যৌন হয়রানি ও নারী নির্যাতন নিয়ে সংসদে আলোচনার দাবি

যৌন হয়রানি, নারী নির্যাতন ও অন্যান্য সামাজিক অবক্ষয় নিয়ে কোনো একটি নির্ধারিত দিনে সংসদে সাধারণ আলোচনার দাবি উঠেছে। নুসরাত জাহান রাফি হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আজ বুধবার সংসদে একাধিক সাংসদ পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে অনির্ধারিত আলোচনায় এই দাবি তোলেন। 

সরকারি দলের সাবেক মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, গত দুই মাসে দেশে–বিদেশে অনেক ঘটনা ঘটেছে। হিংসা–বিদ্বেষে রক্তাক্ত হয়েছে বিদেশের মাটি, মন্দির-মসজিদ-গির্জা। প্রতিহিংসার আগুনে পুড়ে ছারখার হয়েছে নুসরাত। প্রধানমন্ত্রীর মমতাময়ী হাত তাঁকে রক্ষা করতে পারেনি। তিনি মায়ের মমতা দিয়ে চেষ্টা করেছিলেন নুসরাতকে রক্ষা করতে। জুমার নামাজরত অবস্থায় মানুষকে হত্যা করা হলো। শ্রীলঙ্কায় প্রতিহিংসায় মানুষ মারা গেছে। ধর্মের নামে মানুষ মানুষকে হত্যা করছে। মসজিদ, মন্দির, গির্জা রক্ষা হচ্ছে না।

তোফায়েল আহমেদ বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশ শান্তির দেশে পরিণত হয়েছে। কিন্তু আগুনে দগ্ধ হয়ে নুসরাতের মৃত্যুর বিষয়টি সমস্ত জাতির হৃদয়কে নাড়া দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ওই ঘটনায় একজন ছাড়া সব অপরাধী গ্রেপ্তার হয়েছে। তিনি বলেন, নিষ্পাপ শিশুদের হয়রানি করা হচ্ছে। রাস্তাঘাটে স্কুল থেকে যাওয়ার সময়, বাড়িতে ঢুকে, এই সামাজিক অবক্ষয় কারও কাম্য হতে পারে না।


তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘যতক্ষণ পর্যন্ত অপরাধী উপলব্ধি করবে না যে আমি অপরাধ করে মাফ পাব না, পার পাব না, আমাকে শাস্তিভোগ করতে হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত এই সামাজিক দুর্ঘটনা বন্ধ হবে না।’ তিনি আরও বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড থেকে মোটামুটি দেশকে রক্ষা করার চেষ্টা করেছে। তারা সফল হয়েছে। কিন্তু যারা ছোট ছোট বাচ্চাকে নিগৃহীত করে, নির্যাতন করে, তাদের খুব তাড়াতাড়ি দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।

তোফায়েল আহমেদ আরও বলেন, ‘অপরাধীরা কিন্তু ধরা পড়ে। তবে তারা মনে করে ধরা পড়ে কিছুদিনের জন্য জেলে যাব। কিন্তু কিছুই হবে না। এমন আইন করতে হবে, যাতে তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয়। তাদের ফাঁসিতে ঝোলানো উচিত। না হলে এই সামাজিক অবক্ষয় মুক্ত হবে না।’


রাশেদ খান মেনন বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যৌন নিপীড়নবিরোধী কমিটি গঠনের জন্য উচ্চ আদালতের নির্দেশনা রয়েছে। দীর্ঘদিন আগে এই নির্দেশনা দেওয়া হলেও সম্প্রতি শিক্ষা মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে উদ্যোগী হয়েছে।

হাসানুল হক ইনু বলেন, এসব অপরাধের রাজনৈতিক বিষয় রয়েছে। মুখোশধারী ধর্মীয় ব্যবসায়ীরা ক্রমাগত ভিন্ন ধর্মের প্রতি বিদ্বেষ প্রকাশ করে চলেছে। ক্রমাগত দেশের সংবিধানের প্রতি বিদ্বেষ প্রকাশ করে চলেছে। মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তির বিরুদ্ধে বিদ্বেষপূর্ণ কথা বলছে। ক্রমাগত তেঁতুলের সঙ্গে তুলনা করে নারীদের খাটো করার চেষ্টা করছে। তারাই নারী নির্যাতনের রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষক। ধর্মব্যবসায়ী ও নারী নির্যাতন ও নারীবিদ্বেষের ঘটনা নিয়ে আলোচনা করা দরকার। যারা নারীর বিরুদ্ধে কথা বলে, তারা রাজাকারের বংশধর। যারা হোলি আর্টিজানে আক্রমণ করে, তারা জঙ্গি সন্ত্রাসী এবং পাকিস্তানপন্থী ধর্মের মুখোশধারী দানব। সেই দানবদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।


আলোচনায় আরও অংশ নেন জাতীয় পার্টির রুস্তম আলী ফরাজী ও গণফোরামের সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ।