পুকুরপাড়ের ঝোপ থেকে নবজাতক উদ্ধার

পুকুরপাড় থেকে উদ্ধারের পর ‘শিশুপল্লি’ অনাথ আশ্রমে শুক্রবার রাতে হস্তান্তর করা হয়। এ ছাড়া শনিবার হস্তান্তর–সংক্রান্ত আইনি বিষয়ও সম্পন্ন করা হয়। ওসমানীনগর, সিলেট, ২০ এপ্রিল ২০১৯। ছবি: প্রথম আলো
পুকুরপাড় থেকে উদ্ধারের পর ‘শিশুপল্লি’ অনাথ আশ্রমে শুক্রবার রাতে হস্তান্তর করা হয়। এ ছাড়া শনিবার হস্তান্তর–সংক্রান্ত আইনি বিষয়ও সম্পন্ন করা হয়। ওসমানীনগর, সিলেট, ২০ এপ্রিল ২০১৯। ছবি: প্রথম আলো

শিক্ষক আরশ আলী বাড়ির বারান্দায় বসে আছেন। রাত ১০টা। অন্য যেকোনো রাতের মতোই শান্ত ও নীরব একটি রাত। কিন্তু একটু পরেই রাতের নীরবতার সুর কেটে গেল। থেকে থেকে বেশ কয়েকবার কান্নার আওয়াজ শুনতে পান তিনি। প্রথম শুনে আবারও কান পাতেন শিক্ষক আরশ। নিশ্চিত হন, বাড়ির পাশে পুকুরপড়া থেকে ভেসে আসছে শিশুকণ্ঠের কান্না। খানিকটা বিচলিত হয়ে পড়েন তিনি। এত রাতে ওই পুকুরপড়ে শিশুর কান্না কীভাবে সম্ভব। ঘটনাটি জানালেন ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) সদস্যকে। পরে ওই ইউপি সদস্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) খবর দিলে তিনি কয়েকজন পুলিশ সদস্য নিয়ে হাজির হন। পরে তাঁরা পুকুরপড়ে গিয়ে দেখেন, একটি ফুটফুটে কন্যা নবজাতক পড়ে আছে ঘাসের ওপর। বয়স আনুমানিক এক সপ্তাহর কাছাকাছি।

ঘটনাটি ঘটেছে শুক্রবার রাতে সিলেটের ওসমানীনগর উপজেলায়। ওই উপজেলার তাজপুরের মজলিশপুর গ্রামের বাসিন্দা শিক্ষক আরশ আলী। তাঁরই বাড়ির পাশে পুকুরের পাড়ে পাওয়া গেছে ওই নবজাতকটি।

আরশ আলী বলেন, রাত প্রায় ১০টার দিকে কয়েকজন প্রতিবেশী তাঁর বাড়িতে এসে জনান, পুকুরপাড় থেকে তারা শিশুর কান্নার আওয়াজ পেয়েছেন। তাবে তিনি বিষয়টি প্রথমে গুরুত্ব দেননি। কিন্তু এর কিছুক্ষণ পরে তিনি নিজেই ওই কান্নার শব্দ পান। বেশ কয়েকবার শব্দ শুনে তিনিও খানিকটা ঘাবড়ে যান। পরে তিনি বিষয়টি জানান স্থানীয় ইউপি সদস্যকে।

ইউপি সদস্য হাজি মুহিতুর রহমান বলেন, তিনি ঘটনাটি শুনে দ্রুত উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) অবহিত করেন। এরপর ইউএনও কয়েকজন পুলিশ সদস্য নিয়ে এলাকায় এলে তিনি তাঁদের ওই পুকুরপাড়ে নিয়ে যান।

ইউএনও মো. আনিছুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা ঘটনাস্থলে যাওয়ার পরে সেখানে এক নবজাতককে দেখতে পান। এরপর পুলিশের সহায়তায় কাপড়ে মোড়ানো শিশুটিকে উদ্ধার করেন। তিনি বলেন, নবজাতকের বয়স প্রায় এক সপ্তাহ হবে বলে দর্শনার্থীরা অনুমান করেছেন। তবে নবজাতকটির পিতামাতা কারা, সে বিষয়ে অনুসন্ধান করছে পুলিশ। বর্তমানে তাকে ‘শিশুপল্লি’ অনাথ আশ্রমে রাখা হয়েছে।

শিশুপল্লিটি ওসমানীনগর উপজেলার দয়ামীর এলাকায়। নবজাতক হস্তান্তর করার সময় শিক্ষক আরশ আলী, ওসমানীনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম আল-মামুন, শিশুপল্লির পরিচালক মোহাম্মদ ইউসুফ আলী ও ইউপি সদস্য হাজি মুহিতুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।

শিশুপল্লির পরিচর্যাকারী (এস ও এস-মা) হালিমা খাতুন জানান, নবজাতকটি সুস্থ অবস্থায় আছে, খাবার খাচ্ছে। দেখলে বোঝা যায় না সে মায়ের কোলে নেই। এ ছাড়া মুহিতুর রহমান জানান, কান্না শুনে উদ্ধারের ব্যবস্থা না করলে নবজাতকটি শিয়ালের আক্রমণে পড়ার আশঙ্কা ছিল।