নগরে বাড়ছে অগ্নিসচেতনতা

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর ব্যক্তি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান পর্যায়ে অগ্নিনিরাপত্তাসংক্রান্ত তিন ধরনের সেবা দেয়। শুরুতে এই সেবা নেওয়ার হার কম থাকলেও গত মাসে বনানীর এফ আর টাওয়ারে অগ্নিকাণ্ডের পর সেবা চেয়ে আবেদনের সংখ্যা কয়েক গুণ বেড়েছে।

ফায়ার সার্ভিস জানায়, অগ্নিনিরাপত্তাসংক্রান্ত এই তিন সেবা হচ্ছে—প্রশিক্ষণ, অগ্নিঝুঁকি নিরূপণ ও মহড়া। নির্দিষ্ট পরিমাণ ফির বিনিময়ে ব্যক্তি বা আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এই সেবাগুলো নিতে পারে। ২০০৭ সালের জুলাই মাসে এটি প্রথমবারের মতো চালু করা হয়েছিল। ওই বছর প্রশিক্ষণের জন্য ৪৯টি, মহড়ার জন্য ১০টি ও ভবন সমীক্ষার জন্য ২৪টি আবেদন জমে পড়ে। ফায়ার সার্ভিসের ফায়ার অ্যান্ড সেফটি সেল আবেদনগুলো যাচাই-বাছাই করে এবং পরবর্তী প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়।

ফায়ার অ্যান্ড সেফটি সেলের তথ্য অনুযায়ী, গত সাড়ে ১১ বছরে (২০০৭ সালের জুলাই থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত) ১৩ হাজার ৪৯৩টি প্রতিষ্ঠান প্রশিক্ষণ ও ২ হাজার ১৯৩টি প্রতিষ্ঠান মহড়ার আবেদন করেছে। পরে প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রশিক্ষণ ও মহড়ার আয়োজন করে ফায়ার সার্ভিস। এ ছাড়া ৯২৩টি ভবন সমীক্ষা করে অগ্নিঝুঁকি নির্ণয় করে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

এই হিসাব অনুযায়ী, প্রতি মাসে গড়ে প্রশিক্ষণের জন্য ৯৭টি, মহড়ার জন্য ১৬টি এবং ভবন সমীক্ষার জন্য ৭টি আবেদন জমা পড়েছে। অন্যদিকে চলতি মাসের প্রথম ১৬ দিনেই প্রশিক্ষণের জন্য ১৮১টি, মহড়ার জন্য ১২৩টি এবং ভবন সমীক্ষার জন্য ১৩টি আবেদন জমা পড়েছে।

কোনো ফি ছাড়াই সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে এই সেবা দিয়ে থাকে ফায়ার সার্ভিস।

ফায়ার অ্যান্ড সেফটি সেলের দায়িত্বে থাকা উপসহকারী পরিচালক খন্দকার আবদুল জলিল প্রথম আলোকে বলেন, বনানীতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পর সেবা চেয়ে আবেদনের সংখ্যা বেড়েছে। বিশেষ করে মহড়ার আবেদন অনেক বেশি আসছে। আগে মাসে মহড়ার জন্য গড়ে ২০টি আবেদনও আসত না। এখন ১০০টির বেশি আসছে। প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি ব্যক্তিপর্যায়ের এমন আবেদনের সুযোগ রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, অগ্নিনিরাপত্তা নিশ্চিত করতে জনগণকে এগিয়ে আসতে হবে। তাঁদের প্রশিক্ষণ থাকতে হবে। তাহলেই অগ্নিঝুঁকি কমে আসবে।

ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা গেছে, প্রশিক্ষণের জন্য ১৫ হাজার টাকা, যৌথ মহড়ার ক্ষেত্রে ছয়তলা পর্যন্ত ভবনের জন্য ছয় হাজার টাকা ও ছয়তলার ওপরে ভবনের জন্য ১০ হাজার টাকা এবং ভবনের অগ্নিঝুঁকি নিরূপণসংক্রান্ত সমীক্ষা ও পরামর্শের জন্য পাঁচ হাজার টাকা ফি নেওয়া হয়। ফির টাকা ‘ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স বেসামরিক প্রশিক্ষণ তহবিল’-এর অনুকূলে অগ্রণী ব্যাংকের ঢাকার আগামসিহ লেন শাখায় পে–অর্ডার বা ব্যাংক ড্রাফট করে পরিশোধ করতে হয়।

খন্দকার আবদুল জলিল বলেন, ২০০৭ সাল থেকেই এই হারে ফি নেওয়া হচ্ছে। কাজটি সেবামূলক, তাই আর ফি বাড়ানো হয়নি। তিনি বলেন, শুধু ঢাকা নয়, দেশের যেকোনো জায়গা থেকে আবেদন করার সুযোগ আছে। আবেদন পেলে কাছের ফায়ার সার্ভিস স্টেশন থেকে প্রয়োজনীয় সেবা দেওয়া হয়।

ফায়ার সার্ভিসের তথ্য অনুযায়ী, প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে অগ্নিপ্রতিরোধ, নির্বাপণ, প্রাথমিক চিকিৎসা ও জরুরি উদ্ধারসংক্রান্ত শিক্ষা দেওয়া হয়। এটি চলে দুই দিন। এতে একটি প্রতিষ্ঠানের সর্বোচ্চ ৪০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী অংশ নিতে পারবেন। মহড়ার ক্ষেত্রে আবেদনকারী প্রতিষ্ঠানে বা আবেদনকারী ব্যক্তির ভবনে কৃত্রিম অগ্নিকাণ্ড পরিস্থিতি সৃষ্টি করে প্রতিষ্ঠানের বা ভবনের কর্মী-সরঞ্জাম এবং গাড়ি ও জনবল সম্পৃক্ত করে যৌথভাবে মহড়া দেওয়া হয়। এ ছাড়া অগ্নিঝুঁকি নিরূপণের জন্য আবেদন করা হলে ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা সরেজমিনে ভবন বা প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করে অগ্নিঝুঁকি নিরূপণ করেন। থাকলে কী কী ধরনের ব্যবস্থা নিতে হবে, সে–সংক্রান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়।