মা-মেয়ের একসঙ্গে এইচএসসি

মা মাসুমা খাতুন (সামনে) এবার এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছেন। গতকাল রাজশাহীর বাগাতিপাড়া ডিগ্রি কলেজ কেন্দ্রে।  ছবি: প্রথম আলো
মা মাসুমা খাতুন (সামনে) এবার এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছেন। গতকাল রাজশাহীর বাগাতিপাড়া ডিগ্রি কলেজ কেন্দ্রে। ছবি: প্রথম আলো

লেখাপড়া শেখার অদম্য ইচ্ছেটা বুকের মধ্যে রেখেই মাসুমা খাতুনকে বিয়ের পিঁড়িতে বসতে হয়েছিল। বিয়ের পর পিঠাপিঠি দুই ছেলেমেয়েকে মানুষ করতেই ১৮টি বছর চলে গেল। সচরাচর কোনো কিশোরীর বুকের ভেতরে পুষে রাখা ইচ্ছেশক্তি আর এত বছর বাঁচে না। কিন্তু মাসুমা খাতুন দেখিয়ে দিয়েছেন কীভাবে জীবনকে জয় করা যায়। তিনি এবার নিজের মেয়ের সঙ্গেই এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছেন। মেয়ে রাজশাহী সরকারি মহিলা কলেজ থেকে আর তিনি নাটোরের বাগাতিপাড়া পৌর মহিলা বিএম কলেজ থেকে।
মাসুমা খাতুনের বাবার বাড়ি বাগাতিপাড়া উপজেলার বরইপাড়া গ্রামে। বিয়ে হয় বাগাতিপাড়া উপজেলা সদরে। স্বামী আবদুল মজিদ (৪৪) আনসার ব্যাটালিয়নে চাকরি করেন। সিপাহি (প্রশিক্ষক) পদে। তাঁর কর্মস্থল গাজীপুরে। দুই সন্তানের মধ্যে ছেলে বনি আমিন বড়। তিনি বাগাতিপাড়া সরকারি কলেজের œস্নাতক শ্রেণির ছাত্র। আর মেয়ে জান্নাতুল ফেরদৌস পড়ে বিজ্ঞান বিভাগে।

মেয়ে জান্নাতুল ফেরদৌস এবার এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছেন। গতকাল রাজশাহী সরকারি সিটি কলেজ কেন্দ্রে।  ছবি: প্রথম আলো
মেয়ে জান্নাতুল ফেরদৌস এবার এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছেন। গতকাল রাজশাহী সরকারি সিটি কলেজ কেন্দ্রে। ছবি: প্রথম আলো

কীভাবে নতুন করে পড়াশোনা শুরু করলেন, জানতে চাইলে মাসুমা খাতুন বলেন, ১৯৯৭ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিলেন। পড়াশোনার প্রতি তাঁর খুব আগ্রহ ছিল। কিন্তু পরীক্ষার আগেই বিয়ে হয়ে গেল। বিয়ের পর দুটি ছেলেমেয়েকে মানুষ করতে গিয়ে নিজের পড়ার কথা ভাবার সময়ই হয়নি। নবম শ্রেণি থেকে শুরু করতে হলো তাঁকে। সেবার মেয়েও নবম শ্রেণিতে ভর্তি হলো।
এই বয়সে এসেও কেন পড়াশোনা করতে চাইলেন, জানতে চাইলে মাসুমা খাতুন বলেন, ‘সমাজের আর দশটা মানুষের মতো আমিও একজন শিক্ষিত মানুষ হিসেবে যাতে নিজের পরিচয় দিতে পারি। এ জন্যই কষ্ট করে পড়াশোনাটা আবার শুরু করেছি।’
মাসুমা খাতুনের স্বামী আবদুল মজিদ বলেন, ‘আমার জন্য একটু কষ্ট হলেও আমি তার ইচ্ছেটার মর্যাদা দিয়েছি। সে যতদূর পড়াশোনা করতে পারে, আমি চালিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করব।’