বড় ভাইয়ের নির্দেশে রাতে ঘুম বাদ দিয়ে ঘুরতে বেরোলেন তাঁরা

বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ৪টা ১০ মিনিট৷ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টারদা সূর্য সেন হল। এই হলের অতিথিকক্ষের সোফাগুলোতে আধা শোয়া অবস্থায় ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের ১০ শিক্ষার্থী৷ এই দুরবস্থার কারণ ছাত্রলীগের ‘বড় ভাইরা’ হল থেকে তাঁদের এক রাতের জন্য ‘বাইরে ঘুরতে’ বলেছেন। ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে রাত দুইটার দিকে তাঁরা আশ্রয় নেন সেখানে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের প্রথম বর্ষে পড়া ওই শিক্ষার্থীরা জিয়াউর রহমান হলের গণরুমে থাকেন। বৃহস্পতিবার রাতে তাঁদের ডাক পড়েছিল ‘গেস্টরুমে’। এরপর নির্দেশ পালনে ঘুম বাদ দিয়ে ক্যাম্পাসে ঘুরতে বেরিয়ে পড়েন তাঁরা।

আবাসনসংকটের কারণে প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীরা হলে আসন পান না। এ অবস্থায় যখন যে দল ক্ষমতায় থাকে, সেই দলে সহযোগী ছাত্রসংগঠনের নেতাদের ‘কৃপায়’ গণরুমে থাকতে হয় তাঁদের।

ক্যাম্পাসে এই ‘গেস্টরুম’ সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছে আতঙ্কের নাম। আচরণ শেখানোর নামে চলে মানসিক নির্যাতন। সাধারণত হলের অতিথিকক্ষে ঘটে বলে এটা ‘গেস্টরুম’ নামে পরিচিত। তবে এটা কখনো নেতাদের কক্ষ অথবা খোলা মাঠেও হয়ে থাকে। প্রথম বর্ষের ছাত্রদের গেস্টরুমের বিভীষিকা পার করতে হয়। যদিও ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতাদের দাবি, গেস্টরুমে সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে জ্যেষ্ঠ ও কনিষ্ঠ শিক্ষার্থীদের ‘গেট টুগেদার’ হয়৷

আবাসনসংকটের কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম বর্ষে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের ছাত্রসংগঠনের নিয়ন্ত্রণে গণরুমে গাদাগাদি করে থাকতে হয়৷

বৃহস্পতিবার রাতে ‘গেস্টরুমে’ ডাক পড়া শিক্ষার্থীর দুজন নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, এক বড় ‘ভাইয়ের’ নির্দেশে রাত ৪টা ২০ মিনিটে তাঁদের এক বন্ধু এসে সবাইকে ঘুম থেকে ডেকে তোলেন। তাঁদের সবাইকে হলে ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন সেই ভাই। ‘বাইরে ঘোরা’ সেদিনের মতো সমাপ্ত হওয়ার কথা জানান তাঁদের। কোন ‘ভাই’ এই নির্দেশ দিয়েছিলেন তা বলতে চাননি তাঁরা৷

গত মার্চ মাসে অনুষ্ঠিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনের আগে ছাত্রলীগ আবাসনসংকট নিরসনে নানা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। গেস্টরুমে ডেকে নিয়ে ‘ম্যানার’ (ভদ্রতা) শেখানোর নামে নির্যাতন বন্ধে বিভিন্ন সময় প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন ছাত্রলীগের নেতারা। কিন্তু অবস্থার তেমন পরিবর্তন হয়নি বলে জানান সাধারণ শিক্ষার্থীরা৷

হলে গেস্টরুম সংস্কৃতি এখনো পুরোপুরি বন্ধ করা যায়নি বলে স্বীকার করে ডাকসুর সহসাধারণ সম্পাদক (এজিএস) সাদ্দাম হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, এটি বন্ধে ছাত্রলীগ কাজ করছে। আবাসনসংকট কেটে গেলে এটি এমনিতেই বন্ধ হয়ে যাবে বলে মনে করেন তিনি।