অভিযোগপত্রে আট জঙ্গির নাম

>
  • কলাবাগানে জোড়া খুনের তিন বছর
  • অভিযোগপত্রে চাকরিচ্যুত মেজর জিয়াসহ আট জঙ্গির নাম এসেছে
  • সমকামিতা নিয়ে পত্রিকা প্রকাশ করায় জঙ্গিরা জুলহাজকে হত্যা করেন
জুলহাজ ও তনয়
জুলহাজ ও তনয়

ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের সাহায্য সংস্থা ইউএসএআইডির কর্মকর্তা জুলহাজ মান্নান ও তাঁর বন্ধু নাট্যকর্মী মাহবুব রাব্বীর (তনয়) হত্যা মামলার অভিযোগপত্র চূড়ান্ত করেছে পুলিশ। অভিযোগপত্রে নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের (পুরোনো নাম আনসারুল্লাহ বাংলা টিম) সামরিক শাখার প্রধান চাকরিচ্যুত মেজর সৈয়দ জিয়াউল হকসহ আট জঙ্গির নাম এসেছে।

অন্য আসামিরা হলেন আনসার আল ইসলামের নেতা মোজাম্মেল হোসেন ওরফে সায়মন, শেখ আবদুল্লাহ জোবায়ের, আরাফাত শামস ওরফে সাজ্জাদ, ফয়জুল ওরফে আসাদুল্লাহ, হায়দার জোনায়েদ, আকরাম ওরফে আবির আদনান ও আফনাল ওরফে অনিক। তাঁদের মধ্যে মোজাম্মেল সায়মন, শেখ আবদুল্লাহ, আরাফাত শামস ও আসাদুল্লাহ কারাগারে আছেন। বাকিরা পলাতক।

২০১৬ সালের ২৫ এপ্রিল সন্ধ্যায় কলাবাগানের বাসায় ঢুকে দুর্বৃত্তরা জুলহাজ (৩৫) ও তাঁর বন্ধু মাহবুবকে কুপিয়ে হত্যা করে। হত্যার পর পালানোর সময় বাধা দিতে গেলে দুর্বৃত্তরা বাড়ির নিরাপত্তাকর্মী পারভেজ মোল্লাকেও কোপায়। কলাবাগান থানার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মমতাজউদ্দিন এক দুর্বৃত্তকে জাপটে ধরলে তাঁকেও কুপিয়ে তারা পালিয়ে যায়। তবে এএসআই মমতাজ ওই দুর্বৃত্তদের একজনের কাছ থেকে একটি ব্যাগ কেড়ে নিতে সক্ষম হন। ওই ব্যাগে একটি পিস্তল, একটি দেশীয় আগ্নেয়াস্ত্র, গুলি ও মুঠোফোন পাওয়া যায়। আজ ২৫ এপ্রিল ওই জোড়া খুনের তিন বছর পূর্ণ হচ্ছে।

এ ঘটনায় কলাবাগান থানায় করা মামলাটি তদন্ত করছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেররিজম (সিটি) বিভাগ। মামলার তদন্ত তদারক কর্মকর্তা সিটির উপকমিশনার মোহাম্মদ মহিবুল ইসলাম খান গত মঙ্গলবার প্রথম আলোকে বলেন, জোড়া খুনের মামলার তদন্ত শেষ করে অভিযোগপত্র প্রস্তুত করা হয়েছে। শিগগিরই ওই মামলার অভিযোগপত্র দেওয়া হবে।

মামলার তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র বলেছে, জুলহাজ সমকামিতা নিয়ে পত্রিকা প্রকাশনার সঙ্গে যুক্ত থাকায় আনসার আল ইসলাম তাঁর ওপর ক্ষুব্ধ হয় এবং তাঁকে হত্যার পরিকল্পনা নেয়। জঙ্গি মোজাম্মেল সায়মন, শেখ আবদুল্লাহ, আরাফাত শামস ও আসাদুল্লাহ আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। জবানবন্দি ও তদন্তে বেরিয়ে এসেছে চাকরিচ্যুত মেজর জিয়ার সমন্বয়, পরিকল্পনা ও নির্দেশে জঙ্গিনেতা সেলিমের তত্ত্বাবধানে আনসার আল ইসলামের ১২ জঙ্গি খুনের ঘটনায় জড়িত। হত্যার আগে পাঁচ জঙ্গি জুলহাজ ও মাহবুবের গতিবিধি নিয়ে তথ্য সংগ্রহ করেন। তাঁরা হলেন মোজাম্মেল সায়মন, শেখ আবদুল্লাহ, জোবায়ের আকরাম, আরাফাত শামস ও হাসান। তাঁদের তথ্যের ভিত্তিতে হায়দার জোনায়েদ, আফনাল, আসাদুল্লাহ, কামরুল ও আলীম বাসায় ঢুকে জুলহাজ ও মাহবুবকে কুপিয়ে হত্যা করেন।

খুনিদের ফেলে যাওয়া মুঠোফোনের কল তালিকার সূত্র ধরে পুলিশ জঙ্গি রাশেদ উদ্দিন ভূঞা ওরফে রায়হান ওরফে টিপুকে গ্রেপ্তার করেছিল। তিনি জবানবন্দিতে বলেছেন, হত্যাকাণ্ডে সরাসরি অংশ নেওয়া পাঁচজনকে তিনি প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। তাঁকে মামলায় সাক্ষী করা হবে।

ডিএমপি ২০১৬ সালের ১৭ আগস্ট আনসার আল ইসলামের অন্যতম শীর্ষ নেতা সেলিম ওরফে ইকবাল ওরফে মামুন ওরফে হাদী-২ কে ধরিয়ে দিতে পাঁচ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করে। এর আগে পুলিশ সদর দপ্তর চাকরিচ্যুত মেজর জিয়াকে ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করেছিল। কিন্তু এঁদের মধ্যে সেলিমকে এখন পর্যন্ত শনাক্তই করতে পারেনি পুলিশ। আর জিয়া পলাতক।

তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, হত্যাকারীদের প্রশিক্ষক জঙ্গিনেতা সেলিম, হাসান, কামরুল ও আলীম ওরফে আলীর পূর্ণাঙ্গ নাম–ঠিকানা না পাওয়ায় তাঁদের মামলার অভিযোগপত্র থেকে অব্যাহতির সুপারিশ করা হচ্ছে।

মামলার বাদী ও জুলহাজের বড় ভাই মিনহাজ মান্নান প্রথম আলোকে বলেন, যারা কষ্ট করে মানুষ হচ্ছে, তাদের অধিকার আদায়ে জুলহাজ কাজ করে যাচ্ছিলেন। চাইলে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে সুখ–স্বাচ্ছন্দ্যে কাটাতে পারতেন। বাংলাদেশে তাঁর গুরুত্ব না থাকলেও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে জুলহাজ একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি।