১৯৮০ টাকায় বোরকা কেনেন মণি

কামরুন নাহার মণি,  উম্মে সুলতানা পপি
কামরুন নাহার মণি, উম্মে সুলতানা পপি
>

*কামরুন নাহার মণি ও উম্মে সুলতানা পপির জবানবন্দি
*১৯ এপ্রিল উম্মে সুলতানা আদালতে জবানবন্দি দেন
*২০ এপ্রিল কামরুন নাহার আদালতে জবানবন্দি দেন
*দুজনই নিহত নুসরাতের সহপাঠী ও আলিম পরীক্ষার্থী।

ফেনীর সোনাগাজীর মাদ্রাসা ছাত্রী নুসরাত জাহানকে হত্যা করতে ১ হাজার ৯৮০ টাকা দিয়ে দুটি বোরকা কিনেছিলেন কামরুন নাহার মণি। তিনি বড় মসজিদের কাছের ফুটপাত থেকে আরও চার জোড়া হাতমোজা কিনেছিলেন। ঘটনার দিন ৬ এপ্রিল সকালে শাহাদাত হোসেন শামীমের হাতে বোরকা ও মোজা তুলে দেন তিনি। এরপর মাদ্রাসার প্রশাসনিক ভবনের ছাদে কৌশলে নুসরাতকে ডেকে নিয়ে তাঁর হাত-পা বেঁধে গায়ে আগুন লাগিয়ে দেন পাঁচজন।

মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত হত্যা মামলায় কামরুন নাহার মণি এবং উম্মে সুলতানা পপি ওরফে শম্পা ১৬৪ ধারায় দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এসব কথা বলেছেন। ১৯ এপ্রিল উম্মে সুলতানা এবং ২০ এপ্রিল কামরুন নাহার ফেনীর জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম শরাফ উদ্দিন আহমেদের আদালতে জবানবন্দি দেন। তাঁরা দুজনই নিহত নুসরাতের সহপাঠী এবং আলিম পরীক্ষার্থী।

অগ্নিদগ্ধ নুসরাত চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১০ এপ্রিল রাতে ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে মারা যান। এর আগে নুসরাতকে শ্লীলতাহানির অভিযোগে গত ২৭ মার্চ সোনাগাজী মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলার বিরুদ্ধে মামলা হয়। মামলা তুলে নিতে রাজি না হওয়ায় নুসরাতকে প্রশাসনিক ভবনের (সাইক্লোন শেল্টার) ছাদে কৌশলে ডেকে নিয়ে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়।

আদালতে মণি ও পপি যা বলেছেন
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, কামরুন নাহার মণি জবানবন্দিতে বলেছেন, ২৭ মার্চ অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলা নুসরাতের গায়ে হাত দিলে মামলা হয়। ওই দিন পুলিশ অধ্যক্ষকে গ্রেপ্তার করে। অধ্যক্ষের মুক্তির দাবিতে ২৮ মার্চ মানববন্ধনের খরচের জন্য ৫০০ টাকা করে চাওয়া হয়। অধ্যক্ষের মুক্তির দাবিতে ২৮ ও ৩০ মার্চ মানববন্ধন হয়। কামরুন নাহার প্রথম দিনের মানববন্ধনে ছিলেন। ২ এপ্রিল বেলা দেড়টায় উম্মে সুলতানা কামরুন নাহারকে দুই হাজার টাকা দিয়ে দুটি বোরকা কিনতে বলেন। শাহাদাত হোসেন ওরফে শামীম এই টাকা দিয়ে দুটি বোরকা কিনতে বলেছিলেন। কামরুন নাহার ওই দিনই সোনাগাজী বাজারের মানিক প্লাজা থেকে ১ হাজার ৯৮০ টাকা দিয়ে দুটো কালো বোরকা কেনেন। এরপর তিনি বড় মসজিদের কাছের ফুটপাতের দোকান থেকে কালো রঙের চার জোড়া হাতমোজা কেনেন। ৬ এপ্রিল মাদ্রাসার সাইক্লোন শেল্টারের কক্ষে ঢুকে শামীম, জাবেদ ও জুবায়েরকে দেখতে পান কামরুন নাহার। তিনি শামীমকে বোরকা ও মোজাগুলো দেন।

ঘটনার দিন অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে মামলা তুলে নিতে নুসরাতকে কৌশলে ছাদে ডেকে নিয়ে চাপ দেওয়া হয়। ছাদে আগে থেকে শামীম, জুবায়ের ও জাবেদ বোরকা ও হাতমোজা পরে ছিলেন। একটু পর উম্মে সুলতানা পপি আসেন। তাঁর পেছনে নুসরাত আসেন। নুসরাত এসে নিশাতকে খুঁজতে থাকেন। এর মধ্যে শামীম একটি কাগজ ধরিয়ে দিয়ে তাতে নুসরাতকে সই দিতে বলেন। কিন্তু অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে করা মামলা তুলে নিতে নুসরাত রাজি হননি। তখন শামীমের কথামতো উম্মে সুলতানা নুসরাতের ওড়না খুলে তা জুবায়েরের হাতে দেন। জুবায়ের ওড়না লম্বালম্বি দুই টুকরো করে ফেলেন। আর শামীমের কথামতো উম্মে সুলতানা নুসরাতের দুই হাত পিঠমোড়া করে বাঁধেন। এরপর শামীম নুসরাতের মুখ চেপে ধরেন।

শামীম তখন নুসরাতকে মেঝেতে ফেলে দেন। জুবায়ের নুসরাতের পা ধরে ফেলেন। ওড়নার অর্ধেক অংশ দিয়ে নুসরাতের পা বাঁধেন উম্মে সুলতানা। শামীম কামরুন নাহারকে নুসরাতের বুক চেপে ধরতে বলেন। কামরুন নাহার রাজি না হলে শামীম তাঁকে লাথি মেরে তাঁর পেটের বাচ্চার ক্ষতি করে দেবেন বলে হুমকি দেন। কামরুন নাহার পাঁচ মাসের গর্ভবতী। শামীমের কথামতো নুসরাতের বুক চেপে ধরেন তিনি। এরপর জাবেদ নুসরাতের শরীরে কেরোসিন ছিটিয়ে দেন। নুসরাতের গায়ে আগুন দিতে শামীম জুবায়েরকে হাত দিয়ে ইশারা দেন। জুবায়ের ম্যাচের জ্বলন্ত কাঠি নুসরাতের শরীরে ছুড়ে মারেন। উম্মে সুলতানা ভয়ে একটু দূরে সরে যান। এরপর কামরুন নাহার দৌড়ে নিচে নেমে পরীক্ষার হলে যান। নামার সময় উম্মে সুলতানাকে তিনি চম্পা (শম্পা) নামে ডেকে চলে আসেন। চম্পা নামে ডাকতে আগেই শিখিয়ে দেওয়া হয়েছিল। এরপর কামরুন নাহার আরও তিনটি পরীক্ষা দেন।

নুসরাত হত্যা মামলার তদন্ত করছে পিবিআই। গতকাল সোমবার মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআইয়ের পরিদর্শক মো. শাহ আলম প্রথম আলোকে বলেন, এ হত্যা মামলায় এখন পর্যন্ত ২০ জন গ্রেপ্তার হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ১৮ জনকে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। আর ৮ জন ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন।