উদ্বোধনী দিনে ৪ ঘণ্টা ২৫ মিনিটে রাজশাহী থেকে ঢাকায় পৌঁছাল 'বনলতা এক্সপ্রেস'

ভিডিও কনফারেন্সে বনলতা এক্সপ্রেস ট্রেনের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে পতাকা উড়িয়ে সিগন্যাল দেন রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন। ট্রেনটি ৪ ঘণ্টা ২৫ মিনিটে ঢাকায় পৌঁছায়। রাজশাহী, ২৫ এপ্রিল। ছবি: শহীদুল ইসলাম
ভিডিও কনফারেন্সে বনলতা এক্সপ্রেস ট্রেনের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে পতাকা উড়িয়ে সিগন্যাল দেন রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন। ট্রেনটি ৪ ঘণ্টা ২৫ মিনিটে ঢাকায় পৌঁছায়। রাজশাহী, ২৫ এপ্রিল। ছবি: শহীদুল ইসলাম

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্বোধনের পর আজ বৃহস্পতিবার ‘বনলতা এক্সপ্রেস’ ট্রেনটি ৪ ঘণ্টা ২৫ মিনিটে রাজশাহী থেকে ঢাকায় পৌঁছায়। বিরতিহীনভাবেই ট্রেনটি গন্তব্যে পৌঁছেছে। ট্রেনের ভেতরে যাত্রীদের আপ্যায়নের ব্যবস্থাও ছিল। 


ট্রেনের যাত্রী আবদুল ওয়াজেদ খান ঢাকায় পৌঁছার পরে প্রথম আলোকে মোবাইল ফোনে বলেন, তাঁরা ৪ ঘণ্টা ২৫ মিনিটে ঢাকায় পৌঁছেছেন। ট্রেনের ভেতরে তাঁদের আপেল, প্যাটিস ও পানি দিয়ে আপ্যায়ন করা হয়।

বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে ঢাকা থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বাঁশি বাজিয়ে এবং সবুজ পতাকা উড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ট্রেনটির উদ্বোধন ঘোষণা করেন। ভিডিও কনফারেন্স পরিচালনা করেন জেলা প্রশাসক এস এম আবদুল কাদের। প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন ঘোষণার পর বেলা ১১টা ৪৪ মিনিটে ট্রেনটি ঢাকার উদ্দেশে রাজশাহী ছাড়ে। প্রথম দিনের যাত্রীদের বিনা টিকিটেই যাত্রার ব্যবস্থা ছিল।

রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনের টিকিট কাউন্টারের সামনেই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সে বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার দেশের বিভিন্ন স্থানের সঙ্গে রেল যোগাযোগ বন্ধ করে রেখেছিল। আমরা সেসব রেল যোগাযোগ পর্যায়ক্রমে চালু করছি।’ উন্নয়নে রাজশাহী কিছুটা পিছিয়ে পড়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কেন জানি এলাকাটার উন্নতি হয়নি। সেই জন্য আমরা রাজশাহীর দিকে আলাদাভাবে দৃষ্টি দিচ্ছি। যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়ন করছি। রাজশাহীর জন্য আমরা পদ্মা নদী ড্রেজিংয়ের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। রেল, নৌ এবং আকাশপথের যোগাযোগেরও উন্নয়ন দরকার। আমরা রাজশাহী, সৈয়দপুর ও বরিশালের বন্ধ বিমানবন্দর চালু করেছি।’

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘সামনে ঈদ আর জ্যৈষ্ঠ মাসের পাকা আম—দুটোই মাথায় রেখে আমরা বনলতা এক্সপ্রেস চালু করলাম। আশা করি রাজশাহী থেকে আম আসবে। আর ঈদ করতে মানুষ স্বাচ্ছন্দ্যে ঢাকা থেকে বাড়ি ফিরবেন।’

রাজশাহীতে ট্রেনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রেলমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম। উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটনও। ট্রেনটি চালু করার জন্য তিনি প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বনলতার ১২টি বগিতে প্রতিদিন ২ হাজার যাত্রী ভ্রমণ করতে পারবেন। রেলপথ বিভাগের পক্ষ থেকে এই ট্রেনে ভ্রমণকারীদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করা হবে। ট্রেনটি থেকে বছরে সরকারের আয় হবে ৩৭ কোটি টাকা। বনলতা এক্সপ্রেস দেশের একমাত্র ট্রেন, যা পরিবেশের কোনো ক্ষতি করবে না। এই ট্রেনে সংযুক্ত আছে উড়োজাহাজের মতো বায়োটয়লেট। এ কারণে মলমূত্র রেললাইনের ওপরে পড়বে না। রয়েছে রিক্লেনার চেয়ার ও স্লাইডিং ডোর। আছে ওয়াইফাই সুবিধা। প্রতিটি বগিতে রয়েছে এলইডি ডিসপ্লে, যার মাধ্যমে স্টেশন ও ভ্রমণের তথ্য প্রদর্শন করা হবে। রয়েছে অজুখানা ও নামাজের স্থান। এ ছাড়াও আছে প্রতিবন্ধীদের জন্য নির্দিষ্ট আসন। কিন্তু নেই শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কোনো ধরনের স্লিপিং বার্থ। ট্রেনটি শুধু দিনের বেলায় চলাচল করবে, তাই এর দরকার পড়ছে না আপাতত।

একটি খাওয়ার বগি ও পাওয়ার কার বগি বাদে ট্রেনে মোট আসনসংখ্যা ৯২৭টি। বিরতিহীন চার্জ ধরে এই ট্রেনে ভ্রমণের জন্য অন্য ট্রেনের তুলনায় যাত্রীদের ১০ শতাংশ বেশি ভাড়া গুনতে হবে। সাধারণ শোভন চেয়ারের ভাড়া পড়বে ৩৭৪ টাকা। আর এসি চেয়ারের ভাড়া লাগবে ৭২২ টাকা। বনলতা ঢাকা-রাজশাহীর ৩৪৩ কিলোমিটার পথ পাড়ি দেবে ৪ ঘণ্টা ৪০ মিনিটে। অন্য ট্রেনের তুলনায় সময় বাঁচবে প্রায় দুই ঘণ্টা। ঘণ্টায় ট্রেনটির সর্বোচ্চ গতিবেগ উঠবে ৯০ থেকে ৯৫ কিলোমিটার।

২৭ এপ্রিল থেকে শুক্রবার বাদ দিয়ে সপ্তাহের বাকি ছয় দিন ট্রেনটি ঢাকা-রাজশাহী-ঢাকা রুটে চলাচল করবে। সকাল ৭টায় ট্রেনটি রাজশাহী থেকে ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা শুরু করে পৌঁছাবে বেলা ১১টা ৪০ মিনিটে। আর ঢাকা থেকে দুপুর ১টা ১৫ মিনিটে যাত্রা শুরু করে রাজশাহী পৌঁছাবে সন্ধ্যা ৬টায়। বনলতা এক্সপ্রেস চালুর পর এই রুটে ট্রেনের সংখ্যা হলো ৪টি।