আজ থেকে তিন দিনব্যাপী বৈশাখী মেলা ও বলীখেলা

আজ থেকে শুরু হচ্ছে জব্বার মিয়ার বলীখেলা ও মেলা। এ উপলক্ষে গতকাল থেকে চলছে মেলার প্রস্তুতি। এর মধ্যেই আসতে শুরু করেছে মাটির তৈরি বিভিন্ন জিনিস। গতকাল বিকেল পাঁচটায় লালদীঘি মাঠ এলাকায়।  প্রথম আলো
আজ থেকে শুরু হচ্ছে জব্বার মিয়ার বলীখেলা ও মেলা। এ উপলক্ষে গতকাল থেকে চলছে মেলার প্রস্তুতি। এর মধ্যেই আসতে শুরু করেছে মাটির তৈরি বিভিন্ন জিনিস। গতকাল বিকেল পাঁচটায় লালদীঘি মাঠ এলাকায়। প্রথম আলো

বছর ঘুরে আবার এল জব্বারের বলীখেলা। আবার এল বৈশাখী মেলা। আজ বুধবার থেকে তিন দিনব্যাপী বৈশাখী মেলা এবং বলীখেলা শুরু হচ্ছে। শতবর্ষী এই বলীখেলা এবং মেলার দিকে শুধু এই অঞ্চল নয়, সারা দেশের অনেক মানুষের দৃষ্টি থাকে। বংশপরম্পরায় এই মেলাকে ঘিরে চলছে তাঁদের বাণিজ্যের ঘরবসতি।

প্রতিবছর বাংলা ১২ বৈশাখ ঐতিহ্যবাহী আবদুল জব্বার স্মৃতি বলীখেলা বা কুস্তি প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। এই তারিখটির কথা কাউকে মনে করিয়ে দিতে হয় না। আমন্ত্রণ জানাতে হয় না। ১২ বৈশাখের দুই–তিন দিন আগে থেকে লালদীঘির মাঠ ও আশপাশের এলাকা নানা পণ্যে ভরে ওঠে। তিন দিনের মেলা হলেও সপ্তাহব্যাপী নানা পণ্যের পসরা সাজিয়ে চলে বিকিকিনি।

যুগ যুগ ধরে এটি নিয়ম হয়ে গেছে। বাবার হাত ধরে ছেলে, ছেলের হাত ধরে আরেক প্রজন্ম নাড়ির টানে ছুটে আসে এই মেলায়। নরসিংদীর অহিদ বেপারী (৪৮) প্রতিবছরের মতো এবারও মেলায় এসেছেন কুলা, ঢালা, মোড়াসহ নানা পণ্য নিয়ে। প্রায় ২০ বছর ধরে তিনি এই মেলায় আসছেন। বাবার হাত ধরে তিনি প্রথম জব্বারের বলীখেলায় এসেছিলেন।

অহিদ বলেন, ‘বাবা শুক্কুর আলী এবং দাদা নবাব আলী একই ব্যবসা করতেন। বাবার হাত ধরে জব্বারের বলীখেলায় এসেছিলাম। গত বছরও বাবা এসেছিলেন। মাস চারেক আগে তিনি মারা গেছেন। এখন একাই এলাম। বৈশাখ ঢুকলেই জব্বারের বলীখেলায় আসার জন্য পণ্য গুছিয়ে নিই। ’

বলীখেলা ও মেলা উপলক্ষে দুদিন আগে থেকেই লালদীঘির মাঠ ও আশপাশের কয়েক কিলোমিটার এলাকায় মেলা বসে গেছে। দূর–দূরান্ত থেকে ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন পণ্যসামগ্রী নিয়ে মেলায় ভিড় করেছেন। সাজসজ্জা, কারুপণ্য, গৃহস্থালিরসামগ্রী, হাঁড়ি–পাতিল, মোড়া, দা, খুন্তি, মাদুর, শীতলপাটি, আসবাবপত্র, গাছের চারা, পোশাক, হাত পাখা, ঝাড়ু, খেলনাসহ কী নেই মেলায়।

প্রতিবছর চট্টগ্রাম ছাড়াও কুমিল্লা, ঢাকা, কক্সবাজার, নোয়াখালী, ফেনী, বরিশাল, দিনাজপুরসহ বিভিন্ন স্থান থেকে ব্যবসায়ীরা পণ্যের পসরা নিয়ে আসেন। পটুয়াখালীর অমূল্য পাল ও কার্তিক পাল ২০ বছর ধরে মেলায় আসছেন। তাঁরা মাটির হাঁড়ি–পাতিল, গৃহসজ্জার জিনিসপত্র নিয়ে আসেন।

অমূল্য পাল বলেন, ‘বংশপরম্পরায় এই মেলায় মাটির জিনিসপত্র নিয়ে মেলায় আসি। দুই ট্রাক মালামাল নিয়ে এসেছি চারজনে। এখনো বেচাকেনা ভালোভাবে শুরু হয়নি। তবে শেষ পর্যন্ত সব বিক্রি করেই ফিরি প্রতিবার।’

বলীখেলা থেকে সারা বছরের ঝাড়ু, হাতপাখা, পাপোশ সংগ্রহ করেন অনেকে। এবারও চকরিয়া থেকে ফুলের ঝাড়ু নিয়ে এসেছেন মো. হারুন। এ ছাড়া চন্দনাইশের হাতপাখা নিয়ে মেলায় বিক্রির জন্য আসেন হোসেন আহমদ। তাঁরা বলেন, ‘বলীখেলার কথা কাউকে মাইক দিয়ে বলতে হয় না। মেলা আসার সাত–আট মাস আগে থেকে আমরা প্রস্তুতি নিই। কত বছর ধরে মেলায় আসছি সেটা এখন আর মনে নেই।’

গতকাল মঙ্গলবার কিছু কিছু ক্রেতা দেখা গেছে মেলায়। তবে বেচাকেনা খুব একটা হয়নি। মোমিনুর রহমান দুই জোড়া হাতপাখা কিনেছেন।

এবার এটি বলীখেলার ১১০তম আসর। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে তরুণ সমাজকে উদ্বুদ্ধ করতে বকশিরহাটের ব্যবসায়ী আবদুল জব্বার এই বলীখেলার প্রবর্তন করেছিলেন। বলীখেলা উপলক্ষে প্রতিবছর লালদীঘির মাঠ ও আশপাশে তিন দিনব্যাপী বৈশাখী মেলা বসে। আগামীকাল হবে ঐতিহ্যবাহী বলীখেলা।

বলীখেলাকে বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ করতে উদ্যোগ গ্রহণ করতে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ে মেলা কর্তৃপক্ষ আবেদন করেছে গত বছর। জানতে চাইলে মেলা উদ্‌যাপন কমিটির সভাপতি ওয়ার্ড কাউন্সিলর জহরলাল হাজারী বলেন, ‘জব্বারের বলীখেলাকে বিশ্ব ঐতিহ্যের অন্তর্ভুক্ত করতে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ে আবেদন দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এখনো তা বেশি দূর এগোয়নি। আমরা আশাবাদী।’