জামায়াতের সংস্কারপন্থীরা নতুন ঘোষণা দেবেন

>
  • জামায়াত নতুন রাজনৈতিক উদ্যোগের ঘোষণা দেবে
  • এ জন্য ঘোষণাপত্র চূড়ান্ত হয়েছে
  • কেন্দ্রীয় নেতারা নজরদারি বাড়িয়েছেন

জামায়াতে ইসলামীর সংস্কারপন্থী নেতারা তাঁদের নতুন রাজনৈতিক উদ্যোগের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেবেন ২৭ এপ্রিল। এ জন্য একটি ঘোষণাপত্রও চূড়ান্ত করেছেন তাঁরা। তবে সংস্কারপন্থীদের এই উদ্যোগে মূল দলের বা ছাত্রশিবিরের কেউ যাতে শামিল না হয়, সে জন্য কেন্দ্রীয় নেতারা নজরদারি বাড়িয়েছেন।

নতুন উদ্যোগের বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এখনই তাঁরা সরাসরি নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের ঘোষণা দেবেন না। নতুন রাজনৈতিক উদ্যোগে ইসলাম বা ধর্মভিত্তিক সংগঠনগুলোকে অনুসরণ করা হবে না। সাম্য ও মানবাধিকারকে বেশি গুরুত্ব দেবেন তাঁরা।

একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, আপাতত এই প্রক্রিয়ায় সামনে থাকছেন জামায়াতে ইসলামী থেকে সদ্য বহিষ্কৃত নেতা মজিবুর রহমান (মঞ্জু)। তিনি একসময় ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি এবং পরে জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরার সদস্য ছিলেন। সংবাদ সম্মেলন করে নতুন রাজনৈতিক উদ্যোগ শুরুর ঘোষণা দেবেন তিনি। এ লক্ষ্যে রাজধানী ঢাকার একটি মিলনায়তন ঠিক করা হয়েছে। অনুষ্ঠানে অতিথি বা পর্যবেক্ষক হিসেবে কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

মজিবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘গণ-আকাঙ্ক্ষা, সুশাসন ও মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার নতুন রাজনীতির স্বপ্ন দেখছি আমরা। আশা করি, এতে নতুন প্রজন্মের চিন্তা ও মনোভাবের প্রতিফলন ঘটবে।’

সংস্কারপন্থী নেতারা বলছেন, তাঁদের রাজনৈতিক উদ্যোগ ঠেকাতে জামায়াতের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা মরিয়া হয়ে মাঠে নেমেছেন। দলের কোনো পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা যাতে এ প্রক্রিয়ায় অংশ না নেন, সে জন্য কড়া নজরদারির পাশাপাশি সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট ও রাজশাহী অঞ্চলের জামায়াত ও শিবিরের অন্তত অর্ধশত নেতা ও সদস্যকে ডেকে আলাদাভাবে কথা বলেছেন তাঁরা। ডেকে নেওয়া নেতাদের কাউকে কাউকে শাসানো হয়েছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। আবার ডেকে নেওয়া দলীয় সদস্যদের কেউ কেউ সংস্কারপ্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত থাকবেন বলে জানিয়ে দিয়েছেন।

জামায়াত সূত্রে জানা গেছে, সংস্কারপন্থীদের রাজনৈতিক দল গঠনের উদ্যোগ ঠেকাতে দলের কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি জেনারেল শফিকুর রহমান মালয়েশিয়া হয়ে এখন লন্ডনে আছেন। দেশ দুটিতে জামায়াতের অনেক নেতা-কর্মী ও সমর্থক আছেন, যাঁদের একটি বড় অংশ জামায়াতের সংস্কার চায়। এ পরিস্থিতিতে গত সপ্তাহে শফিকুর রহমান মালয়েশিয়ায় যান। সেখানে তিনি একাধিক ঘরোয়া সাংগঠনিক বৈঠক করে সংস্কারপন্থীদের ব্যাপারে নেতিবাচক বক্তব্য দেন। এখন তিনি লন্ডনে। জামায়াত থেকে সদ্য পদত্যাগী নেতা আবদুর রাজ্জাক আগে থেকেই লন্ডনে আছেন।

দলীয় সূত্র জানায়, মালয়েশিয়ার যাওয়ার আগে শফিকুর রহমান সৌদি আরব সফর করেন। সেখানেও তিনি সংগঠনের প্রবাসী দায়িত্বশীলদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করে সংস্কারপন্থীদের ব্যাপারে সতর্ক করেন। শফিকুর রহমান সৌদি আরব থেকে ফিরে আসার পর দেশটি সফরে যান সংস্কারপন্থী বলে পরিচিত নেতা শাহজাহান চৌধুরী। তাঁকে অনেক দিন ধরেই দলে কোণঠাসা করে রাখার অভিযোগ আছে।

আকস্মিক লন্ডন সফর সম্পর্কে জানতে চাইলে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল শফিকুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, তিনি লন্ডনে বেড়াতে এসেছেন। সংস্কারপন্থীদের তৎপরতা ঠেকানোর লক্ষ্যে লন্ডন সফর কি না, এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এমন কথা আপনার মুখেই প্রথম শুনলাম।’

দলের সংস্কার ও মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতার জন্য জাতির কাছে ক্ষমা চাওয়া নিয়ে সম্প্রতি জামায়াতে বিরোধ দেখা দেয়। যার রেশ ধরে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি জামায়াত থেকে পদত্যাগ করেন প্রভাবশালী নেতা আবদুর রাজ্জাক। তিনি দলের জ্যেষ্ঠ সহকারী সেক্রেটারি ছিলেন। একই বিষয়ে প্রকাশ্য অবস্থান নেওয়ায় দল থেকে বহিষ্কৃত হন মজিবুর রহমান। তিনি নতুন রাজনৈতিক মঞ্চ গঠনের কাজ শুরু করলেও আবদুর রাজ্জাক এ ধরনের প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত না থাকার কথা বলেছেন।

দলীয় সূত্র জানায়, আবদুর রাজ্জাক ও মজিবুর রহমানকে নিয়ে চাপে পড়েছেন জামায়াতের শীর্ষ নেতৃত্ব। রাজ্জাকের আইন পেশার ৪০ বছর পূর্তিতে ১২ এপ্রিল লন্ডনে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। সেখানে যাতে দলের কেউ না যান, সেই নির্দেশনা ছিল। এর আগে ২৫ মার্চ ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবে নিউজিল্যান্ডের মসজিদে সন্ত্রাসী হামলায় নিহত ব্যক্তিদের স্মরণে মানবিক সংহতি জানাতে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে অংশ নেন মজিবুর রহমান। ওই অনুষ্ঠানেও দলের কেউ যাতে অংশ না নেন, সে জন্য জামায়াতের শীর্ষ পর্যায় থেকে মৌখিকভাবে সাংগঠনিক নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়।