খালেদা জিয়ার প্যারোল মিডিয়ার সৃষ্টি: ফখরুল

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। প্রথম আলো ফাইল ছবি
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। প্রথম আলো ফাইল ছবি

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বিএনপি কখনো প্যারোলে খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি করেনি। এসব মিডিয়ার সৃষ্টি। গণতান্ত্রিক আন্দোলনের মাধ্যমে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করা হবে।

আজ শনিবার বিকেলে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের নোয়াগাঁও এলাকায় বিএনপি দলীয় সাবেক সাংসদ মনিরুল হক চৌধুরীর বাড়িতে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল ইসলাম এসব কথা বলেন। কুমিল্লা-১০ (নাঙ্গলকোট, সদর দক্ষিণ ও লালমাই) আসনে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ক্ষতিগ্রস্ত নেতা-কর্মীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় ও অর্থ প্রদান উপলক্ষে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

অনুষ্ঠান শুরুর আগে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, খালেদা জিয়ার প্যারোলে মুক্তির দাবি বিএনপি কখনো করেনি। দলের নির্বাচিত ছয়জন সাংসদ সংসদে যোগ দিলে খালেদা জিয়াকে প্যারোলে মুক্তি দেওয়া হবে-এমন বিষয়টিও সঠিক নয়। এগুলো মিডিয়ার অবান্তর কথাবার্তা। বিএনপির কোনো নেতা খালেদা জিয়ার প্যারোলে মুক্তি নিয়ে কোনো কথা বলেননি। এগুলো মিডিয়াতে বলা হচ্ছে।

খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়ে ফখরুল ইসলাম বলেন, সরকার খালেদা জিয়াকে কাঙ্ক্ষিত মানের চিকিৎসা দিচ্ছে না। স্বৈরাচার সরকারের চেয়েও আওয়ামী লীগ সরকার ভয়ংকর। তাই হরতাল অবরোধ করে নয়, গণতান্ত্রিক আন্দোলনের মধ্য দিয়ে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করা হবে।

মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি পরাজিত হয়েছে বলে বিশ্বাস করি না। আমরা নির্বাচনে না গেলে আওয়ামী লীগ যে একটি জনবিচ্ছিন্ন রাজনৈতিক দল, তা জনগণের কাছে প্রমাণিত হতো না। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে প্রমাণ হয়েছে, আওয়ামী লীগ একটি দেউলিয়া দল। তারা জোর করে বাকশাল কায়েমের পথ তৈরি করেছে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ মানুষের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছে। গণতন্ত্রকে শেষ করে দিয়েছে। আওয়ামী লীগ জনবিচ্ছিন্ন হয়ে একটি দেউলিয়া দলে পরিণত হয়েছে। একাত্তরে যে চেতনা নিয়ে যুদ্ধ হয়েছিল, আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধের সেই চেতনাকে শেষ করে দিয়েছে।

খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সম্পূর্ণ সুস্থ হওয়ার আগে খালেদা জিয়াকে কেরানীগঞ্জে পাঠানো মানে পরিকল্পিতভাবে ক্ষতি করার চেষ্টা। তাঁর চিকিৎসা নিয়ে সরকারের গড়িমসি রয়েছে। তিনি বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কুমিল্লা-১০ নির্বাচনী এলাকার যেসব নেতা-কর্মী নিহত, আহত ও হামলা-মামলার শিকার হয়েছেন, তাঁদের সঙ্গে-তাদের পরিবারের সঙ্গে বিএনপি, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও মনিরুল হক চৌধুরী থাকবেন।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন কুমিল্লার নাঙ্গলকোট উপজেলার মোরগা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের হামলায় নিহত বিএনপি নেতা বাচ্চু মিয়া। আজকের অনুষ্ঠানে প্রয়াতের স্ত্রী কমলা বেগমের হাতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষে ৫০ হাজার টাকার চেক হস্তান্তর করা হয়। এ ছাড়া বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মনিরুল হক চৌধুরীর পক্ষ থেকে নগরের গোয়াল মথন এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত বিএনপির নেতা এরশাদ মিয়া, মনির হোসেন, কামাল হোসেন, শাহজাহান মোল্লা ও নজিব আহমেদসহ আরও কয়েকজনকে নগদ টাকা দেওয়া হয়। সব মিলিয়ে কুমিল্লার নাঙ্গলকোট, সদর দক্ষিণ ও লালমাই উপজেলার ৯৫ জন ক্ষতিগ্রস্ত নেতা-কর্মীর প্রত্যেককে ১৫ হাজার টাকা করে আর্থিক অনুদান দেওয়া হয়।

এর আগে দুপুরে কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার মোকাম এলাকার এক শ্রমিক নেতার কবর জিয়ারত করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল। এ সময় তাঁর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সহসভাপতি শওকত মাহমুদ। এ সময় ফখরুল ইসলাম কাবিলা এলাকায় একটি পথসভায় বক্তব্য দেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস বিভাগের অধ্যাপক ও মনিরুল হক চৌধুরীর মেয়ে সায়মা ফেরদৌস চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন কবির মুরাদ, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সহসাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাক মিয়া ও আবদুল আউয়াল খান, গণশিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক সেলিম ভূঁইয়া, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মোস্তফা খান সফরী, সৈয়দ জাহাঙ্গীর আহেমদ ও একরামুল হক। এ সময় নাঙ্গলকোট, সদর দক্ষিণ ও লালমাই উপজেলা বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।