দুগ্ধ খামারিদের পাশে দাঁড়াতে হবে

বৈঠকে বক্তব্য দেন প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক হীরেশ রঞ্জন ভৌমিক। পাশে প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক নাথুরাম সরকার। প্রথম আলো
বৈঠকে বক্তব্য দেন প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক হীরেশ রঞ্জন ভৌমিক। পাশে প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক নাথুরাম সরকার। প্রথম আলো

দুধ উৎপাদনের জন্য ভারতে কৃষকদের ভর্তুকি দেওয়া হয়। কিন্তু বাংলাদেশের দুগ্ধ খামারিরা ভর্তুকি পাচ্ছেন না। অথচ দেশের মানুষের প্রোটিনের চাহিদা পূরণে খামারিরা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। দুগ্ধশিল্পের প্রসারের জন্যই খামারিদের পাশে দাঁড়াতে হবে সরকারকে। তাঁদের প্রণোদনার ব্যবস্থা করতে হবে। গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারের প্রথম আলো কার্যালয়ে ‘দেশীয় দুগ্ধশিল্পের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে আলোচকেরা এসব কথা বলেন।

বৈঠকে প্রাণ ডেইরি লিমিটেডের নির্বাহী পরিচালক মো. মুনিরুজ্জামান বলেন, ‘আমরাও চাই গুঁড়া দুধ আমদানি বন্ধ হোক। তবে স্থানীয় পর্যায়ে দুধের উৎপাদন না বাড়িয়ে আমদানি বন্ধ করা যাবে না। কৃষক ও ভোক্তা উভয় পক্ষের চাপে থাকি আমরা। ভোক্তার আস্থা তৈরির জন্য আমরা বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছি।’ তিনি বলেন, অনেক ক্ষেত্রে বিভ্রান্তিরকর ও অসত্য তথ্য প্রকাশ দুগ্ধশিল্পের বিকাশের জন্য বাধা তৈরি করে। এতে খামারি, ব্যবসায়ী ও ভোক্তা—সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

বর্তমানে দেশে গরুর খামারির সংখ্যা প্রায় ৮১ হাজার বলে বৈঠকে তথ্য তুলে ধরেন বাংলাদেশ ডেইরি ফারমারস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোহাম্মদ এমরান হোসেন। তিনি বলেন, ৫০ হাজারের বেশি খামারি স্নাতক পাস উদ্যোক্তা। ভারতের দুগ্ধ খামারিদের মতো বাংলাদেশের খামারিদেরও সরকার থেকে ভর্তুকি দেওয়ার দাবি জানান তিনি।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম লস্কর বলেন, দুধ সুষম খাবার। এটি সব বয়সী মানুষের জন্য দরকার। চরাঞ্চলগুলোতে খামার করার জন্য সরকার জমি ইজারা দেওয়ার ব্যবস্থা করলে ডেইরি শিল্প খাত আরও বাড়বে। তিনি বলেন, দেশে সংকর জাতের গরুর সংখ্যা কম, দেশি গরুর সংখ্যা বেশি। দুধের উৎপাদন বাড়াতে হলে সংকর জাতের গরুর সংখ্যা বাড়াতে হবে।

দুধের উৎপাদন বাড়াতে খামারি পর্যায়ে প্রশিক্ষণের ওপর জোর দেন বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের পরিচালক এস এম ইসহাক আলী। তিনি বলেন, খামার পর্যায়ে গরুর দুধ দোহনপদ্ধতি অস্বাস্থ্যকর, যা এই খাতে একটি বাধা। দুধ দোহনের পর চিলিং সেন্টারে (শীতলীকরণ কেন্দ্র) পাঠাতে অনেক সময় লাগে। মাঠপর্যায় থেকে যদি এসব নিয়ন্ত্রণ করা হয়, তাহলে মানসম্পন্ন দুধ উৎপাদন এবং দুধ নষ্ট হওয়া ঠেকানো সম্ভব। এ শিল্পকে বিকশিত করতে ক্ষুদ্র-মাঝারি উদ্যোক্তা পর্যায়ে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নিতে হবে।

গত ১০ বছরে দেশে দুধ উৎপাদন প্রায় চার গুণ বেড়েছে বলে জানান জাতীয় ডেইরি উন্নয়ন ফোরামের সভাপতি উম্মে কুলসুম। তিনি বলেন, বর্তমানে এই শিল্পের অবস্থা ভালো, এগিয়ে যাচ্ছে। তবে ভবিষ্যতে দুধ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে হলে ক্ষুদ্র খামারিদের স্বল্প সুদে ঋণ দিতে হবে। আগামী বাজেটে দুগ্ধশিল্পে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না, তা ভাবতে হবে।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেইরি সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক রায়হানুল হাবীব বলেন, দুগ্ধশিল্পের সবচেয়ে বড় সমস্যা সমন্বিত বিপণনব্যবস্থা নেই। ফলে ভোক্তা পর্যায়ে পর্যাপ্ত পরিমাণে মানসম্পন্ন দুধ পাওয়া যাচ্ছে না। মানুষ নানা ধরনের তরল পানীয় গ্রহণে আগ্রহী অথচ পুষ্টিগুণ দুধেই সবচেয়ে বেশি। এ বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে উদ্যোগ দরকার।

খামারিদের বাঁচাতে হলে গুঁড়া দুধ আমদানির ওপর শুল্ক বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন বাংলাদেশ ডেইরি ফারমারস অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব মো. শাহ এমরান। এটি করা না গেলে মানুষ সস্তায় পেয়ে তরল দুধের বদলে গুঁড়া দুধ খাবে। সরকারকে তাই গুঁড়া দুধের আমদানিকে নিরুৎসাহিত করতে হবে।

ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজের সহকারী অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম বলেন, সঠিকভাবে সংরক্ষণ না করা হলে দুধ দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়। দুধ সঠিকভাবে প্রক্রিয়াজাত এবং বিপণন করার জন্য সরকার ও খামারি উদ্যোক্তাদের সমন্বিত উদ্যোগ দরকার। বৈচিত্র্যপূর্ণ দুগ্ধজাত নানা পণ্য কম দামে কীভাবে দেওয়া যায়, সেটাও ভাবতে হবে।