বাবার সঙ্গেই গেল আইভি মা আর চাইবেন না

সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত আইভির মায়ের আহাজারি। দিনাজপুর এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। ছবি: প্রথম আলো
সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত আইভির মায়ের আহাজারি। দিনাজপুর এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। ছবি: প্রথম আলো

আইভির মা-বাবার ছাড়াছাড়ি হয়ে গেছে চার বছর আগেই। ঝামেলাটা বেধেছিল ১০ বছরের আইভি কার কাছে থাকবে, তা নিয়ে, বাবা নাকি মায়ের কাছে? আদালতের সিদ্ধান্ত চেয়েছিলেন সবাই মিলে। গতকাল বৃহস্পতিবার তাই বাবার সঙ্গেই আদালতে যাচ্ছিল আইভি। কিন্তু আদালত রায় দেওয়ার আগেই সব ফয়সালা হয়ে গেল। বাবাকে নিয়েই চিরতরে চলে গেল আইভি। মা-ও আর তাকে ফিরে পেতে চাইবেন না কোনো দিন।

দিনাজপুর সদর উপজেলার চুনিয়াপাড়া এলাকায় গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে বাসের সঙ্গে অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত হয়েছে অটোরিকশার যাত্রী তৃতীয় শ্রেণির স্কুলছাত্রী আইভি আক্তার (১০), তার বাবা আশরাফুল ইসলাম (৪২) ও প্রতিবেশী চাচা সাজদার আলী (৪০)। আহত হয়ে দিনাজপুর এম আবদুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন দুজন।

বিয়ের তিন বছরের মাথায় স্ত্রী লাকী আক্তারের (৩১) সঙ্গে পারিবারিক কলহ শুরু হলে ২০১৫ সালে তাঁর সঙ্গে বৈবাহিক সম্পর্ক ছিন্ন করেন আশরাফুল ইসলাম। এরপর মেয়ে আইভি কার কাছে থাকবে, তা নিয়েও শুরু হয় তার মা-বাবার দ্বন্দ্ব। এই দ্বন্দ্বের জের ধরে ও মা-বাবা দুজনই ঢাকায় থাকেন, সে কারণে মেয়ে আইভি থাকছিল নাটোরের বাগাতিপাড়ার জালালপুর গ্রামে দাদা আফসার আলীর কাছে। ২০১৫ সালে মেয়েকে নিজের কাছে পেতে মামলা করেন লাকী আক্তার। আইভি বাবা, নাকি মায়ের—কার কাছে থাকবে, সে বিষয়ে গতকাল রায় দেওয়ার কথা ছিল আদালতের।

আদালতে উপস্থিত হতে বাবা, দাদা ও প্রতিবেশী ওই চাচার সঙ্গে গত বুধবার নাটোর থেকে দিনাজপুরের পার্বতীপুরে আত্মীয় মোস্তফা কামালের বাসায় আসে
আইভি। গতকাল সকালে বাসা থেকে বেরিয়ে অটোরিকশায় তাঁরা দিনাজপুর জজকোর্টের উদ্দেশে যাওয়ার সময় দিনাজপুর-ঢাকা মহাসড়কে বাসের সঙ্গে অটোরিকশাটির মুখোমুখি ওই সংঘর্ষ হয়। ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারায় আইভি, আশরাফুল ও সাজদার। আর আহত হন আইভীর দাদা আফছার আলী (৭০) ও মোস্তফা কামাল (৩৮)।

দিনাজপুর এম আবদুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মেয়ের জন্য আহাজারি করছিলেন মা লাকী আক্তার। আর্তনাদ করে বলছিলেন, ‘মেয়েকে দেখবার জন্য এত দিন ধরে অপেক্ষা করছি। আজ যখন মেয়ের দেখা পেলাম, তখন মেয়ে আর কথা বলে না। চুপচাপ শুয়ে আছে। আমার মেয়ে আমার কাছে থাকলে এ রকম ঘটনা ঘটত না।’ মেয়েকে হারানোর শোকে একপর্যায়ে মূর্ছা যান তিনি।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, চুনিয়াপাড়ায় রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে যাত্রী তুলছিলেন অপর একটি অটোরিকশার চালক। তখন এটির পাশ দিয়ে বাবা-মেয়েকে বহনকারী অটোরিকশা সামনে যাওয়ার সময় বিপরীত দিক থেকে আসা বাসটি অটোরিকশাকে চাপা দিয়ে চলে যায়।

বাবা-মেয়ে নিহত হওয়ায় আদালতে গতকাল চূড়ান্ত শুনানি ও রায় প্রদান করা হয়নি। দিনাজপুর জজকোর্টের পেশকার মো. আরিফ গতকাল সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, এ ধরনের ঘটনা কিংবা অন্য কোনো কারণে যদি বাদী-বিবাদী আদালতে হাজির হতে না পারেন, সে ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট আইনজীবী তাঁদের উপস্থিত না হওয়ার কারণ আদালতকে ব্যাখ্যা করেন। সেই অনুযায়ী বিচারক পরবর্তী তারিখ ধার্য করে থাকেন। মেয়েটি কার হেফাজতে যাবে, তা নিয়ে সংশ্লিষ্ট মামলায় আজ কোনো শুনানি বা রায় হয়নি।