মিজানুর ও ওয়াসার পাল্টাপাল্টি অভিযোগ

তাকসিম এ খান ও  মিজানুর রহমান
তাকসিম এ খান ও মিজানুর রহমান

ঢাকা ওয়াসার ‘সুপেয়’ পানি দিয়ে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ খানকে (এমডি) শরবত খাওয়ানোর উদ্যোগ নেওয়া মিজানুর রহমান ও ওয়াসা কর্তৃপক্ষ পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করেছে। মিজানুর বলছেন, ওয়াসা তাঁকে হেনস্তা করছে। অন্যদিকে মিজানুরের বিরুদ্ধে ওয়াসা কর্তৃপক্ষ অসহযোগিতার অভিযোগ তুলেছে।

রাজধানীর জুরাইনের বাসিন্দা মিজানুর রহমান আজ বুধবার প্রথম আলোকে বলেন, জুরাইনে তিনি তাঁর মায়ের বাসা ও শ্বশুরবাড়ি মিলিয়ে দুই জায়গাতেই থাকেন। গতকাল তিনি ওয়াসা কর্তৃপক্ষকে তাঁর মায়ের বাসার ঠিকানা দিয়েছিলেন। কিন্তু ওয়াসার লোক তাঁর শ্বশুরবাড়িতে যায়। অবশ্য সেখানে তাঁর স্ত্রী ও সন্তানেরাও ছিলেন বলে জানান মিজানুর।

মিজানুর বলেন, ওয়াসা কর্তৃপক্ষের পাঠানো লোক গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে ও আজ বুধবার দুই দফা তাঁর বাসায় যান। ওয়াসা কর্তৃপক্ষ তাঁকে হেনস্তা করছে অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, ‘গতকাল তাঁরা পানি পরীক্ষা করেছে এবং ভিডিও করেছে। কার অনুমিত নিয়ে বাসায় ঢুকেছে জানতে চাইলে আমাকে দেখে নেবেসহ নানা ধরনের কথা বলেছে। আমি চুরি করে ওয়াসার লাইন চালাই, বিল দিই না, বস্তি এলাকায় থাকি, এখানকার পানি তো এমনই হবে—এ ধরনের কথাও বলেছে।’

মিজান জানান, সৈয়দ নওয়াজ আলী নামের একজন উপসহকারী প্রকৌশলী পাঁচ-ছয়জন লোক নিয়ে তাঁর বাসায় যান। তাঁরা মামলার হুমকি দিয়েছে অভিযোগ করে মিজান বলেন, ‘আমার পরিবারকে মামলার হুমকি দিয়ে গেছে। কাল নাকি ম্যাজিস্ট্রেট নিয়ে আসবে। আমি খুব বিরক্ত। এ ছাড়া আমার সঙ্গে কথা বলার সময় আমার ভিডিও করেছে, ছবি তুলেছে। আমি আপত্তি করার পরও তাঁরা করেছে। চরম মাত্রায় হেনস্তা করছে তারা।’

অন্যদিকে ঢাকা ওয়াসার মডস জোন-৭ এর উপসহকারী প্রকৌশলী সৈয়দ নওয়াজ আলী উল্টো মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে অসহযোগিতার অভিযোগ তুলেছেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘গতকালের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সরাসরি গিয়েছি পানি সংগ্রহ করার জন্য। আজকে আমার যাওয়ার পর তাঁর স্ত্রী তাঁকে ফোন দিলে উনি আসেন। গতকাল যে ভিডিও করেছি তাঁর জন্য উনি উল্টো আমাদের প্রশ্ন করা শুরু করেন। উনার বাসার পানি যে পরীক্ষা করেছি, তাঁর প্রমাণ তো আমাদের রাখতে হয়, ম্যানেজমেন্টকে জানাতে হয়।’

মিজানুর রহমানের ভিডিওচিত্র ধারণ করা প্রসঙ্গে সৈয়দ নওয়াজ আলী বলেন, ‘উনি আমাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করছিলেন। সেটার ভিডিও করা হয়। উনি অভিযোগ করেছেন, সেই অনুযায়ী আমাদের তো কাজ করতে হয়। কিন্তু উনি অসহযোগিতা করেছেন।’

মিজানুরের রহমান দুই বছর পানির বিল দেন না, জানিয়ে সৈয়দ নওয়াজ আলী বলেন, ‘উনি মিটার দেখতে দেননি। আমি অফিসে এসে উনার হোল্ডিং নম্বর সার্চ দিয়ে দেখি উনার ২৪ মাসের পানির বিল বকেয়া পড়ে আছে।’ গতকাল তিনি নিজে মিজানুরের বাসার চাপ কল থেকে পানি খেয়ে এসেছেন দাবি করে ওয়াসার এই উপসহকারী প্রকৌশলী আরও বলেন, এখনো পর্যন্ত তাঁর কিছু হয়নি। অবশ্য পানির বিল বকেয়া থাকার কথা স্বীকার করে নিয়েছেন মিজানুর রহমান।

১৭ এপ্রিল ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) গবেষণা উপস্থাপন করে জানায়, ঢাকা ওয়াসার পানির নিম্নমানের কারণে ৯৩ শতাংশ গ্রাহক তা বিভিন্ন পদ্ধতিতে পানের উপযোগী করে। এর মধ্যে ৯১ শতাংশ গ্রাহকই পানি ফুটিয়ে পান করে। তবে টিআইবির এই প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে ওয়াসার এমডি তাকসিম এ খান বলেছিলেন, ওয়াসার পানি শতভাগ সুপেয়। তাঁর এ বক্তব্যের প্রতিবাদ করতে ওয়াসার এমডিকে ‘সুপেয়’ পানির শরবত খাওয়ানোর জন্য মিজানুর রহমান গতকাল মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর কারওয়ান বাজারের ওয়াসা ভবনে এসেছিলেন। তিনি এসে অভিযোগ করেন এই বলে যে, জুরাইনে পানি ফুটিয়ে খাওয়ার উপযোগী না, নোংরা পানি আসে।