সেই নিয়াজুলের অস্ত্রের লাইসেন্স নবায়নের তোড়জোড়

>
গত বছর সেলিনা হায়াৎ আইভীর ওপর হামলার সময় পিস্তল উঁচিয়ে ধরেছিলেন নিয়াজুল ইসলাম খান। ফাইল ছবি
গত বছর সেলিনা হায়াৎ আইভীর ওপর হামলার সময় পিস্তল উঁচিয়ে ধরেছিলেন নিয়াজুল ইসলাম খান। ফাইল ছবি

*অস্ত্রের লাইসেন্স নবায়নে নিয়াজুলের আবেদন
*মতামত চেয়ে পুলিশের বিশেষ শাখায় চিঠি
*আইভীর ওপর হামলার দিন পিস্তলটি খোয়া যায়
*সে সময় পিস্তলটি উদ্ধার করে পুলিশ

নারায়ণগঞ্জে ফুটপাতে হকার বসানোর বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ায় গত বছর সিটি মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীর ওপর সশস্ত্র হামলা হয়। হামলার সময় পিস্তল উঁচিয়ে ধরেছিলেন নিয়াজুল ইসলাম খান। ঘটনার পরপরই পিস্তলটি পরিত্যক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে হেফাজতে নেয় পুলিশ। সেই পিস্তলের লাইসেন্স নবায়নের তোড়জোড় শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কার্যালয়ে আবেদন করেছেন নিয়াজুল।

নিয়াজুলের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসন পুলিশের বিশেষ শাখায় চিঠি দিয়েছে। সপ্তাহখানেক আগে চিঠিটি সেখানে পৌঁছায়। গত ২২ জানুয়ারি জেলা ম্যাজিস্ট্রেট রাব্বী মিয়া স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে পিস্তলটির লাইসেন্স নবায়নের বিষয়ে আইনি মতামত জানতে চাওয়া হয়।

জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, শহরের ৭১ নম্বর উত্তর চাষাঢ়া এলাকার নিয়াজুল ইসলামের নামে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের আগ্নেয়াস্ত্র শাখা থেকে ইস্যু করা পিস্তলটির লাইসেন্স ২০১৮ সাল পর্যন্ত নবায়ন করা। লাইসেন্সটি ২০১৯ সালের জন্য নবায়ন করতে অস্ত্র প্রদর্শন করে আবেদন করেছেন নিয়াজুল। অবশ্য মেয়র আইভীর ওপর ওই হামলার দিন নিয়াজুলের পিস্তলটি খোয়া যায়। সে সময় পিস্তলটি উদ্ধার করে পুলিশ।

ফতুল্লা মডেল থানার ওসি আসলাম হোসেন জানান, নিয়াজুলের অস্ত্রের লাইসেন্স নবায়নের আবেদনের চিঠি এসেছে। তদন্তের জন্য কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তদন্ত শেষে প্রতিবেদন দাখিল করা হবে। নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার ওসি মো. কামরুল ইসলাম জানান, নিয়াজুলের সেই অস্ত্র সদর মডেল থানায় পুলিশি হেফাজতে রয়েছে। দ্রুত এ বিষয়ে তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়া হবে।

নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ও নারায়ণগঞ্জের সাত খুন মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী সাখাওয়াত হোসেন বলেন, যেহেতু একটি ঘটনায় মামলার আলামত হিসেবে অস্ত্রটি পুলিশি হেফাজতে আছে, তাই এখন অস্ত্রটি নবায়ন বা ফেরত দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। সুতরাং অস্ত্রটি এখন আদালতের জিম্মায় আছে।

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক রাব্বী মিয়া গতকাল সোমবার মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, নিয়াজুলের আবেদন পাওয়া গেছে। আবেদনটি পুলিশের কাছে পাঠানো হয়েছে।

এ বিষয়ে সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের আহ্বায়ক রফিউর রাব্বি বলেন, গত বছর ১৬ জানুয়ারি নিয়াজুল ও শাহ নিজাম হকার বসানোকে কেন্দ্র করে প্রকাশ্যে অস্ত্র উঁচিয়ে মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীর ওপর হামলা করেছেন। দেশের বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে সে ছবি ছাপা হয়েছে। মেয়র মামলা করতে গেলে থানার পুলিশ সে মামলা নেয়নি। ফলে শামীম ওসমানের এসব সন্ত্রাসী বাহিনী আরও বেপরোয়া হয়েছে। তারা আজ জনগণ ও প্রশাসনের বিরুদ্ধেও অবস্থান গ্রহণ করেছে। প্রশাসনকে হুমকি দিচ্ছে।

নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান বলেন, শামীম ওসমানের ক্যাডার শীর্ষ সন্ত্রাসী নিয়াজুল প্রকাশ্যে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি মেয়র আইভীকে হত্যার উদ্দেশ্যে পরিকল্পিতভাবে তাঁর ওপর সশস্ত্র হামলা করেছেন। সেই সন্ত্রাসীকে পুলিশ গত দেড় বছরেও গ্রেপ্তার করেনি। উল্টো ওই সন্ত্রাসী হামলায় ব্যবহৃত সেই অস্ত্রের লাইসেন্স নবায়নের জন্য কীভাবে আবেদন করেন? অবিলম্বে সন্ত্রাসী নিয়াজুল ইসলামকে গ্রেপ্তার ও তাঁর অস্ত্রের লাইসেন্স বাতিল করতে হবে।

গত বছর ১৬ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জ নগরের চাষাঢ়ায় ফুটপাতে হকার বসানোকে কেন্দ্র করে মেয়র আইভী ও তাঁর সমর্থকদের ওপর হকার ও সাংসদ শামীম ওসমানের সমর্থকেরা সশস্ত্র হামলা চালান। এতে মেয়র আইভীসহ অর্ধশতাধিক লোক আহত হন।

হামলার সময় সাংসদ শামীম ওসমানের ক্যাডার নিয়াজুল ইসলাম ও শাহ নিজামকে (নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক) পিস্তল উঁচিয়ে ধরতে দেখা যায়।

ওই ঘটনায় জেলা প্রশাসন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) জসীম উদ্দিন হায়দারকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে। তদন্ত কমিটিকে সাত কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়।

ঘটনার পরদিন ১৭ জানুয়ারি মেয়র আইভীর সমর্থক ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে অস্ত্র ছিনতাই ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে থানায় লিখিত অভিযোগ দেন নিয়াজুল। পাশাপাশি হামলার ঘটনার ছয় দিন পর ২২ জানুয়ারি মেয়র আইভীকে পরিকল্পিতভাবে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে অস্ত্রধারী নিয়াজুলসহ নয়জনের নাম উল্লেখ ছাড়াও অজ্ঞাতনামা এক হাজার জনকে আসামি করে সিটি করপোরেশনের আইন কর্মকর্তা জি এম এ সাত্তার সদর মডেল থানায় অভিযোগ দাখিল করেন। পুলিশ তা মামলা হিসেবে গ্রহণ না করে জিডি হিসেবে নেয়।

অন্যদিকে নারায়ণগঞ্জ সদর থানার পরিদর্শক জয়নাল আবেদীন বাদী হয়ে পুলিশের ওপর হামলা ও সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে অজ্ঞাতনামা ৫০০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। পুলিশের মামলার তদন্ত শেষে নিয়াজুল ও মেয়র আইভীর পক্ষের জিডির বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে সে সময় পুলিশ জানায়।

আইভীর ওপর হামলার ঘটনায় নিয়াজুলের খোয়া যাওয়া অস্ত্রটি গত বছরের ২৫ জানুয়ারি নগরের বঙ্গবন্ধু সড়কের সাধু পৌলের গির্জার সামনে ফুলের টবের ওপর থেকে প্লাস্টিকে মোড়ানো অবস্থায় উদ্ধার করে সদর মডেল থানার পুলিশ।