নিজে নিই না, কাউকে ঘুষ খেতে দেব না: গণপূর্তমন্ত্রী

জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের সেবা সহজীকরণ শীর্ষক অনুষ্ঠানে গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম। জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের সম্মেলনকক্ষ, সেগুনবাগিচা, ঢাকা, ২৫ এপ্রিল। ছবি: সংবাদ বিঞ্জপ্তি
জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের সেবা সহজীকরণ শীর্ষক অনুষ্ঠানে গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম। জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের সম্মেলনকক্ষ, সেগুনবাগিচা, ঢাকা, ২৫ এপ্রিল। ছবি: সংবাদ বিঞ্জপ্তি

নিজে ঘুষ খাই না, কমিশন নিই না। কাউকে ঘুষ খেতে দেব না, কমিশন খেতে দেব না। সিন্ডিকেটের ব্যূহ ভেদ করবই, এটা আমার আত্মবিশ্বাস। ব্যূহ ভেদ করতে না পারলে আমি হারিয়ে যাব অথবা যাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, যাঁদের কারণে মানুষ ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন, তাঁরা হারিয়ে যাবেন। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের সম্মেলনকক্ষে জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের সেবা সহজীকরণ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম।

গণপূর্তমন্ত্রী বলেন, ‘সেবা সহজীকরণের প্রক্রিয়া শুরু হলে আমরা মন্ত্রণালয়সহ প্রতিটি দপ্তরে অভিযোগ বাক্স রাখব। শুনতে চাই কারা দুর্নীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। জানতে চাই কাদের কারণে মানুষ কাঙ্ক্ষিত সেবা পাচ্ছেন না। বুঝতে চাই মানুষ কতটা সেবা পাচ্ছেন। কারণ আমাদের দায়িত্ববোধের জায়গা আমরা এড়িয়ে যেতে পারি না। আমরা আসব যাব, কাঁধে কোনো দায় নেব না, এটা হতে পারে না। যাঁরা সচ্ছতার সঙ্গে কাজ করবেন, তাঁরা চাকরিতে থাকবেন। যাঁরা অস্বচ্ছ হবেন, দুর্নীতির সঙ্গে থাকবেন, তাঁদের চাকরি ছেড়ে বাড়ি চলে যেতে হবে অথবা অন্য কোথাও চলে যেতে হবে। আমি যত দিন এই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে আছি, আমি চাইব মন্ত্রণালয়সহ দপ্তর-সংস্থার সবাইকে সততার সঙ্গে, স্বচ্ছতার সঙ্গে, নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে হবে।’

গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী বলেন, ‘আবাসন নাগরিকের অন্যতম মৌলিক অধিকার। সবার জন্য আবাসন, কেউ থাকবে না গৃহহীন। সেই লক্ষ্যে শেখ হাসিনা সরকার কাজ করছে। যখন দেখি নাগরিকেরা আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় অথবা রাজনৈতিক ব্যক্তিদের কাঙ্ক্ষিত আচরণ না পেয়ে অসহায় অবস্থায় ঘুরছে, তখন মনে হয় ওই জায়গায় আমি থাকলে একই কষ্ট আমার হতো। সে জন্য দীর্ঘসূত্রতার অবসান ঘটাতে হবে, মানুষের ভোগান্তির অবসান ঘটাতে হবে, সেবাকে সহজ করতে হবে, স্বচ্ছতা আনতে হবে, সততা আনতে হবে। সুশাসন যদি আমরা নিশ্চিত করতে না পারি, মানুষের কাঙ্ক্ষিত স্বপ্ন বাস্তবায়ন হবে না, নাগরিকেরা মৌলিক অধিকার পাবে না। যাঁরা দায়িত্বে আছি সবাইকে ভাবতে হবে জনগণ মালিক, তাঁদের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধাবোধ থাকতে হবে।’

মন্ত্রী বলেন, জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের অনেক ভোগান্তির অভিযোগ আমার কাছে এসেছে। দেড় কাঠা বা পৌনে দুই কাঠা জমির মালিকের একটা বিক্রয় অনুমতি বা একটা মিউটেশনের জন্য অনেক কষ্ট করতে হয়। তিনি আরও বলেন, নাগরিক সমাজের প্রতি দায়িত্ববোধের জায়গা থেকে আমরা চিন্তা করলাম, গবেষণা করা দরকার মানুষের ভোগান্তি কেন। নাগরিক সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে অচলায়তন ভাঙার জন্য মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন ১২টি সংস্থা নিয়ে আমরা কাজ করছি। জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের পিয়ন থেকে শুরু করে চেয়ারম্যান প্রত্যেকে জনগণের কাছে দায়বদ্ধ।

জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের সেবা প্রদানের ২৬টি পর্যায়ের বিন্যাস করা হয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, দেশের সাধারণ মানুষের স্বার্থে সেবা সহজীকরণের প্রক্রিয়া আমরা শুরু করেছি। বাংলাদেশ সরকারের গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়েই প্রথম মানুষের সেবা সহজ করার জন্য, ভোগান্তি কমানোর জন্য আমরা নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছি। এটা একটা বৈপ্লবিক পরিবর্তন। সরকার ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান নয় উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘প্রয়োজনে রাজউক ও জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষকে সরকার ভর্তুকি দেবে, কিন্তু জনগণের ঘাড়ে অতিরিক্ত কর চাপিয়ে তাদের কষ্ট বাড়ানো এবং তার ভেতর থেকে আমাদের সুবিধা নেওয়া, এটা কাঙ্ক্ষিত নয়, সে লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি।’

গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষে ও রাজউকে ডিজিটাল পদ্ধতি চালু হচ্ছে
মন্ত্রী আরও বলেন, ‘স্বচ্ছতার ব্যাপারে অনাকাঙ্ক্ষিত অনেক অভিযোগে আমরা জর্জরিত। সে জন্য স্বচ্ছতার জায়গায় আসার জন্য আমরা পরিকল্পনা নিয়েছি। জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষে ১ জুন থেকে এবং রাজউকে ১ মে থেকে সব ব্যবস্থাকে আমরা অটোমেশন অর্থাৎ ডিজিটাল পদ্ধতিতে নিয়ে আসছি। বাড়িতে ল্যাপটপের মাধ্যমে অনলাইনে প্ল্যান সাবমিট করা যাবে, মিউটেশন আবেদন করা যাবে। রাজউক বা গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের অফিসে যাওয়া লাগবে না। বাড়িতে বসে অগ্রগতি জানা যাবে। আমরা চাই আধুনিক বিশ্ব যেভাবে চলছে, আমরাও সেভাবে চলব। নথি হারিয়ে যাওয়া থেকে উত্তরণের জন্য আমরা ডেটাবেইস সিস্টেম চালু করছি। সব নথি কম্পিউটারে অনলাইনে থাকবে, আপনিও আপনার ফাইলের অবস্থা দেখতে পাবেন। এ জাতীয় পরিবর্তনের জন্য আমরা ২৬টি পর্যায়ে অভাবনীয় পরিবর্তন এনেছি। সাধারণ মানুষকে এ পরিবর্তনের ব্যাপারে জানানোর জন্য মন্ত্রী উপস্থিত সাংবাদিকদের অনুরোধ জানান।’

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘আমি নিজে ঘুষ খাই না, কমিশন নিই না। কাউকে ঘুষ খেতে দেব না, কমিশন খেতে দেব না। সিন্ডিকেটের ব্যূহ আমি ভেদ করবই, এটা আমার আত্মবিশ্বাস। ব্যূহ ভেদ করতে না পারলে আমি হারিয়ে যাব অথবা যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, যাঁদের কারণে মানুষ ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন, তাঁরা হারিয়ে যাবেন। সিন্ডিকেটের ব্যবসা কেউ করতে চাইলে তাঁদের ভয়াবহ পরিণতি বরণ করতে হবে।’ সরকারের চেয়ে শক্তিশালী কেউ নেই প্রাসঙ্গিকভাবে উল্লেখ করেন মন্ত্রী।

অনুষ্ঠানে জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মো. রাশিদুল ইসলাম, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. আখতার হোসেন প্রমুখ বক্তব্য দেন।