উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরণ অনশন

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে প্রশাসনিক ভবনের নিচতলায় আমরণ অনশনে শিক্ষার্থীরা। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়, বরিশাল, ২৪ এপ্রিল। ছবি: সাইয়ান
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে প্রশাসনিক ভবনের নিচতলায় আমরণ অনশনে শিক্ষার্থীরা। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়, বরিশাল, ২৪ এপ্রিল। ছবি: সাইয়ান

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এস এম ইমামুল হকের পদত্যাগের দাবিতে এবার আমরণ অনশন কর্মসূচি শুরু করেছেন শিক্ষার্থীরা। গত মঙ্গলবার রাতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ওই কর্মসূচির ঘোষণা দেন। সে অনুযায়ী বুধবার বেলা ১১টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের নিচতলায় আমরণ অনশন কর্মসূচি শুরু করেছেন তাঁরা।

শুরুতে শিক্ষার্থীদের সংখ্যা কম থাকলেও বেলা একটার পর তা কিছুটা বাড়ে। অন্যদিকে, শিক্ষক সমিতির একাংশ উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে বিভিন্ন দায়িত্ব থেকে শিক্ষকদের গণপদত্যাগের আহ্বান জানিয়েছে। এ ছাড়া শিক্ষকদের ওই অংশটির নেতারা শিক্ষার্থীদের আমরণ অনশন কর্মসূচিতে একাত্মতা ঘোষণা করেছেন। তবে অনশনে অংশ নেওয়ার কথা থাকলেও তাঁরা নেননি।

শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবু জাফর মিয়া বলেছেন, বৃহস্পতিবার থেকে তাঁরা শিক্ষার্থীদের আমরণ অনশন কর্মসূচিতে যোগ দেবেন। শিক্ষকদের বিভিন্ন দায়িত্ব থেকে গণপদত্যাগ করার যে আহ্বান তাঁরা জানিয়েছিলেন, তাতে বুধবার পর্যন্ত ৪২ জন শিক্ষক সাড়া দিয়েছেন।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি শফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আমরণ অনশন কর্মসূচি দেওয়া ছাড়া তাঁদের বিকল্প কোনো উপায় ছিল না। তিনি বলেন, তাঁদের কর্মসূচিতে কয়েকজন শিক্ষকের অংশ নেওয়ার কথা ছিল। তবে তাঁরা বৃহস্পতিবার অংশ নেবেন বলে জানিয়েছেন।

গত ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বরিশাল নগরের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের জন্য চা-চক্রের আয়োজন করা হয়েছিল। তবে ওই অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের প্রবেশ করতে দেওয়ার দাবিতে ওই দিন সকাল থেকে আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। এর পরিপ্রেক্ষিতে উপাচার্য ওই অনুষ্ঠান বাতিল করতে বাধ্য হন। পরে দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি বিতর্ক প্রতিযোগিতায় প্রধান অতিথির বক্তৃতাকালে উপাচার্য এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এ ছাড়া বক্তৃতার একপর্যায়ে তিনি আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ‘রাজাকারের বাচ্চা’বলে মন্তব্য করেন। ওই মন্তব্যের পরে ক্ষোভে ফেটে পড়েন শিক্ষার্থীরা। এর প্রতিবাদে ২৭ মার্চ থেকে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের ডাক দেন তাঁরা।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের ডাক দেওয়ার বিপরীতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ২৮ মার্চ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব একাডেমিক কার্যক্রম অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেয়। এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের নির্দেশও দেওয়া হয়। অন্যদিকে, ২৯ মার্চ উপাচার্য তাঁর মন্তব্যের জন্য দুঃখ প্রকাশ করে বিজ্ঞপ্তি দেন। তবে তা প্রত্যাখ্যান করে তাঁর পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত রাখেন শিক্ষার্থীরা। এই পরিস্থিতিতে ৬ এপ্রিল রাজনৈতিক নেতা, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও শিক্ষার্থী প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি সমঝোতা বৈঠক হলেও আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ওই দিনই তা প্রত্যাখ্যান করে উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে অনড় থাকেন। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ১১ এপ্রিল ১৫ দিনের জন্য ছুটিতে যান উপাচার্য এস এম ইমামুল হক। রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ তাঁর ওই ছুটি মঞ্জুর করেন। তবে ওই ছুটির বিষয়টিও প্রত্যাখ্যান করে শিক্ষার্থীরা নতুন করে আন্দোলনের ডাক দেন।

উল্লেখ্য, উপাচার্য এস এম ইমামুল হকের চার বছরের মেয়াদ শেষ হবে আগামী ২৭ মে।