মুখরিত জীবনের চলার বাঁকে...

নকিব খান ও আবদুল্লাহ আল মামুন। দুই সহপাঠী। দুজনেই গায়ক, গীতিকার ও সুরকার। দুজনের হাত দিয়ে বের হয়েছে বেশ কয়েকটি কালজয়ী গান। মামুনের লেখা গান ‘তোরে পুতুলের মতো করে সাজিয়ে...’ কিংবা ‘এই মুখরিত জীবনের চলার বাঁকে...’ গান দুটো ৪০ বছর ধরে সমান জনপ্রিয়। আবার এ গান দুটির সুরকার নকিব খান। তারুণ্যের দিনগুলো থেকে দুজনে একই সৃষ্টির পথে আছেন। আর এখন জীবিকার তাগিদে দুজন দুই দেশে।

গত শুক্রবার সন্ধ্যায় রাজধানীর আর্মি গলফ ক্লাবে একসঙ্গে গান গেয়ে মঞ্চ মাতালেন তাঁরা দুজন। শুধু নকিব, মামুন নন সেদিন গান গেয়েছেন জনপ্রিয় গায়ক শাহরিয়ার খালেদও। গেয়েছেন এ দেশের একসময়ের জনপ্রিয় ব্যান্ড সৈকতচারীর একমাত্র নারী কণ্ঠশিল্পী ডা. নজিবুন নাহার। আর এদের কণ্ঠে কণ্ঠ মিলিয়ে নেচে নেচে আনন্দে আত্মহারা হয়েছেন বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত কীর্তিমান কিছু মানুষ। তাঁরা সবাই দেড় শ বছরের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম কলেজের প্রাক্তন শিক্ষার্থী। এই কলেজ থেকেই সবাই ১৯৭৭ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।
সেই ৭৭ সালের পর দেশ–বিদেশের নানা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করেন তাঁরা। বর্ণাঢ্য কর্মজীবনও কাটিয়েছেন কয়েক যুগ। ৪২ বছর পর এখন কৃতিত্বপূর্ণ কর্মজীবনেরও ইতি ঘটতে চলেছে অনেকের। জীবনের একটি প্রান্তে এসে এরা যেন সেদিন ফিরে পেয়েছেন কলেজজীবনের দিনগুলোকে।
৭৭ সালের এইচএসসি পরীক্ষার কথা মনে রেখে আয়োজনের নাম দেওয়া হয়েছে ‘ভালোবাসার ৭৭’। সেই ভালোবাসাময় সন্ধ্যায় বয়স ভুলে আড্ডায় মেতেছেন, গানে মাতোয়ারা হয়ে নেচেছেন চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মোহাম্মদ ইসমাইল খান, চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী ইয়াকুব সিরাজ উদ দোলা, মিরপুর ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক মুনমুন সাদ, ঢাকা নর্থ সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী সৈয়দ কুদরত উল্লাহ, চট্টগ্রাম বন্দরের সাবেক প্রধান প্রকৌশলী নাজমুল হক, শেভরন ল্যাব হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক মোহাম্মদ সাদেক, ব্যাংকার সোহেল খান, জয়নুল আবেদিন মুকুল, চট্টগ্রাম বন্দরের সাবেক প্রকৌশলী নাজমুল হক।
অবসরজীবনটাকে প্রাণময় করে তুলতে সহপাঠীদের নিয়ে কিছু একটা করার ইচ্ছে থেকেই বছরখানেক আগে প্রথমবারের মতো ভালোবাসার ৭৭–এর আয়োজন করেছেন ডলফিন মেরিটাইম সার্ভিসেসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এস এম এ হান্নান। সঙ্গে ছিলেন ইএনটির বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আলমগীর চোধুরী, মাস্টার ম্যারিনার মাহফুজুল ইসলাম, অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবদুল হালিম, ইস্টার্ন রিফাইনারির সাবেক উপমহাব্যবস্থাপক জহির উদ্দিন বাদল।
ঢাকার এই আয়োজনে কাজ করেছেন লে. কর্নেল (অব) রুহুল আমিন, আনসার ভিডিপি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ জালাল উদ্দিন।
মেরিন প্রকৌশলী এস এম এ হান্নান বললেন, ‘বয়স বাড়বে, কিন্তু মন থেকে যেন তারুণ্য না যায়।’ ঠিক একই রকম বললেন আয়োজনের অন্যতম পৃষ্ঠপোষক এসএ গ্রুপ অব কোম্পানির সাহাবুদ্দিন আলম এবং সাদ মুসা গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মহসিন।
অনুষ্ঠানে যোগ দেন চট্টগ্রাম কলেজের বর্তমান অধ্যক্ষ আবুল হাসান। তিনিও এই কলেজের ৭৭ সালের এইচএসসি পরীক্ষার্থী।
হারানো দিনের টানে দেশের বাইরে থেকে উড়ে আসেন দুবাইপ্রবাসী খোরশেদ আলম। গায়ক প্রকৌশলী আবদুল্লাহ আল মামুনও এসেছেন কাতার থেকে।
নকিব, মামুন এবং শাহরিয়ার খালেদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সবাই গেয়ে ওঠেন এই মুখরিত জীবনের চলার বাঁকে। গানের কথায় আছে—ছোট্টবেলার কত রং করা মুখ, সুর তোলে আজও এই মনকে ঘিরে। জীবনের একটা পর্যায়ে এসে নিজেদের জীবনের অনুভবটাই যেন গানের মধ্যে অনুরণিত হয়ে ওঠে সেদিনের সন্ধ্যায়।