তথ্যপ্রযুক্তি খাতের তরুণ উদ্যোক্তাদের উদ্ভাবনমুখী হওয়ার আহ্বান সজীব ওয়াজেদ জয়ের

দুই দিনব্যাপী চতুর্থ বিপিও সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে ও তাঁর তথ্যপ্রযুক্তি-বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়। ছবি: বাসস
দুই দিনব্যাপী চতুর্থ বিপিও সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে ও তাঁর তথ্যপ্রযুক্তি-বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়। ছবি: বাসস

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে ও তাঁর তথ্যপ্রযুক্তি-বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় এ খাতের তরুণ উদ্যোক্তাদের প্রতি বিশ্বব্যাপী আইসিটি সেক্টরের নেতৃত্ব গ্রহণে তাঁদের নিজস্ব উদ্ভাবনী ধারণা সৃষ্টির আহ্বান জানিয়েছেন। আজ রোববার রাজধানীর একটি হোটেলে দুই দিনব্যাপী চতুর্থ বিপিও সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তরুণ আইটি উদ্যোক্তাদের প্রতি এ আহ্বান জানান সজীব ওয়াজেদ জয়। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকলে দেশের উন্নতি হয়। 

সজীব ওয়াজেদ জয় বলেন, ‘বিজনেস প্রসেস আউটসোর্সিং (বিপিও) শিল্পের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিবর্গের প্রতি আমার বার্তা হচ্ছে, আপনারা আপনাদের নিজস্ব উদ্ভাবন এবং ভিশন ঠিক করুন, নিজস্ব ধারণা অনুসন্ধান করুন, নতুন নতুন প্রযুক্তি আবিষ্কার করুন, আমরা অনুকরণ করব না, উদ্ভাবন করব।’ তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত বিশ্বে আউটসোর্সিংয়ের কেন্দ্র হিসেবে বিশ্বব্যাপী সুনাম অর্জন করেছে, যার ফলে তাদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা কঠিন। ভারতের আইটি ও বিপিও প্রতিষ্ঠানগুলোকে অনুকরণের চেষ্টা করে আমাদের বিপিও শিল্পের ভারতের মুখোমুখি বা পায়ে পায়ে চলার কোনো প্রয়োজন নেই।’

জয় বলেন, ‘আমাদের তথ্যপ্রযুক্তি খাত এখনো অনেক নতুন এবং বাংলাদেশি বিপিও উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠানগুলোর উচিত নিজস্ব উদ্ভাবনী ধারণার মাধ্যমে নতুন সুযোগ খুঁজে দেখা। কারণ এখন নতুন নতুন পরিষেবা অনলাইনেই আসছে, যা আমরা কল্পনাও করিনি।’

সজীব ওয়াজেদ বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকলে দেশের উন্নতি হয়। বিশ্বের মধ্যে বাংলাদেশ দ্রুতগতিতে প্রযুক্তি ক্ষেত্রে উন্নতি করেছে। আমরা আরও দ্রুত দেশের উন্নয়ন করতে চাই।’ তিনি বলেন, দক্ষ জনশক্তি তৈরি করার ক্ষেত্রে আইসিটি খাতে তরুণদের বিভিন্ন প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করছে সরকার। কিন্তু দুঃখজনক হচ্ছে আইসিটি ক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণ ১০ ভাগেরও কম। তিনি এই সংখ্যা অচিরেই ৫০ ভাগে উন্নীত হবে বলে আশা প্রকাশ করে বলেন, ‘১০ বছর আগে কেউ কল্পনাও করেনি ইউনিয়ন পর্যায়ের মানুষ ইন্টারনেট–সেবা পাবে। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার সফলতার সঙ্গে সেটা করতে সক্ষম হয়েছে। আইসিটি খাতে উন্নয়নের জন্য আমরা বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি এবং অল্প খরচেই এই উন্নয়ন করে দেখাচ্ছি।’

ডাক ও টেলিযোগাযোগ ও আইসিটিমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। এতে স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব কল সেন্টার অ্যান্ড আউটসোর্সিংয়ের (বিএসিসিও) সভাপতি ওয়াহেদ শরীফ। আইসিটি বিভাগের সচিব এন এম জিয়াউল আলম, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সচিব অশোক কুমার বিশ্বাস এবং বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশনের (বিটিআরসি) চেয়ারম্যান মো. জহিরুল হকও অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।

২০০৮–এ ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ২৪ লাখ, বর্তমানে ৯ কোটি
মোস্তাফা জব্বার বলেন, ‘গত ১০ বছর শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার প্রযুক্তি খাতকে গুছিয়ে এনেছে। এখন দ্রুত বেগে অগ্রগতির পালা। অনুন্নত দেশের তালিকা থেকে আজ আমরা উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় ঠাঁই পেয়েছি। উন্নত দেশ হতে হলে প্রযুক্তি খাত থেকে আয় বাড়াতে হবে।’ এক্ষেত্রে বিপিও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে তিনি আশাবাদ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, বিশ্বব্যাপী বিপিও খাতের বাজার প্রায় ৬০০ বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশের বিপিও ব্যবসার বাজার গত ১০ বছরে ইতিমধ্যেই ৩০০ মিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। সেই সম্ভাবনাকে সবার সামনে তুলে ধরা এবং তরুণ প্রজন্মের কাছে এই বার্তা পৌঁছে দেওয়ার এখনই সময়। এই খাতকে যথাযথভাবে কাজে লাগালে এটি দেশের উন্নয়নের গতিকে যে আরও ত্বরান্বিত করবে, এ কথা নিশ্চিতভাবে বলা যায়।

মোস্তাফা জব্বার বলেন, ‘২০০৮ সালে যেখানে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছিল ২৪ লাখ, বর্তমানে সেই সংখ্যা ৯ কোটি ছাড়িয়ে গেছে। কেবল গ্রাহকের সংখ্যা বাড়ানোই নয়, ব্যবহারকারীদের জন্যে ইন্টারনেট যেন নিরাপদ হয়, সে জন্যও আমরা কাজ করে যাচ্ছি। ২০০৫ সালে যে ব্যান্ডউইডথের দাম ছিল ৭৫ হাজার টাকা, সরকার এখন তা ৪০০ টাকায় নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে। মোবাইল ফোন ইন্টারনেটে আমরা ইতিমধ্যেই ফোর–জি সেবা চালু করেছি।’ অচিরেই একে ফাইভ–জিতে উন্নীত করার পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে বলে জানান মোস্তাফা জব্বার।

জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, ‘আমাদের দেশের মোট জনগোষ্ঠীর দুই-তৃতীয়াংশ তরুণ। এ হিসাবে তরুণদের সংখ্যা প্রায় ১১ কোটি। এই তরুণ জনগোষ্ঠীই আমাদের সম্পদ। বিপিও খাতে এখন বাংলাদেশের প্রচুর দক্ষ জনবল প্রয়োজন। আমরা যদি এই তরুণদের প্রশিক্ষিত করে এই খাতে কাজে লাগাতে পারি, তাহলে আমরা খুব দ্রুতই বিপিওর বিশ্ব বাজারের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ অর্জন করতে পারব।’ তিনি বলেন, ‘তরুণ জনগোষ্ঠীকে সফলভাবে কাজে লাগিয়ে দক্ষিণ কোরিয়া তাদের অর্থনীতিকে উন্নত করতে পেরেছে। আমাদের তরুণদের কর্মসংস্থানের হার বাড়াতে বাংলাদেশ সরকার আইসিটি খাতে তাদের প্রশিক্ষণের জন্যে নানা ধরনের উদ্যোগ নিয়েছে। এই প্রশিক্ষিত জনগোষ্ঠীকে বিপিও খাতে সঠিকভাবে কাজে লাগানোর মাধ্যমে কয়েক বছরের মধ্যেই দেশে প্রচুর কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে।’ বর্তমানে বিপিও খাতে প্রায় ৫০ হাজার তরুণ-তরুণীর কর্মসংস্থান হয়েছে উল্লেখ করে ২০২১ সালের মধ্যে প্রায় ১ লাখ কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করা সম্ভব হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করে জুনাইদ আহমেদ পলক।