দলের সিদ্ধান্ত তোয়াক্কাই করলেন না জাহিদুর

জাহিদুর রহমান
জাহিদুর রহমান

বিএনপির সিদ্ধান্ত—তারা সংসদে যাবে না। কিন্তু দলের সেই সিদ্ধান্ত না মেনেই বিএনপির নেতা জাহিদুর রহমান শপথ নিলেন।

বিএনপি থেকে নির্বাচিত ঠাকুরগাঁও-৩ আসনের সাংসদ জাহিদুর রহমান আজ বৃহস্পতিবার দুপুর সোয়া ১২টার দিকে শপথ নেন। জাহিদুর রহমানকে শপথগ্রহণ করান স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী। সংসদ সচিবালয়ের গণসংযোগ শাখার পরিচালক তারকে মাহমুদ প্রথম আলোকে এই তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

এর আগে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের দুই সদস্য শপথ নেন। তাঁরা দুজনই ওই জোটের শরিক গণফোরামের সদস্য। এবারই প্রথম বিএনপি থেকে একজন সংসদে গেলেন।

এর আগে সকালে জাহিদুর রহমান শপথ নেওয়ার বিষয়ে তাঁর আগ্রহের কথা জানিয়ে জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীকে চিঠি লেখেন।

এ নিয়ে বিএনপির নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট থেকে নির্বাচিত আটজন সদস্যের তিনজন শপথ নিলেন। এর আগে এই জোটের শরিক দল গণফোরামের দুই নেতা সুলতান মোহাম্মদ মনসুর (মৌলভীবাজার-২) ও মোকাব্বির খান (সিলেট-২) শপথ নিয়ে সংসদে যোগ দেন। জাহিদুর রহমান এবারই প্রথম নির্বাচিত হন। এর আগে তিনি তিনবার নির্বাচন করে পরাজিত হন।

গত ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট থেকে আটজন সাংসদ নির্বাচিত হন। এর মধ্যে বিএনপির ছয়জন এবং গণফোরামের দুজন। নির্বাচনে ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে অভিযোগ করে ঐক্যফ্রন্ট এই নির্বাচনের ফল বর্জন করে এবং শপথ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। তবে দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে গণফোরামের দুই সদস্য সংসদে যোগ দেন।

বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টার মিডিয়া উইংয়ে কর্মকর্তা শায়রুল কবির খান প্রথম আলোকে বলেন, জাহিদুর রহমান দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করেই শপথ নিয়েছেন। তা ছাড়া শপথ নেওয়ার বিষয়ে তিনি দলকে কোনো কিছু জানাননি। দল থেকে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।

সংবিধানের ৬৭ অনুচ্ছেদে বলা আছে, সংসদের প্রথম বৈঠকের পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে শপথগ্রহণ করতে হবে। তা না হলে সদস্যপদ বাতিল করে আসন শূন্য ঘোষণা করা হবে। একাদশ সংসদের প্রথম বৈঠক বসে এ বছরের ৩০ জানুয়ারি। এই হিসাবে ২৯ এপ্রিলের মধ্যেই নির্বাচিত সদস্যদের শপথগ্রহণ করতে হবে।

দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে যেসব সাংসদ শপথগ্রহণ করেছেন, আইন অনুযায়ী তাঁদের সদস্যপদ থাকবে কি না, তা নিয়ে বিতর্ক আছে। এ বিষয়ে সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, কোনো সাংসদ নির্বাচনের পর সাংসদ পদে থাকার অযোগ্য হবেন কি না কিংবা সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ অনুসারে কোনো সাংসদের আসন শূন্য হবে কি না—এ সম্পর্কিত কোনো বিতর্ক দেখা দিলে বিষয়টি শুনানি ও নিষ্পত্তির জন্য নির্বাচন কমিশনের কাছে পাঠানো হবে এবং এ ক্ষেত্রে কমিশনের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হবে।

৭০ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, কোনো নির্বাচনে কোনো রাজনৈতিক দলের প্রার্থী হিসেবে মনোনীত হয়ে কোনো ব্যক্তি সাংসদ নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি যদি ওই দল থেকে পদত্যাগ করেন অথবা সংসদে দলের বিপক্ষে ভোটদান করেন, তবে সংসদে তাঁর আসন শূন্য হবে।

এ ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, সুলতান মনসুর, মোকাব্বির খান ও জাহিদুর রহমান দল থেকে পদত্যাগ করেননি। সংসদে দলের বিপক্ষে ভোট দেওয়ার সুযোগও তাঁদের নেই। তবে তাঁরা দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে সংসদে যোগ দিলে এবং ওই অবস্থায় দল তাঁদের বহিষ্কার করলে পরিণতি কী হবে, সে বিষয়ে সংবিধানে স্পষ্ট কিছু বলা নেই। কিন্তু গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে বলা আছে, সংসদ সদস্য নির্বাচিত হতে হলে দলের প্রাথমিক সদস্যপদ থাকতে হবে।

আরও পড়ুন: