শেষ কুড়িতে বাংলাদেশ

সাইফ উল হকের ‘আর্কেডিয়া এডুকেশন প্রজেক্ট’
সাইফ উল হকের ‘আর্কেডিয়া এডুকেশন প্রজেক্ট’

এবার আগা খান অ্যাওয়ার্ড ফর আর্কিটেকচার ২০১৯-এ বাংলাদেশের দুটি প্রজেক্ট সংক্ষিপ্ত তালিকায় এসেছে। কোনারচরের আর্কেডিয়া এডুকেশন প্রজেক্টটি সাইফ উল হকের। গাজীপুরের আম্বার ডেনিম লুম শেডটির মূল স্থপতি জুবায়ের হাসান। সঙ্গে ছিলেন তাঁর দুই পার্টনার লুতফুল্লাহিল মজিদ রিয়াজ ও নবী নেওয়াজ খান।

এবার বাংলাদেশের দুটি প্রজেক্ট ছাড়াও আরও ১৮টি প্রজেক্ট সংক্ষিপ্ত তালিকায় এসেছে।

রুশ ফেডারেশনের তাতারস্তানের রাজধানী কাজানে ২৫ এপ্রিল তাতারস্তানের প্রেসিডেন্ট রুস্তাম মিন্নিখানোভ আগা খান অ্যাওয়ার্ড ফর আর্কিটেকচার প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন। ১৬টি দেশের ২০টি প্রজেক্ট ১০ লাখ ডলার অর্থমূল্যের পুরস্কারের জন্য লড়বে।

সুসংবাদটি শুনেই যোগাযোগ করা হয় দুই স্থপতির সঙ্গে। ‘সাইফ উল হক স্থপতি’র কর্ণধার ও বেঙ্গল ইনস্টিটিউটের পরিচালক সাইফ উল হক বলেন, ‘আগা খান অ্যাওয়ার্ড ফর আর্কিটেকচার’ বাংলাদেশ আগেও পেয়েছে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের স্থাপত্য বৈশ্বিকভাবে পরিচিতি পাচ্ছে। আমরা একটা স্কুল ডিজাইন করেছি। স্কুলটি এমন এলাকায়, যে এলাকা বছরের কয়েক মাস থাকে পানির নিচে। যখন পানি আসে, তখন স্কুলটি ভেসে থাকে। যখন পানি চলে যায়, তখন তা মাটিতে দাঁড়িয়ে থাকে। তৈরি করেছি ড্রাম, বাঁশ, দড়ি দিয়ে। প্রকৃতিকে কত কম পরিবর্তন এনে কাজটা করা যায়, সে চেষ্টা ছিল আমাদের।’ এটি একটি উভচর কাঠামো।

জুবায়ের হাসানের ‘আম্বার ডেনিম লুম শেড’
জুবায়ের হাসানের ‘আম্বার ডেনিম লুম শেড’

আর্কিগ্রাউন্ডের প্রিন্সিপাল আর্কিটেক্ট জুবায়ের হাসানের নেতৃত্বে করা প্রজেক্টটিতে মিলেছে বাংলাদেশি আবাসিক স্থাপত্যের সঙ্গে সমকালীন উপাদান। একটি তাঁত কারখানা, বিশাল খোলা জায়গা, ক্রেতাদের বসার জায়গা, শ্রমিকদের খাবারের জায়গা, ওয়াশরুমসহ নানা কিছু আছে তাতে। জুবায়ের হাসান বললেন, ফ্যাক্টরিটিতে ছোট্ট খোলামেলা পরিবেশ। ছাদে টাইলস, আশপাশে পানি। বাঁশ দিয়ে গড়া। কর্মপরিবেশ চমৎকার। প্রাকৃতিক আলো-বাতাসের অভাব নেই।

তাঁরা চাননি সাধারণ কারখানার মতো হোক তাঁদের কারখানাটি। প্রকল্প ঘিরে থাকবে জলাধার, যার ওপর দিয়ে বাতাস প্রবাহিত হয়ে চত্বরে প্রবেশ করবে। তাতে ভেতরের তাপমাত্রা কমে যাবে কিছুটা। সাধারণ দেয়ালের বদলে থাকবে বাঁশ দিয়ে তৈরি বিশেষ দেয়াল।

আগা খান অ্যাওয়ার্ড ফর আর্কিটেকচার দেওয়া শুরু হয় ১৯৭৭ সাল থেকে। প্রতি তিন বছর পর এই সম্মাননা দেওয়া হয়। সমকালীন নকশা, সামাজিক গৃহায়ণ, সামাজিক অগ্রগতি ও উন্নয়নসহ অনেক দিকই বিবেচনা করা হয় এতে।

স্থাপত্য পুরস্কারের ক্ষেত্রে আগা খান অ্যাওয়ার্ড অন্যতম প্রাচীন ও সম্মানজনক পুরস্কার। এই পুরস্কার কেবল স্থাপত্যের নান্দনিক দিকটির দিকেই খেয়াল করে না, সার্বিকভাবে জীবনের গুণগত মানোন্নয়নের দিকেও খেয়াল রাখে। স্থাপনা বা ব্যক্তির পাশাপাশি এটি প্রকল্প, সম্প্রদায় ও এর অংশীদারদেরও স্বীকৃতি দেয়।

এর আগে ২০১৬ সালে স্থাপত্যবিদ্যার এই পুরস্কার জিতেছিলেন দুই বাংলাদেশি স্থপতি মেরিনা তাবাসসুম ও কাশেফ মাহবুব চৌধুরী। স্থপতি মেরিনা তাবাসসুমের করা বায়তুর রউফ মসজিদের নকশায় রয়েছে সুলতানি স্থাপত্যের অনুপ্রেরণা। আর ফ্রেন্ডশিপ সেন্টারের নকশায় স্থপতি কাশেফ মাহবুব চৌধুরী এনেছেন মহাস্থানগড়ের আবহ। তাঁরা দুজন এ পুরস্কার জয় করার আগে বাংলাদেশে অবস্থিত বিদেশিদের দ্বারা নির্মিত তিনটি স্থাপনা পেয়েছিল এ পুরস্কার। এগুলো হলো জাতীয় সংসদ ভবন, গ্রামীণ ব্যাংক হাউজিং প্রকল্প ও রুদ্রপুর স্কুল।