হাতিরঝিলের পানি অতিমাত্রায় দূষিত

সোনারগাঁও হোটেলের পেছনে হাতিরঝিলে জমে আছে ময়লা–আবর্জনা। পুরো ঝিলের পানি দূষিত হয়ে পড়েছে। সম্প্রতি তোলা ছবি।  দীপু মালাকার
সোনারগাঁও হোটেলের পেছনে হাতিরঝিলে জমে আছে ময়লা–আবর্জনা। পুরো ঝিলের পানি দূষিত হয়ে পড়েছে। সম্প্রতি তোলা ছবি। দীপু মালাকার
>
  • ২০১৩ সালে হাতিরঝিল জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হয়
  • বছর না ঘুরতেই হাতিরঝিলের পানি দূষিত হওয়া শুরু করে
  • ঝিলের প্রায় সব অংশ থেকেই পচা পানির দুর্গন্ধ আসছে
  • ঝিলের পানি শোধনের জন্য নেওয়া প্রকল্পের অগ্রগতি ২০%

হাতিরঝিলের পানি অগ্রহণযোগ্য পর্যায়ে দূষিত। এই পানি জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। ঝিলটির পানি পরীক্ষার পর এ তথ্য পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। দূষিত এই পানি শোধন করতে ইতিমধ্যেই একটি প্রকল্প পাস হয়েছে। প্রায় ৪৯ কোটি টাকার প্রকল্পটি আগামী বছর শেষ হওয়ার কথা।

রাজধানীর বড় একটি অংশের জলাবদ্ধতা নিরসন, বৃষ্টি ও বন্যার পানি ধারণ, রাজধানীর পূর্ব ও পশ্চিম অংশের মধ্যে যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়নের পাশাপাশি নগরের নান্দনিকতা এবং পরিবেশের উন্নয়নের জন্য হাতিরঝিল প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হয়। ২০১৩ সালে এটি জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। এরপর বৃষ্টির পানি ধারণের পাশাপাশি এলাকাটি মানুষের অবসর কাটানোর উল্লেখযোগ্য একটি স্থানে পরিণত হয়েছে।

কিন্তু বছর না ঘুরতেই হাতিরঝিলের পানি দূষিত হওয়া শুরু করে। একসময় বিবর্ণ হয়ে কোথাও কালচে, আবার কোথাও সবুজ রং ধারণ করে। পানি থেকে আসতে থাকে উৎকট গন্ধ। গতকাল মঙ্গলবার হাতিরঝিল ঘুরে দেখা গেছে, ঝিলের প্রায় সব অংশ থেকেই পচা পানির দুর্গন্ধ ভাসছে বাতাসে। ঝিলের পাড়ে বসে থাকা ওয়াসিম হাবিব নামের এক তরুণ বলেন, গ্রাম থেকে আসা ছোট ভাইকে হাতিরঝিল দেখানোর জন্য নিয়ে এসেছেন। ইচ্ছা ছিল সন্ধ্যা পর্যন্ত থাকবেন। কিন্তু পানি থেকে আসা গন্ধের কারণে আর বেশিক্ষণ থাকবেন না। তাঁর মতে, হাতিরঝিলের সৌন্দর্য দিন দিন খারাপ হচ্ছে। যেখানে–সেখানে ময়লা–আবর্জনা পড়ে থাকে। আর পানির গন্ধও দিন দিন তীব্র হচ্ছে।

হাতিরঝিলের পাশে মহানগর এলাকায় থাকেন আরমান হোসেন। তিনি বলেন, বর্ষার সময় ছাড়া বছরের প্রায় সব ঋতুতেই হাতিরঝিলের পানিতে গন্ধ থাকে। ঝিলটি সবার জন্য যখন উন্মুক্ত করা হয়, তখন অবস্থা এমন ছিল না। পানিও ছিল বেশ স্বচ্ছ।

হাতিরঝিলের পানি নোংরা হওয়া সম্পর্কে জানতে চাইলে রাজউকের একজন কর্মকর্তা নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, ১৩টি পথ দিয়ে মগবাজার, বেগুনবাড়ী, মধুবাগ, নিকেতন, রামপুরা, বাড্ডা, তেজগাঁও, মহাখালী, পান্থপথ, কারওয়ান বাজার ও কাঁঠালবাগান এলাকার পানি হাতিরঝিলে আসে। এই পানির অধিকাংশ থাকে পয়োবর্জ্য মিশ্রিত। এ সমস্যা সমাধানের জন্য হাতিরঝিলে পানি নামার নয়টি পথে বর্জ্য শোধনের যন্ত্র বসানো হয়েছিল। ইতিমধ্যেই কয়েকটি যন্ত্র নষ্ট হয়ে গেছে। আর পানির চাপ বেশি থাকলে এই যন্ত্রগুলো কাজ করে না। এ সমস্যা সমাধানের জন্য পানি পরিশোধনের একটি প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। প্রকল্পটি গত সেপ্টেম্বরে পাস হয়।

প্রকল্পের সারসংক্ষেপে বলা হয়েছে, প্রতিবছর হাতিরঝিলের পানির গুণগত মান খারাপ হতে হতে প্রকট আকার ধারণ করেছে। অসহনীয় দুর্গন্ধ এবং ময়লা পানির রং স্থানীয় জনগণ ও পর্যটকদের দুর্ভোগের কারণ হয়েছে।

রাজউক বলছে, প্রকল্পটির কাজ শেষ হলে এই দুর্ভোগ আর থাকবে না। এ প্রকল্পের আওতায় পানি শোধনের জন্য অস্ট্রেলিয়ায় তৈরি ‘হাই ক্যাপাসিটি এয়ার কম্প্রেসর’ স্থাপনসহ আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে। দূষণের প্রধান উৎস পান্থপথ বক্স কালভার্ট থেকে আসা পয়োবর্জ্য, যাতে ঝিলে ছড়িয়ে না পড়ে, সে ব্যবস্থা করা হবে।

প্রকল্পটির অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে রাজউকের প্রধান প্রকৌশলী ও হাতিরঝিল প্রকল্পের পরিচালক এ এস এম রায়হানুল ফেরদৌস বলেন, বেশ কিছু যন্ত্রপাতি অস্ট্রেলিয়া থেকে আমদানি করতে হবে। এটি প্রক্রিয়াধীন আছে। আর প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি এখন পর্যন্ত ২০ শতাংশ।