পোশাক খাত পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম দূষণকারী খাত

পরিবেশের ওপর পোশাকশিল্পের প্রভাব নিয়ে সেমিনার। ব্র্যাক সেন্টার, ঢাকা, ২০ এপ্রিল। ছবি: সংগৃহীত
পরিবেশের ওপর পোশাকশিল্পের প্রভাব নিয়ে সেমিনার। ব্র্যাক সেন্টার, ঢাকা, ২০ এপ্রিল। ছবি: সংগৃহীত

বিশ্বব্যাপী ৩ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের বাণিজ্য খাত পোশাকশিল্প। এটি পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম দূষণকারী খাত। একই সঙ্গে এটি সারা বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পানি ব্যবহারকারী খাত। শুধু এই একটি খাত থেকেই বিশ্বের ২০ শতাংশ বর্জ্য পানি এবং ১০ শতাংশ কার্বন ডাই–অক্সাইড নিঃসরণ হয়।

শনিবার রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টারে অ্যাকশনএইড বাংলাদেশ এবং ফ্যাশন রেভল্যুশন আয়োজিত ‘ভয়েসেস অ্যান্ড সলিউশনস’ শীর্ষক সেমিনারের মূল প্রবন্ধে এসব তথ্য জানানো হয়েছে। সেমিনারে অ্যাকশনএইড বাংলাদেশের দেশীয় পরিচালক ফারাহ্‌ কবির পোশাক খাত কীভাবে পরিবেশের ওপর প্রভাব ফেলছে, তা নিয়ে এ প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।

প্রবন্ধে বলা হয়, শিল্পকারখানার সব ক্ষেত্র, যেমন কাটা, বয়ন, সেলাই, প্রক্রিয়াজাতকরণ এবং তৈরি পোশাক উৎপাদনে বায়ু, পানি এবং মাটি দূষণ করে। বেশির ভাগ কারখানা নদীর তীরে অবস্থিত হওয়ায় কারখানার বর্জ্য নদীতে ফেলা হয়। ইন্টারন্যাশনাল ফিন্যান্স করপোরেশনের এক গবেষণা মতে, প্রতিবছর পোশাকশিল্প কারখানায় পোশাক ও তুলা ধৌতকরণ এবং রঙের কাজে ১৫০০ বিলিয়ন লিটার পানি ব্যবহার করা হয়। কারখানাগুলো ব্যবহারের পর এই বিষাক্ত পানি নদী এবং খালে নিষ্কাশন করে।

আলোচনায় ফারাহ্‌ কবির বলেন, পোশাকশিল্প খাত দেশের অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখলেও পরিবেশের জন্য এটি উদ্বেগজনক। পানিদূষণের ফলে একদিকে কমছে মাছের সংখ্যা, অন্যদিকে হ্রাস পাচ্ছে চাষের উপযোগী জমি। বেশির ভাগ স্থানীয় কৃষক ও মৎস্যজীবীর জীবিকা এখন ঝুঁকিপূর্ণ। পরিস্থিতি সামাল দিতে সব পক্ষকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।

সেমিনারের প্রধান অতিথি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র ও তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি আতিকুল ইসলাম বলেন, সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে শিল্পকারখানার বর্জ্যের পরিমাণ কমিয়ে আনতে হবে। জলাশয়কে ডাস্টবিন হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না। বর্জ্য নিষ্কাশন ব্যবস্থাকে উন্নত করতে হবে। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য বাস্তবায়নে পোশাকশিল্প খাতে কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদার করতে হবে। দায়িত্ব না এড়িয়ে নিজেদের ব্যবহার ও মানসিকতায় পরিবর্তন আনার বিষয়টিতেও গুরুত্ব দেন মেয়র।

সেমিনারে কিউটেক্স সল্যুশনস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাহুরা খানম বলেন, বর্জ্য নিষ্কাশন শুধু পরিবেশদূষণই করছে না বরং জ্বালানি খরচ বৃদ্ধি করছে। বর্তমানে গড়ে অধিকাংশ কারখানার জ্বালানি দক্ষতা মাত্র ২০-২৫ শতাংশ। শিল্পকারখানার এই নেতিবাচক প্রভাব রোধে সরকার, নগর কর্তৃপক্ষ এবং শিল্প–কারখানাসমূহের ভালো উদ্যোগগুলো সমন্বয়ের অভাবে সঠিকভাবে কার্যকর হচ্ছে না।

দিনব্যাপী সেমিনারের দ্বিতীয় ভাগে পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সুলতান আহমেদ বলেন, দেশের কারখানাগুলোর পরিবেশবিষয়ক তদারকি ব্যবস্থাপনা আছে। তবে তদারকির জন্য যথেষ্ট লোকবল নেই।

সেমিনারে বিজিএমইএর সদ্যনির্বাচিত পরিচালক শরীফ জহির, সাবেক সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ফারুক হাসান, ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সাবেক সভাপতি আসিফ ইব্রাহিম, ফ্যাশন রেভল্যুশনের কান্ট্রি কো-অর্ডিনেটর নওশীন খায়ের, ইউল্যাব বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ইমরান রহমান প্রমুখ আলোচনায় অংশ নেন।