'স্বামী হত্যার বিচার পাব তো?'

মাহবুব আলম শাহীন
মাহবুব আলম শাহীন

বগুড়ায় দলীয় নেতা মাহবুব আলম শাহীন হত্যার সুষ্ঠু বিচার না হওয়া পর্যন্ত পরিবারের পাশে থাকার ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় বগুড়া শহরের ধরমপুর এলাকায় মাহবুব আলমের বাসায় পরিবারের সদস্যদের সান্ত্বনা দিতে এসে দলের পক্ষ থেকে এ ঘোষণা দেন।

বিএনপির মহাসচিবকে কাছে পেয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন হত্যাকাণ্ডের শিকার বিএনপি নেতা মাহবুব আলমের স্ত্রী-সন্তানসহ পরিবারের সদস্যরা।

মাহবুব আলমের স্ত্রী আকতার জাহান কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের উদ্দেশে বলেন, ‘আজীবন বিএনপির আদর্শের সৈনিক ছিলেন আমার স্বামী। আমার স্বামীর কী অপরাধ ছিল? কেন এভাবে নৃশংসভাবে হত্যা করা হলো?’

বিএনপির মহাসচিবের উদ্দেশে আকতার জাহান বলেন, ‘আমার ছোট ছোট ছেলেমেয়ে বাবাহারা হলো। তাদের কী হবে? কে আমার অসহায় ছেলেমেয়েদের দেখবে? আমার স্বামী হত্যার বিচার পাব তো? আমার কোনো কিছু চাওয়া নেই, একটাই চাওয়া। খুনিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। খুনিদের শাস্তির ব্যবস্থা করুন।’

এ সময় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর পরিবারের সদস্যদের ধৈর্য ধারণ করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, শাহীনের ছেলেমেয়ে আমাদের সন্তান। আমরা সবাই ওদের দেখব। সাহস রাখুন। ধৈর্য ধারণ করুন। বিএনপি সব সময় পরিবারের পাশে থাকবে।

পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে মির্জা ফখরুল ইসলাম বিএনপি নেতা মাহবুব আলমের কবর জিয়ারত করেন।

পরে বিএনপির মহাসচিব মাহবুব আলমের বাসার সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বলেন, বর্তমানে দেশে আইনের শাসন নেই, ন্যায়বিচার নেই, মানবাধিকার নেই, ইনসাফ নেই। আইনশৃঙ্খলা নেই, কারও কোনো নিরাপত্তা নেই। সবকিছুই চলছে অবলীলায়। কোনো জবাবদিহি নেই। বিএনপি নেতা শাহীন হত্যা প্রমাণ করে দেশে আইনশৃঙ্খলা বলতে কিছুই নেই। মাহবুব আলমের সন্তানেরা আজ বাবাহারা, এতিম। স্বামী শোকে স্ত্রী প্রচণ্ড অসুস্থ। গোটা পরিবার আজ অসহায়।

বগুড়ায় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গতকাল বেলা ১১টায় শহরের ধরমপুরে।  ছবি: প্রথম আলো
বগুড়ায় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গতকাল বেলা ১১টায় শহরের ধরমপুরে। ছবি: প্রথম আলো

মির্জা ফখরুল ইসলাম দলীয় নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বলেন, দেশের মানুষকে সরকারের দুঃশাসন, হত্যা, অন্যায় ও অপকর্মের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে, রুখে দাঁড়াতে হবে। অধিকার আদায়ে ঐক্যবদ্ধ থাকবেন। শাহীনের পরিবারের পাশে দাঁড়াবেন। যেকোনো প্রয়োজনে যেকোনো সময় বিএনপি এই পরিবারের পাশে থাকবে। এ হত্যাকাণ্ডে বিএনপির নেত্রী খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব তারেক রহমানও মর্মাহত। তাঁরা বলেছেন, ‘বগুড়াবাসীর পাশে ছিলাম, আছি এবং থাকব।’

বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘বিএনপির প্রাণপ্রিয় নেত্রী খালেদা জিয়া অত্যন্ত অসুস্থ। তিনি হুইলচেয়ার ছাড়া চলতে পারেন না। প্রাণপ্রিয় নেতা তারেক রহমান বিদেশে। তাঁদের জন্য বগুড়াবাসী দোয়া করবেন।’

সমাবেশে বিএনপির রাজশাহী বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক এম রুহুল কুদ্দুস তালুকদার বলেন, ‘দেশে হত্যা এখন কোনো বিষয় নয়। মানুষের জীবনের কোনো মূল্য নেই। শাহীন হত্যার বিচার করতে হবে। বিচার না হওয়া পর্যন্ত বগুড়া বিএনপি রাজপথে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। আমিও এ আন্দোলন–সংগ্রামে নেতা-কর্মীদের পাশে থাকব।’

বগুড়া জেলা বিএনপির সভাপতি সাইফুল ইসলাম সমাবেশে বলেন, শাহীন হত্যার বিচার না হওয়া পর্যন্ত বগুড়া জেলা বিএনপির নেতা-কর্মীরা রাজপথে থাকবেন।

এ সময় অন্যান্যের মধ্যে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও পৌরসভার মেয়র এ কে এম মাহবুবর রহমান, জেলা সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদীন, বগুড়া-৪ আসনের সাংসদ মোশারফ হোসেন, সাবেক সাংসদ জি এম সিরাজ, জেলা বিএনপির সহসভাপতি আলী আজগর তালুকদার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।