দুলতে দুলতে সাঁকো পার

নড়বড়ে সাঁকোর ওপর দিয়ে পারাপার করতে হয় আটটি গ্রামের মানুষকে। লক্ষ্মীপুরের রায়পুরের গাজীনগর গ্রামের ডাকাতিয়া নদীর তীরে।
নড়বড়ে সাঁকোর ওপর দিয়ে পারাপার করতে হয় আটটি গ্রামের মানুষকে। লক্ষ্মীপুরের রায়পুরের গাজীনগর গ্রামের ডাকাতিয়া নদীর তীরে।

লক্ষ্মীপুরের রায়পুরের চরপাতা ইউনিয়নের আটটি গ্রামের মানুষজন ঝুঁকিপূর্ণ সাঁকো দিয়ে ডাকাতিয়া নদী পারাপার করেন। লক্ষ্মীপুরের রায়পুর পৌর শহর থেকে দুই কিলোমিটার দূরে গাজীনগর গ্রামে ডাকাতিয়া নদীর ওপর ২৫০ ফুট দীর্ঘ এই সাঁকোর অবস্থান।

চরপাতা ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধিরা জানান, সাঁকোর উত্তর পাড়ে গাজীনগর, চরপাতা, আলোনীয়া, সাহেবগঞ্জ ও দুর্গাপুর গ্রাম। দক্ষিণ পাশে শায়েস্তনগর, দেবীপুর ও পূর্বলাচ্ছ গ্রাম। শায়েস্তনগরে তিনটি দাখিল মাদ্রাসা ও তিনটি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। মাদ্রাসাগুলোতে ওই পাঁচ গ্রামের শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা করেন। তাদের একমাত্র যাতায়াতের ভরসা এ সাঁকো। প্রায় চার যুগ আগে এলাকার লোকজন বাঁশ দিয়ে সাঁকোটি তৈরি করেন। প্রতিবছর লোকজন চাঁদা তুলে এটি মেরামত করেন।

গত শুক্রবার গাজীনগর গ্রামে সাঁকোর কাছাকাছি যেতেই দেখা গেল, সাঁকোর ঠিক নিচে একজন বৃদ্ধা পড়ে আছেন। সাঁকোর বাঁশ ধরে তিনি ওঠার চেষ্টা করছেন তিনি। কাছে যেতেই মরিয়ম বেগম(৬০) নামের ওই বৃদ্ধা জানালেন, সাঁকো পার হতে গিয়ে পা পিছলে পড়ে গেছেন তিনি। ভাগ্যিস নদীতে পড়েননি। এ নিয়ে বেশ কয়েকবার সাঁকো থেকে পা পিছলে পড়ে গেছেন বলে জানালেন মরিয়ম বেগম।

গাজীনগর গ্রামের বাসিন্দা মরিয়ম বেগম যাচ্ছিলেন কয়েক কিলোমিটার দূরে শায়েস্তানগর গ্রামে। এ যাত্রায় কোনো রকমে রক্ষা পেলেও সাঁকো পার হতে প্রতিবারই ভয়ে ভয়ে থাকেন। কেবল বৃদ্ধা মরিয়ম বেগম নন, শায়েস্তানগর ও গাজীনগরসহ আট গ্রামের গ্রামের লোকজনকে ডাকাতিয়া পার হতে এই সাঁকো ব্যবহার করতে হয়। ঝুঁকিপূর্ণ সাঁকোই তাদের একমাত্র ভরসা। লোকজন উঠলেই দুলতে থাকে এটি। দুলতে দুলতেই লোকজন নদী পার হন।

গাজীনগর গ্রামের আরিফুর রহমান ও কামাল উদ্দিন বলেন, প্রতিবছর সাঁকোটি মেরামত করে কোনো রকমে টিকিয়ে রাখা হয়েছে। যেকেনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

শায়েস্তানগর বানাত মাদ্রাসার অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী সেলিনা আক্তার ও শায়েস্তানগর ইসলাম মিশন দাখিল মাদ্রাসার সপ্তম শ্রেণির ছাত্র সাইফুল ইসলাম বলে, বাঁশের খুঁটির ওপর সাঁকোটি তৈরি। সাত-আটজন উঠলেই দুলতে থাকে। সাত-আট মাস আগে মেরামতও করা হলেও পারাপারে ঝুঁকি রয়ে গেছে আগের মতো।

চরপাতা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. খোরশেদ আলম বলেন, ‘সাঁকোর ওই স্থানটি চরপাতা ইউপিতে অবস্থিত। প্রতিদিন অনেক মানুষ এ বাঁশের সাঁকো দিয়ে যাতায়াত করেন। আমরা একটি সেতুর জন্য অনেক চেষ্টা করছি। কিন্তু কর্তৃপক্ষের অনুমোদন না পাওয়ায় এটি করা যাচ্ছে না।’

উপজেলা প্রকৌশলী মো. আকতার হোসেন বলেন,‘ প্রায় দুই বছর আগে স্থানীয় সরকার প্রকৌশলীর অধিদপ্তরে গাজীনগরে একটি সেতু করার জন্য প্রস্তাব পাঠিয়েছি। কিন্তু অনুমোদন পাওয়া যায়নি। এতে সেতু করা যাচ্ছে না।’