্রথম আলো
রক্ষণাবেক্ষণ না করায় গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার রাজাহার ইউনিয়নে বিরাট রাজার প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। ছবি: প্রথম আলো

গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার রাজাহার ইউনিয়নের বিরাট রাজার প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের জায়গা বেদখল হয়ে যাচ্ছে। সেখানে অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে ঘরবাড়ি-দোকানপাট। যত্নের অভাবে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে নিদর্শনগুলো। আর বিরাট রাজার বড় বড় পুকুর দখল করে চলছে মাছ চাষ।

গাইবান্ধার ইতিহাস ও ঐতিহ্য গ্রন্থ থেকে জানা গেছে, বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান বিরাট রাজার গড়। বিংশ শতাব্দীর শুরুতে রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায় সেখানকার প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য লিখে গেছেন। এই প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলো গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার রাজাহার ইউনিয়নের রাজা বিরাটের এলাকায়। এই এলাকায় কী পরিমাণ জমি রয়েছে, উপজেলা পরিষদ কার্যালয়ে সেই হিসাব পাওয়া যায়নি। তবে স্থানীয় লোকজন জানান, সেখানে অন্তত ৫০ একর জমি থাকতে পারে।

স্থানীয় বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তিদের সূত্রে জানা গেছে, একসময় রাজাহার ইউনিয়নের এই জায়গায় বিশাল প্রাচীরবেষ্টিত বিরাট রাজার বসতি ছিল।
সম্প্রতি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের একদল গবেষক এই জায়গায় জরিপ পরিচালনা করেন। জরিপ দলের পক্ষে শিক্ষক স্বাধীন সেন রাজশাহী অঞ্চলের প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের আঞ্চলিক পরিচালক নাহিদ সুলতানাকে এগুলো রক্ষার জন্য লিখিত আবেদন করেছেন। আবেদনে তিনি প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলো সংরক্ষণে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান। ওই আবেদনে উল্লেখ করা হয়, স্থানীয় লোকজনের অপতৎপরতায় একটি প্রত্নতাত্ত্বিক অবকাঠামো নবরথ মন্দিরের দেয়াল উন্মুক্ত হয়ে পড়েছে। মানুষজন ইট খুলে নিয়ে যাওয়ায় এই দেয়ালের একটি পাশ ধ্বংস হয়ে গেছে।

৩ এপ্রিল সরেজমিনে দেখা গেছে, বিরাট রাজার ঐতিহাসিক এলাকার বেশির ভাগ জায়গা বেদখল হয়ে গেছে। সেখানে নির্মাণ করা হয়েছে ঘরবাড়ি, দোকানপাট, মুরগির খামার। জমিতে চলছে চাষাবাদ।
বিরাট রাজার এলাকায় স্থাপিত মদনমোহন জিউ বিগ্রহ মন্দিরের সেবায়েত দীলিপ চক্রবর্তী বলেন, বিগ্রহ মন্দিরের ১৭ একর ২১ শতক জমি ছিল। বর্তমানে মন্দিরের দখলে আছে মাত্র ৫ একর জায়গা। অবশিষ্ট জায়গা বেদখল হয়ে গেছে।
অবৈধ দখলদার স্থানীয় আবদুস সামাদ বলেন, ‘সরকারের জায়গা পড়ে আছে। তাই ঘর নির্মাণ করে বসবাস করছি। সরকার চাইলে ছেড়ে দেব।’ একই এলাকার দখলদার হোদা মিয়া বলেন, ‘বিরাট রাজার জায়গায় অনেকে ঘরবাড়ি নির্মাণ করেছে, তাদের দেখাদেখি আমিও করেছি।’ আরেক দখলদার শিবুচন্দ্র বর্মণ বলেন, ‘এখানে ঘরবাড়ি ও দোকানপাট গড়ে তোলার সময় কেউ বাধা দেয়নি। তাই সবার সঙ্গে আমি এই জায়গায় দোকান তুলেছি।’