আইন প্রয়োগকারী সংস্থার একাংশ দুর্নীতিগ্রস্ত: টিআইবি

ফেনীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হত্যাকাণ্ডে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনের কঠোরতম প্রয়োগ নিশ্চিত করার দাবিতে মানববন্ধন করেছে টিআইবি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির সামনে, ২১ এপ্রিল, ঢাকা। ছবি: সংগৃহীত
ফেনীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হত্যাকাণ্ডে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনের কঠোরতম প্রয়োগ নিশ্চিত করার দাবিতে মানববন্ধন করেছে টিআইবি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির সামনে, ২১ এপ্রিল, ঢাকা। ছবি: সংগৃহীত

নুসরাত হত্যাকাণ্ডে দেশের স্থানীয় প্রশাসন ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার ভূমিকার সমালোচনা করে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেছেন, ‘আমাদের আইন প্রয়োগকারী সংস্থার একাংশ দুর্নীতিগ্রস্ত, রাজনৈতিকভাবে প্রভাবান্বিত ও ব্যাপক অনিয়মের সঙ্গে জড়িত। প্রতিটি অপরাধে তারা অপরাধীর পাশে দাঁড়িয়ে অপরাধীকে সুরক্ষা দেয়। স্থানীয় প্রভাবশালীদের যোগসাজশে দেশের আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও প্রশাসনগুলো এমন অবস্থা তৈরি করে, যারা অপরাধের শিকার, তাদের রীতিমতো ভুক্তভোগী হতে হয়, পালিয়ে বেড়াতে হয়। ’

গতকাল রোববার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের (টিএসসি) সামনে ফেনীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হত্যাকাণ্ডে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনের কঠোরতম প্রয়োগ নিশ্চিতের দাবিতে টিআইবি আয়োজিত মানববন্ধনে ইফতেখারুজ্জামান এসব কথা বলেন।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘নুসরাতকে যারা প্রত্যক্ষভাবে হত্যা করেছে, শুধু তারাই এর জন্য দায়ী নয়। এর সঙ্গে স্থানীয় প্রশাসন, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, স্থানীয় রাজনৈতিক ও অন্যভাবে প্রভাবশালী ব্যক্তিবর্গ এবং সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষ সবাই জড়িত। উদ্বেগের বিষয়, যেখানেই এ ধরনের ঘটনা ঘটে, এ রকম সিন্ডিকেটের উৎপত্তি হয়। সিন্ডিকেটের হাতেই এ ধরনের অপরাধগুলো সংঘটিত হয়।’

ফেনীর নুসরাত হত্যাকাণ্ডের ঘটনাকে সরকারের জন্য একটি ‘অগ্নিপরীক্ষা’ উল্লেখ করে ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘সরকার যদি প্রমাণ করতে চায় যে বাংলাদেশ আইনের শাসনের দেশ, নুসরাত হত্যাকাণ্ডের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করে তারা একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারে। যদি নুসরাত হত্যার বিচার না হয়, সরকারের ওপর দেশবাসীর কোনো আস্থা থাকবে না, রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিতদের প্রতি কোনো ধরনের আস্থা বা বিশ্বাস এ দেশের মানুষের থাকবে না।’

নুসরাত হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি করে মানববন্ধন করেছে টিআইবি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির সামনে, ২১ এপ্রিল, ঢাকা। ছবি: সংগৃহীত
নুসরাত হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি করে মানববন্ধন করেছে টিআইবি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির সামনে, ২১ এপ্রিল, ঢাকা। ছবি: সংগৃহীত

বিচারপ্রক্রিয়ার ওপর আস্থাহীনতার কথা জানিয়ে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘বিচারকদের কাছ থেকেই আমরা শুনেছি, বিচারপ্রক্রিয়ার ওপর তাঁদের নিজেদেরই আস্থা হারিয়ে গেছে। এর জন্য অন্যতম কারণ যারা, তারা হচ্ছে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা ও স্থানীয় প্রশাসন। নুসরাতের ঘটনায় আমরা দেখেছি, স্থানীয় আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, প্রশাসন ও বিচারিক কর্তৃপক্ষ কীভাবে এই অপরাধের সঙ্গে জড়িত ছিল, কীভাবে অপরাধকে উৎসাহিত করেছে। কাজেই আমাদের আস্থার ভিত্তি খুবই কম। তা সত্ত্বেও স্বাধীন নাগরিক হিসেবে আমরা আমাদের দাবি ও আন্দোলন অব্যাহত রাখব।’

নুসরাত হত্যাকাণ্ডের যথাযথ বিচার দাবি করে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘নুসরাত হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় যারা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত, তাদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। যখন মানুষ জানবে যে অপরাধ করলে বা অপরাধীকে সুরক্ষা দিলে শাস্তি পেতে হয়, তখন আমাদের আর পথে নামতে হবে না। বাস্তবে আইনের শাসন আছে, এমন একটা দেশে আমরা বসবাস করতে চাই।’

মানববন্ধনে আরও উপস্থিত ছিলেন টিআইবির উপদেষ্টা নির্বাহী ব্যবস্থাপনা অধ্যাপক ড. সুমাইয়া খায়ের, গবেষণা ও পলিসি বিভাগের পরিচালক মোহামম্মদ রফিকুল হাসান, সিভিক এনগেজমেন্ট বিভাগের পরিচালক ফারহানা ফেরদৌস, অর্থ ও প্রশাসন বিভাগের পরিচালক আবদুল আহাদ, এফসিএমএ এবং আউটরিচ ও কমিউনিকেশন বিভাগের পরিচালক শেখ মঞ্জুর-ই-আলম। এ ছাড়া টিআইবির সদস্য, টিআইবির অনুপ্রেরণায় ঢাকার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের নিয়ে গঠিত ইয়ুথ এনগেজমেন্ট অ্যান্ড সাপোর্ট (ইয়েস) গ্রুপের সদস্যসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী, টিআইবি কর্মী ও নানা শ্রেণি–পেশার মানুষ এই মানববন্ধনে অংশ নেন।